Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

চীনের জাহাজ আসছে মালদ্বীপে, সতর্ক চোখ ভারতের

৮ ফেব্রুয়ারি চীনের জাহাজ শিয়াং ইয়াং হং ০৩ মালে বন্দরে পৌঁছার কথা।
৮ ফেব্রুয়ারি চীনের জাহাজ শিয়াং ইয়াং হং ০৩ মালে বন্দরে পৌঁছার কথা।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

প্রথমে সেনা সরিয়ে নিতে ভারতকে আহ্বান, এখন আবার চীনের জাহাজকে ভেড়ার অনুমতি দেওয়া, মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর পদক্ষেপে নয়া দিল্লি-মালে সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ চড়ছে।

সমুদ্র গবেষণার জন্য পরিচালিত চীনের জাহাজ শিয়াং ইয়াং হং ০৩কে মালদ্বীপে ভেড়ার অনুমতি দেওয়ার খবর দুদিন আগেই আসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

ভারত মহাসাগরে ঘরের কাছে চীনের জাহাজের উপস্থিতি নয়া দিল্লির উদ্বেগের কারণ হচ্ছে বলে নানা সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে।

এনিয়ে ভারত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও জানায়নি। তবে ভারতের নৌবাহিনী চীনের জাহাজের বিষয়ে সতর্ক নজর রাখছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম দি কুইন্ট জানিয়েছে।

কবে আসছে জাহাজটি

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিয়াং ইয়াং হং ০৩ এ মাসের শুরুতে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সানইয়া বন্দর ছেড়েছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এটার মালে পৌঁছার কথা।

মালদ্বীপ তাদের বন্দরে চীনা জাহাজের নোঙর করার খবর মঙ্গলবার স্বীকার করে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কর্মীদের দায়িত্ব পরিবর্তন এবং সরবরাহের ঘাটতি পূরণে শিয়াং ইয়াং হং ০৩ মালের বন্দর ব্যবহার করবে।

চীন সেই অনুরোধ রেখেছিল জানিয়ে মালের পক্ষ থেকে বলা হয়, “বন্ধু দেশগুলোর জাহাজকে মালদ্বীপ বরাবরাই স্বাগত জানিয়ে আসছে। শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে কাজ করা তাদের সামরিক ও বেসামরিক জাহাজ আমাদের বন্দরে পোর্ট অফ কল (বন্দর ব্যবহার) করতে চাইলে আমরা তাকে স্বাগত জানিয়ে যাব।”

মালের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মালে বন্দরে অবস্থানের সময় জাহাজটি কোনও ধরনের গবেষণা কাজে যুক্ত থাকবে না বলে নিশ্চয়তা তারা বেইজিংয়ের কাছ থেকে পেয়েছে।

ভারতের উদ্বেগ কোথায়

চীনের জাহাজটি সমুদ্র গবেষণার কাজে পরিচালিত বলা হলেও এটি ছদ্মাবরণে গোয়েন্দা কাজ চালাবে বলে সন্দেহ ভারতের, যে কথা দেশটির সংবাদমাধ্যমে আসছে।

ভারতের নৌবাহিনীর একাধিক সূত্র দ্য কুইন্টকে জানিয়েছে, শিয়াং ইয়াং হং ০৩ এর গতিবিধির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে তারা।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে লিখেছে, চীনকে আঞ্চলিক হুমকি হিসাবে দেখে নয়া দিল্লি। সে কারণে দিল্লির উদ্বেগ যে ভারত মহাসাগরে গবেষণার আড়ালে হয়ত জাহাজটি চীনের সামরিক বাহিনীর হয়ে কাজ করছে।

যে জাহাজ নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি গবেষণা ও জরিপের কাজ করে বলে চীনের ভাষ্য। এর আগেও এটিকে সাগরে চলাচল করতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক কর্মকর্তা বলেন, “চীনের দাবি, জাহাজটির কাজ সমুদ্রতল নিয়ে গবেষণা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা। কিন্তু যেহেতু প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করা হয়নি, তাই বেইজিংই ভালো বলতে পারবে, এটি সাগরে গোয়েন্দাগিরি করছে, কি করছে না?”   

এর আগে শ্রীলঙ্কা বন্দরে চীনের এ ধরনের গবেষণা জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। তাতে শ্রীলঙ্কার জলসীমায় সব ধরনের গবেষণা জাহাজ প্রবেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করে কলম্বো।  

সংবাদ সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে শিয়াং ইয়াং হং ০৩ দুবার শ্রীলঙ্কা বন্দরে ভিড়েছিল। সে সময় ভারত এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। শ্রীলঙ্কা এবার আর জাহাজটিকে তাদের জলসীমায় ঢুকতে দিচ্ছে না।    

শ্রীলঙ্কায় এক সময় ক্ষমতায় ছিলেন মাহিন্দ রাজাপাকসে, যিনি চীনঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। তবে গণআন্দোলনে ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে চলাচল করা গবেষণা জাহাজের অধিকাংশই পরিচালনা করে চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত সংস্থাগুলো। মালিকানাও তাদের। চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে এসব জাহাজের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।

সিএসআইএসের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, শিয়াং ইয়াং হং নামে যত জাহাজ আছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিই আগে চীনের স্টেট ওশানিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তত্ত্বাবধানে ছিল। এই স্টেট ওশানিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একসময় দেশটির ভূমি ও সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করত।

শিয়াং ইয়াং হং জাহাজগুলো এখন পরোক্ষভাবে চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছে। এই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সম্পর্ক গভীর।      

গোয়েন্দা গবেষক ডেনিয়েল সাইমন জানান, ২০১৯ সালে শিয়াং ইয়াং হং ০৩ বঙ্গোপসাগরে জরিপের কাজ শুরু করে। এর এক বছর পর তাদের আরব সাগরে একই কাজ করতে দেখা যায়।

ভারতের সংবাদপত্র দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ভারতের নৌবাহিনীর একজন প্রতিনিধি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে বলেছিলেন, গত এক দশকে চীন তার নৌবাহিনীর শক্তি অনেক বাড়িয়েছে। দেশটির নৌবহরে জাহাজের সংখ্যা আড়াইশ থেকে বেড়ে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়েছে।                

আন্তর্জাতিক জলপথ নিয়ে চীন তার গবেষণা কাজ থেকে যেসব ডেটা তৈরি করছে, সেসবের প্রকৃতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নৌবাহিনীর সেই প্রতিনিধি।

তিনি বলেন, চীন আন্তর্জাতিক জলপথ থেকে যেসব ডেটা সংগ্রহ করছে, সেগুলো সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়। এ কারণে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে সন্দেহ না করার উপায় নেই।                  

ভারত-মালদ্বীপ বিরোধ বাড়ছে

চীনা জাহাজ মালদ্বীপের দিকে এমন সময়ে এগোচ্ছে, যখন দেশটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চীনঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের (পিএনসি) নেতা মোহামেদ মুইজ্জু।

নির্বাচনে তার কাছে হেরে যান ভারতঘেঁষা হিসাবে পরিচিত মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।

গত ১৭ নভেম্বর শপথ নেওয়ার একদিন পরই মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান মুইজ্জু।

এরপর গত ১৪ জানুয়ারি ফের একই অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ১৫ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সেনাদের মালদ্বীপ ছাড়তে হবে।

বেইজিং সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু।

মুইজ্জু অবশ্য বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, ভারতীয় সেনার জায়গায় চীনা সেনা দেশে এনে তিনি নয়াদিল্লির বিরাগভাজন হতে চান না।    

মুইজ্জু তার ‘ভারত হটাও’ অবস্থানের মধ্যেই সম্প্রতি বেইজিং সফর করেন। সেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চীনে মুইজ্জুর সফরকেও ভালো চোখে দেখেনি নয়া দিল্লি।

ভারত মহাসাগরে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের ওপর দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে ভারত। বেইজিং দৃশ্যত সেটাকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

চীনের বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন কৌশল ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মালদ্বীপ। আর চীনের এই কর্মসূচিকে আধিপত্য বিস্তারের পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে ভারতীয়রা। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত