Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

নিবন্ধ

অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামের সময় এবং তারপর-(২)

সনৎকুমার সাহা। প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার

( শেষ কিস্তি )

প্রথম কিস্তি পড়ুন : অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামের সময় এবং তারপর

এখন জানি, তখন ওই অর্থনীতিবিদরা ছিলেন রক্ষাব্যূহে শক্ত পাটাতনের মতো। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছয় দফার বাস্তবায়ন ছিল সম্পূর্ণত গণতান্ত্রিক বিধিসম্মত। এখানে মূল বক্তব্য এই— শোষণ ও বৈষম্যনির্ভর ক্ষমতাকাঠামোর উৎপাটন। তাতে তত্ত্ব ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে নিশ্চ্ছিদ্র যুক্তিজালের অপ্রতিরোধ্য ব্যূহ নির্মাণে সার্বক্ষণিক সহায় ছিলেন নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও আনিসুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদ তাঁদের আয়ুধ নিয়ে মুখোমুখি হন কায়েমি স্বার্থচক্রের (খল)নায়কদের। তারা যে নগ্ন আক্রমণে জবরদখলের প্রমাণ দিতে নামে, এটা তাদের নৈতিক পরাজয়। তারই প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন গণনেতৃত্বের এইটিই ছিল একমাত্র করণীয়। প্রত্যক্ষ মুক্তিসংগ্রাম এরই পরিণাম। বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হলে প্রবাসে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ইতিবাচক এই পটপরিবর্তনে নুরুল ইসলাম ও তাঁর প্রতিভাবান সহকর্মীদেরও একটা ভূমিকা ছিল। বিশ্বসেরা অর্থনীতিবিদদের তালিকায় তাঁরা উঠে আসতে পেরেছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছিল।

        পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক হামলার শুরুতেই এই তিনজন ঢাকা ছেড়ে দিল্লিতে এসে পৌঁছান। পরবর্তী ঘটনাক্রমের ওপর এই ত্রয়ীর আবির্ভাবের একটা প্রভাব পড়ে। তখন সেখানে ছিলেন দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিকস-এ অর্মত্য সেন, ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশনে সুখময় চক্রবর্তী, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে অশোক মিত্র ও আর এক পরামর্শদাতা ডি. পি. ধর। নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও আনিসুর রহমান আগে থেকেই মেধার স্বীকৃতিতে ছিলেন তাঁদের আস্থাভাজন। তাজউদ্দীন দিল্লি পৌঁছান ক’দিন পর, একাত্তরের তেসরা এপ্রিলে। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকারের আগেই এই অর্থনীতিবিদ-ত্রয়ীর যোগাযোগের সূত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতায় তাঁকে নিয়ে একটা আস্থার পরিমণ্ডল গড়ে ওঠে। তাজউদ্দীনের ব্যক্তিগত সততা, নিষ্ঠা ও নিঃস্বার্থ কর্মপ্রতিভা তাকে দৃঢ়তর করে। মুক্তিসংগ্রামে তিনি যে নেতৃত্ব দেন, তার ফলে মানবতাবাদী বিশ্বে অকুণ্ঠ আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ধাপ উত্তরণে সফল হয়। মুক্তিসংগ্রামের পরের ক’মাস এই তিন অর্থনীতিবিদ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রসমূহে সফল যৌক্তিক প্রচারণায় অংশ নেন। মুশাররফ হোসেন ছিলেন রাজশাহীতে। সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতা পৌঁছান মাঝ এপ্রিলে। এসেই সদ্য ঘোষিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ। তাঁর আসায় বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যানিং সেল গড়ে তোলা প্রাণ পায়। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিকল্পনা সবটাই আপৎকালীন। খণ্ডকালীনও। তাই তার পরিষদীয় সদস্যদের সবাই অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ নন। তেমন ছিলেন শুধু মুশাররফ হোসেন ও স্বদেশরঞ্জন বোস।

অবশ্য এখান থেকেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের বীজতলা তৈরি হয়। তার সদস্যদের ভেতরে একমাত্র মুশাররফ হোসেনই প্ল্যানিং সেল-এর অভিজ্ঞতা নিয়ে যান। অন্য তিনজন তাঁরই মতো অর্থনীতিবিদ— নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও আনিসুর রহমান। ডেপুটি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। চেয়ারম্যান শুরুতে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বিভাগীয় প্রধানদের ভেতরে ছিলেন প্রফেসর শামসুল ইসলাম, প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমদ, আজিজুর রহমান খানের মতো বরেণ্য অর্থনীতিবিদ। নক্ষত্রখচিত এমন শক্তিশালী পরিকল্পনা কমিশন এ দেশে আর কখনো কাজ করেছে বলে জানি না। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তাঁরা চূড়ান্ত করেন রেকর্ড দুই বছরের ভেতরে। চিন্তার গভীরতায়, ধারাবাহিক সংহতিতে ও পাঠযোগ্যতায় তা অনন্য।

কিন্তু সেই পরিকল্পনা কোনো কাজে আসেনি। আজ পেছন ফিরে তাকিয়ে ভাবতে গেলে মনে হয়, মুক্ত স্বদেশের আবেগ ও স্বপ্নসাধ এতে যতটা ধরা পড়ে— রূঢ় বাস্তবের অসহিষ্ণু দখলদারির সচেতন উন্মত্ততা ততটা উদ্বেগ সৃষ্টি করে না। স্বাধীনতা মানে প্রত্যেকের অনর্গল স্বার্থসিদ্ধির অধিকার, এইটিই দল-মত নির্বিশেষে গণমানসিকতায় প্রাথমিকতা পেতে শুরু করে। কোনো পরিকল্পিত দুরভিসন্ধি নিয়ে শুধু নয়, স্বতঃস্ফূর্ত বাসনার বিকার থেকেও। এদের নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা কোথাও ভেবে রাখা হয়নি। ফলে সুযোগসন্ধানীদের অপতৎপরতা অনর্গল হতে থাকে। কাড়াকাড়ি বাড়ে। দখলদারিতে জড়িয়ে পড়ে দু দিন আগের মুক্তিযোদ্ধারাও। অনেকেই ফলাতে চায় আঞ্চলিক কর্তৃত্ব। অন্তর্কোন্দল বহু মুখে ছড়ায়। প্রকৃতিও বিরূপ। তিয়াত্তর ও চুয়াত্তরে পর্যায়ক্রমিক খরা ও বন্যা স্বাভাবিক উৎপাদনকাণ্ডকে বিপর্যস্ত করে। দুর্ভিক্ষও গ্রাস করে কোনো কোনো অঞ্চল। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা একরকম অবান্তর হয়ে পড়ে। যদিও আমাদের শ্রেষ্ঠ মেধা ও সেরা সদিচ্ছার সংযোগ এতে ঘটেছিল।

প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেধাবী রূপকারেরা কেউই ব্যক্তিগত খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে দায়িত্ব নেননি। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার নৈতিক দায়িত্ব থেকেই তাঁরা রাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দেন। তবে তাঁরা যে একেবারে দ্বিধামুক্ত ছিলেন, তা নয়। শুরুতেই এই প্রতিশ্রুতি তাঁরা নিয়ে রেখেছিলেন, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব শেষ হলেই তাঁরা আবার শিক্ষাঙ্গনে ফিরে আসবেন। তাঁদের কমিশনে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা সব সময় সুখকরও ছিল না। সরকারি প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা তাঁদের ছিল না। অন্যদিকে ঝুনো আমলারা পাকিস্তানি হুকুমদারিতে অভ্যস্ত ছিলেন, ফলে তাঁদের নির্দেশপালনে অনেকে স্বচ্ছন্দ বোধ করেননি। অধ্যাপকবৃন্দও খোলামনে কাজ করতে গিয়ে বার বার বিভ্রান্ত হয়েছেন। পরিণামে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুমোদনের পর যথারীতি তাঁরা একে একে সুযোগমতো ওই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আসেন। সবার শেষে নুরুল ইসলাম— পঁচাত্তরের গোড়ায়।

তবে তাঁদের মেধার সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি জুটলেও অর্থনীতির চর্চায় তাঁরা সবাই বিকাশের পথে অগ্রসর হয়েছেন, এ কথা বোধ হয় বলা যায় না। আন্তর্জাতিক কক্ষপথে থাকেন নুরুল ইসলাম ও আনিসুর রহমান। ১৯৭৭ সালে নুরুল ইসলাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় সহকারী প্রধান পরিচালকের পদে যোগ দেন। অবশ্যই তা বিরল সম্মানের। কিন্তু স্বয়ং তা মেধার অভিযানে কোনো পথ দেখায় না। ১৯৮৭-তে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ‘International Food Policy Research Institute’ (IFPRI)-র ডিরেক্টর জেনারেলের জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছু গবেষণা প্রকল্প হাতে নেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গও সেসবে থাকে। তবে তা গতানুগতিকতার বাইরে যায় না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ইমেরিটাস রিসার্চ ফেলোর মর্যাদা তিনি পান। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময়ে তিনি তাঁর যোগ্য সম্মান অবশ্যই পেয়েছেন, কিন্তু অর্থনীতির বহুমুখী অভিযানে সৃষ্টিশীল পথপরিক্রমা সেভাবে করেছেন বলে জানিনি। অবশ্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশে যেভাবে তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, তা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি একাধিক বই লিখেছেন, তাদের গুরুত্ব কম নয়। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট আনিসুর রহমান ব্যাংককে ‘এশিয়ান ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং’-য়ে গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। তখন-তখনই তিনি আর ঢাকায় ফেরার কথা ভাবেন না। ১৯৭৭ সালে দীর্ঘ মেয়াদে তিনি জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় যোগ দেন। ১৯৯০ সালে সেখান থেকে অবসরের পর তিনি ঢাকায় ফেরেন। অর্থনীতি, সমাজ কি সংগীত সংক্রান্ত ভাবনা ছাড়াও ইংরেজি ও বাংলায় বহু বুদ্ধিদীপ্ত রচনা এবং গ্রন্থে আমাদের চেতনাকে তিনি সমৃদ্ধ করে চলেছেন। অবশ্য একান্ত নির্জন পরিবেশে তিনি নিজেকে এখন আড়ালে রাখেন। রেহমান সোবহানও স্মৃতির রোমন্থনে ও অর্থনীতির চর্চায় আমাদের চেতনায় আলো জ্বালেন। আমরা শিহরিত হই। বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়ানোর কোনো আয়ুধ কিন্তু মেলে না। শুধু একজন সৎ অর্থনীতিবিদের মননসিদ্ধ সংগ্রামের প্রেরণাটুকু থাকে। একমাত্র মুশাররফ হোসেন মেধার অনুশীলনে তাঁর লড়াই শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যান। কোনো মোহের পেছনে তিনি ছোটেন না। তাত্ত্বিক মতবাদও খাড়া করেন না। শুধু বস্তুনিষ্ঠ গবেষণায় বঞ্চিত মানুষের সম্মিলিত মুখের রেখা তিনি স্পষ্টতর করে চলেন। সাধনার শুরু তাঁর গ্রামীণ বাস্তবতার মর্ম সন্ধানে (The Pattern of a Peasant Economy, Puthia: A Case Study, 1964)। এইটিই লক্ষ্যভেদে তাঁর দৃষ্টি স্থির করে দেয়। তিনি পথ হারান না। পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডির পর তিনিও অক্সফোর্ডে কুইন এলিজাবেথ হাউজে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ক’বছর কাটান। ১৯৭৮-এ আবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। কোনো আপোষ করেন না। গবেষণাও তাঁর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। গ্রামীণ দারিদ্র্যের গভীরে নিবিড় দৃষ্টিপাত তিনি অব্যাহত রাখেন। এদিকে আশির দশকে আমেরিকা ও গ্রেট ব্রিটেন— দুই দেশেই মুক্তবাজার অর্থনীতির দাপট আকাশ ছোঁয়। তাদের চাপে বিশ্বব্যাংকও সবজান্তার আলখেল্লা পরে ‘নিরপেক্ষ’ ফতোয়া জারি করতে থাকে, মুক্তবাজার অর্থনীতিই বাস্তবে মোক্ষলাভের অনন্য উপায়। বৈষম্য ও দারিদ্র্য এখানে-সেখানে মাথাচাড়া দিতে পারে, কিন্তু বাজারব্যবস্থার ভেতরেই তাকে মানিয়ে নেবার কাঠামোগত আয়োজনের সামঞ্জস্য রচনা করতে হবে। তা যেন কোনোভাবে সার্বিক কর্মকাণ্ডে ‘দক্ষতা’-র অর্থাৎ উদ্বৃত্ত অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যকে উপেক্ষা না করে। বাংলাদেশের দখলদার শক্তিও তাতে আনুগত্য প্রদর্শনে তৎপর থাকে। ১৯৮৭ সালে মুশাররফ হোসেন দারিদ্র্য বিমোচনের এমন মেকি তৎপরতার প্রেক্ষিতেই তখন তৃণমূলস্তরের প্রাথমিক উপাত্তের ভিত্তিতে প্রকাশ করেন তাঁর বিখ্যাত প্রতিবেদন, The Assault that Failed: A Profile of Absolute Poverty in Six Villages of Bangladesh. জাতিসংঘের গবেষণা সংস্থা ‘United Nations Research Institute for Social Development’-এর হয়েই তাঁর এই কাজ। বিশ্বব্যাংক বিপরীত পরামর্শ দিলেও একে অস্বীকার করতে পারে না। এ ছাড়া ওই সময়ের কায়েমি স্বার্থের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই তিনি তখন ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’-এর সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সংগঠনটিকে সক্রিয় ও অর্থবহ করে তোলেন, প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তখন সর্বজনশ্রদ্ধেয় সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত। মুশাররফ হোসেন তারপরও জীবনের শেষদিন (২০১৩) পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন তাঁর তৃণমূল স্তরের গবেষণা The Survival Strategy of The Rural Poor নিয়ে। আক্ষেপ এই, তা শেষ হয়নি। কালের বহমানতায় ওই বিষয়ও অশেষ। এ ছাড়াও পুষ্টিবিশারদ ড. খুরশীদ জাহানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তিনি দুই খণ্ডে সম্পন্ন করেন আর এক শিকড়সন্ধানী কাজ, Nature and Extent of Malnutrition in Bangladesh: Bangladesh National Nutrition Survey, 1995-96 – যা ছেপে বেরোয় ১৯৯৭ সালে। এতে উল্লেখযোগ্য এক তথ্যনির্ভর পর্যবেক্ষণ, গ্রামীণ ব্যাংক বা অনুরূপ ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা যে সব এলাকায় বেশি তৎপর— সেই সব এলাকায় অপুষ্টির হার বেশি। সুদের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা কি এর জন্য দায়ী? ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা সফল উদ্যোক্তা, এ বক্তব্য কিন্তু এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

        মুশাররফ হোসেনের পর নুরুল ইসলামও ক’দিন আগে চলে গেলেন। আমরা পেছন ফিরে তাকাই। কত কী পেলাম! শ্রদ্ধায় নত হই। শুধু তাঁদের দুজনের স্মৃতির সামনে নয়, ওই সম্ভাবনাময় আর সংগ্রামমুখর কালে সফল অর্থনীতিবিদদের মেধার সততা ও সক্ষমতার কাছেও। একই সঙ্গে সংশয় জাগে, উত্তরসূরীরা কি তাঁদের তুল্য হতে পেরেছেন? মেধার অভিযান কি তাঁদের ছাপ কালের ওপর রেখে চলেছে? তাঁদের সফলতা-বিফলতা এগুলো মাপিই বা কী দিয়ে? না কি শুধু চলাটাই শেষ কথা?

আমরা দেখেছি, সম্ভাবনার এক উদয় দিগন্তে ছিল তাঁদের আবির্ভাব। তাঁরা তাকে বর্ণবিভায় ভরে দিয়েছেন। তা অবিমোচ্য থেকে গেছে। ওই সময়ের নিজস্ব চাহিদার বৈশিষ্ট্য স্থান ও পরিপার্শ্বের পটভূমিতে তাঁদের উদ্যোগী করেছে। তাঁরা ভয় পাননি। ব্যর্থ হননি। প্রতিভার নিবেশন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অন্তর্জাত সক্ষমতায় বদলে যায়, এমন নয়। তবে সম্ভাবনার স্বরূপ পাল্টায়। তাতে কীর্তির সীমা ছোট-বড় হয়ে পড়ে। এমনটিই বুঝি বাস্তবে হতে দেখি। আপাতদৃষ্টে তাঁদের পর যাঁরা এসেছেন, তাঁরা অনেকেই আপন আপন কর্মজীবনে একইরকম সফল। দেশে, বিদেশেও। কিন্তু কালের চ্যালেঞ্জ নেবার সুযোগ তাঁরা পাননি। কালও প্রতারণা করেছে। তাঁরা ব্যক্তিগত প্রাপ্তির সীমায় বন্দি থেকেছেন। চলমান সময় সেসব অর্জনকে সঙ্গী করেনি। এটাও দেখি, মহান ব্যর্থতার কপালে চিরকালের মহিমার ছাপ পড়েছে; কিন্তু কালের অঙ্কের প্রত্যাশিত সমাধানে নিরাপদ অর্জন ওই সমাধানের সীমাতেই আটকে থেকেছে। আমাদের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু তা যে রচিত হয়েছিল, এই মহান সত্যটি সমষ্টিমানুষের গৌরবের তালিকায় টিকে আছে। অনন্তকাল টিকে থাকবে।

        একটা কথা এখানে বাড়তি যোগ করি। তা আমাদের দীর্ঘলালিত স্বপ্ন ও বাস্তবের ফারাকটা বোঝার চেষ্টায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের পশ্চাৎপটে ছিল আমাদের বৈষম্যের শিকার হবার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা এবং তা থেকে উদ্ধার পাবার আকাঙ্খা। সেখান থেকেই ঝোঁকটা পড়ে সমাজবাদের আদর্শের ওপর। তা তার তাত্ত্বিক নির্মাণকলা মাথায় রেখে নয়। বৈষম্যহীন সমাজের কল্পনা বাস্তবে রূপ দেবার উৎসাহ থেকে। আসলে যে সব দেশ বা অঞ্চলে এক সময় সমাজতন্ত্রের ঘোষিত স্বীকৃতি ছিল, তাদের কোনোটিই কার্ল মার্কসের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বা ঐতিহাসিক বস্তুবাদ অনুসরণ করেনি। নৈতিক অবস্থান বাস্তবায়নের সংগ্রামে সাফল্যই তাদের ওই জায়গায় নিয়ে গেছে। সে সময়ে তাদের অস্তিত্ব আমাদের অনেক সৎ চিন্তাবিদকে প্রেরণা জুগিয়েছে। বিউপনিবেশায়নের কাল থেকেই এখানে বৈষম্য ও দারিদ্র্যের মূল উৎস ছিল উৎপাদিকতা শক্তির বিকাশের দ্বন্দ্ব নয়, বরং তার বিকাশহীনতা। তারপরেও সমাজতন্ত্রের মর্মবাণী স্বাধীনতার আকাঙ্খাতে মিশেছে। এখনও তা অনেকের কল্পবাস্তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য। যদিও সমষ্টিজীবন তাকে উপেক্ষা করে, আঁকাবাঁকা নানা দিকে ছড়ায়। জবরদস্তি বা বাধ্যবাধকতা তৈরি করে নিত্যদিনের বাঁচামরার অভিজ্ঞতাই। অভিজ্ঞতার সম্পর্ক-সম্বন্ধ বিশ্বজুড়ে বহুমুখে ছড়ানো। 

        আজ অসহায় আক্ষেপে ফিরে তাকিয়ে দেখি, একাত্তরে পূর্ণপ্রাণের উচ্ছ্বাসে আমরা যখন বিজয়ের বার্তা দিকে দিকে ছড়াই— ঠিক তখনই তাকে অর্থহীন করার নানামুখী তৎপরতা দিকে দিকে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। আমাদের মিলিত উত্থানকে সচেতন আক্রোশে নস্যাৎ করা তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। এমনকি এটা কারো সরাসরি মাথায় এসেছিল, তাও হয়তো না। কিন্তু দেশের ভেতরে নিকৃষ্ট সুযোগসন্ধানীরা বহু বিপরীতমুখী স্বার্থের আপন আপন হিসাব মাথায় রেখে মিলিত আঘাত হানে। তাতে সে সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের একাংশও হাত মিলিয়েছিল। এবং, একাত্তরে দেখেছি—

তাদের অনুসারীর সংখ্যা কম ছিল না। আজ সারা দেশে খন্দকার মোশতাক ও তার দলীয় সাগরেদরা অনুচ্চারিত ও প্রায় বিস্মৃত নাম। এদের মধ্যে যারা জীবিত, কোনো কোনো বিরল মুহূর্তে তারা সরবও। সুযোগ পেলে নেংটি ইঁদুরের মতো লাফালাফিও করে। বিশ্ববাস্তবতা তাদের সবরকম ধ্যাষ্টামোর ও চরিত্রহীন আচরণের সুযোগ করে দেয়।

        খুঁটিয়ে দেখলে ধরা পড়ে, আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রের মূল আদর্শবার্তা যখন লিপিবদ্ধ হচ্ছে— তখন বিশ্ববাস্তবতায় তার বিপরীত ঘটনাস্রোত তুলনায় অধিক প্রবল। তা নিস্তেজ কখনো ছিল না। সমাজতন্ত্রের প্রয়োগকলাও কখনো-কখনো গভীর উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। প্রচারের ঢক্কা-নিনাদে সব পক্ষের সব বাড়াবাড়ি চাপা পড়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নে স্ট্যালিন আমলের ভয়ংকর হত্যা ও নির্যাতনের কথা এখন আর গোপন নেই। চীনে মাও সে তুং যে বাধ্যতামূলক গণ-কমিউনের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেন, তাতে ১৯৫৮-১৯৬১ সালের ভেতরে শুধু দুর্ভিক্ষেই সেখানকার গ্রামাঞ্চলের তিন কোটি অধিবাসী প্রাণ হারায়। ১৯৬৫-১৯৭৫ কালপর্বে শহরাঞ্চলে কথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়ে মাও অভূতপূর্ব সামাজিক রূপান্তর ঘটাবার নায়ক হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। এটাও ব্যর্থ হয়। কিন্তু এদের প্রচারণার আবেগ বহির্বিশ্বে ও বাংলাদেশেও ছড়ায়। তা একাত্তরের আগে থেকেই। এই সব ব্যর্থ-কাণ্ডজ্ঞানহীন উদ্যোগও দারিদ্র্য নিরসনের উৎসাহে ঘৃতাহুতি দেয়। এখানে তখনও চীনের ওই সব ‘উলম্ফনের’ বাস্তব চিত্র সামনে আসেনি। ফলে নানারকম গোঁজামিল কাজ করে চলেছে।

        সত্তরের দশকের গোড়া থেকেই আমরা দেখি অনিশ্চয়তার বিভ্রম। বিউপনিবেশায়ন পর্ব মোটামুটি সমাপ্ত। বাংলাদেশের উদ্ভব তার একটি সমাধানের উপজাত পরিণাম। গণ-আবেগের কেন্দ্রবিন্দু ভেঙেচুরে বহুমুখে ছড়ানো। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও দৃশ্যমান এক ধরনের অস্থিরতা। উদ্দেশ্য ও উপায়ের মাঝখানে নানামুখী তৎপরতার এলোপাথারি হাত-পা ছোঁড়া। আগেই বলেছি, বাজারে ও উৎপাদনে ভারসাম্য বজায় রাখায় মুদ্রানীতি ও রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থার প্রয়োগকলায় সামঞ্জস্য বিধান একটা সমাধানসূত্র হিসেবে সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর বাইরের সব রাষ্ট্রেই কম-বেশি কার্যকর ছিল। বিশ্ব-অর্থনীতি মোটামুটি প্রত্যাশিত পথেই অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু সত্তরের দশকের শুরু থেকে দেখা দেয় নতুন এক গুরুতর উপসর্গ, যার সামনে কেইনসীয় দাওয়াই একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র বিনিয়োগ বাড়িয়েও উৎপাদনে রক্ত সঞ্চালনে ব্যর্থ হয়। উৎপাদন সাড়া না দিলে দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি। উৎপাদন ব্যবস্থা বিশ্ববাজারের সবটা জুড়ে এমন এক সংকটের জন্ম দেয়, যা দুই বিপরীত অকল্যাণকে এক জায়গায় বছরের পর বছর ধরে রাখে। এই বন্ধ্যা অশ্লেষা কালেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বিশ্ববাজারের কামড় বাংলাদেশেও দাঁত বসায়।

        আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শপথ ও নিষ্ঠাও ধরে রাখা যায় না। ঐক্যবদ্ধ জন-গণ-মন লক্ষ্য অর্জনের পরমুহূর্তেই বিভিন্ন সত্তায়, বিভিন্ন স্বার্থে, বিভিন্ন আদর্শে ভাগ হয়ে যায়। হয়তো এটা অনিবার্য ছিল। কিন্তু তারপরেও যে সামষ্টিক সম্পদে আস্থা রাখা যায়, তা আর গড়ে ওঠে না। অনিশ্চয়তার সামনে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত স্বার্থ অগ্রাধিকার পায়। এমন কি তার জন্য যে কোনো ছলচাতুরিকেও আর অন্যায় মনে হয় না। তার সঙ্গে লড়াই করার মতো সামষ্টিক সক্ষমতাও গড়ে ওঠে না। এই বাস্তবতাতেই আমাদের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন। পেছনে কাজ করেছে সততা ও সংকল্পের এক অদম্য প্রত্যয়। নিজেদের চেতনা দিয়েই তাঁরা হয়তো সমষ্টিচেতনার সক্ষমতা পরিমাপ করেছিলেন। তা বাস্তবসম্মত ছিল না। সর্বোত্তম প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠা দিয়ে গড়া এই পরিকল্পনা বিফলেই যায়।

        বাংলাদেশ আর তার প্রাক-স্বাধীনতাকালের প্রত্যাশিত কক্ষপথে ফিরে যায়নি। বিশ্ববাস্তবতাও বদলে গেছে অনেক। শুরু ওই সত্তরের দশকের গোড়ায়। তা চূড়ান্ত আকার নেয় আশির দশকে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে রোনাল্ড রেগ্যান ও ও যুক্তরাজ্যে মার্গারেট থ্যাচারের দাপট। অর্থনীতির চলমানতায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে, এ কথা তাঁরা অস্বীকার করেন। পারিপার্শ্বিক চাপে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। চীনে কমিউনিস্ট পার্টির রাষ্ট্রীয় একনায়কতন্ত্র ঠিকই বজায় থাকে, কিন্তু সবটা জোর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দক্ষতা বাড়ানোয়। আয়বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। মিশ্র অর্থনীতি ও জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রবক্তা ভারত দেউলিয়া হবার আশঙ্কায় নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঋণের পাত্র হাতে নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের দরবারে ধর্ণা দেয়। সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য সেখানে মাথা চাড়া দিয়ে মানবমুক্তির মূল প্রত্যয়কেই প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যে প্রাথমিক মূল্যবোধগুলো ধরে রাখা জরুরি, তারাই পৃথিবী জুড়ে অপসৃয়মান। তবু গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করায় ব্যস্ত সবাই। কারণ, সেইটিই আজ দস্তুর। অশ্ব না হতে পারলেও অশ্বতর হবার কোশেশ গাধার এখন অবাধ। এবং এমনটিই আজকালের ন্যায়ে সংগত। মানুষের সক্ষমতা ও সম্ভাবনা কিন্তু বহু বিচিত্র পথে আমাদের স্তম্ভিত করে চলেছে। ভালো-মন্দ, আপন-পর তফাৎগুলো যৌক্তিকভাবে বিলীয়মান। সংগত-অসংগত এই প্রশ্নগুলো অবান্তর হয়ে পড়েছে। অস্তিত্বের, স্বপ্নের, স্থান-কাল কি দেশ-বিদেশের ব্যবধান মুছে যাচ্ছে। এবং তা টিকে থাকার প্রয়োজনের তাগিদেই।

        নিত্যদিনের অভ্যাসের ধারাবাহিকতায় আরো একটা পরিবর্তনের ধারা আমাদের মনোজগতেও যে ছাপ ফেলে চলে, তা সাধারণভাবে আমরা খেয়ালই করি না। তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রায় নিঃশব্দ অভিক্ষেপ। গত শতকে ষাটের দশকেই আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রয়োগ পৃথিবীর সর্বত্র মানব-মানবীর আয়ুর সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়াতে শুরু করে। পাশাপাশি কৃষির উৎপাদনশীলতায় ঘটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যৌথ খামারের যৌক্তিকতা প্রযুক্তিগতভাবেই ফুরিয়ে যায়। সত্তরের দশকের গোড়ায় এদের আর্থ-সামাজিক পরিণাম বাস্তবের উত্তেজনায় অনেকটা উপেক্ষিতই ছিল। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এদের পাশ কাটিয়ে যায়। এবং সেইটিই ছিল স্বাভাবিক। ওই সময়েই শুরু তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণ। তার বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক ক্রমবিস্তারের সম্ভাবনা তখন বিবেচনায় আসার সুযোগ ছিল না। পরিকল্পনাতেই এরা গুরুত্ব পায়নি। আজ তো দেশ-রাষ্ট্রের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভাজন— এইটিই অবান্তর হবার পথে। ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা দ্রুত রূপান্তরিত হয়ে চলেছে, আমরা খেয়াল না করলেও। এদের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোতেই এখন অগ্রাধিকার। জন্মভূমি, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, রাষ্ট্র-ভাবনা— এগুলো অতীতের নিদর্শন হবার মুখে। পরিবর্তন প্রক্রিয়ার ভেতরে— আমরা চাই বা না চাই— এখন তারা সক্রিয়। অনিশ্চয়তার অস্থিরতা তার অনিবার্য সহচর।

তারপরেও নুরুল ইসলাম ও তাঁর সহ-চিন্তাবিদদের আমরা মাথায় করে রাখি। শুরুর সম্ভাবনার দীপ তাঁরা জ্বেলেছিলেন। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা সে আলোয় পথ খুঁজেছি। ব্যর্থতার দায় তাঁদের নয়।

(সমাপ্ত)

রাজশাহী, ২০২৩।

লেখক: শিক্ষাবিদ ও লেখক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সদস্য।

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত