Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

অ্যান্টিগা কি মিরপুর হবে

বাংলাদেশ
Picture of শিহাব উদ্দিন

শিহাব উদ্দিন

[publishpress_authors_box]

তিন বছর হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টিতে হারানোর সেই সুখস্মৃতি এখন মলিন। তবুও দলটির সঙ্গে টি-টোয়েন্টি লড়াইয়ে নামার আগে জড়িয়ে ধরার মতো ওই একটিই সম্বল বাংলাদেশের। ২০২১ এরপর যে আর এই ফরম্যাটে মুখোমুখি হয়নি দুই দল। শুক্রবার ভোরের লড়াইয়ের আগে তাই স্মৃতিতে ফিরছে ২০২১-এর জয়গুলো। প্রশ্ন হলো নাজমুল হোসেন শান্তরা অ্যান্টিগায় মিরপুরকে ফেরাতে পারবেন?

মিরপুরের সেই সিরিজ

এই ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের মোট লড়াই ১০টি। ৬ হারের বিপরীতে চারটিতে জয় আছে। উজ্জ্বল সাফল্য কিন্তু এর পেছনেও নাটক আছে।

২০২১ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য সেবার করোনার ভয়ের মাঝেও অস্ট্রেলিয়া খেলতে এসেছিল বাংলাদেশে। ৫ ম্যাচের সিরিজে প্রথমবার অজিদের টি-টোয়েন্টিতে হারানো এবং সিরিজ জয়ের ঐতিহাসিক তৃপ্তি মেলে। ওই সিরিজে একটি ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। মুখোমুখি হওয়া বাকি ৫ ম্যাচ হারে বিশ্বকাপের মঞ্চে।

সিরিজের সবগুলো ম্যাচ হয় মিরপুরে। আর মিরপুরের উইকেট কেমন তা সবারই জানা। সেই জানা পিচ আরও অচেনা হয়ে যায় ওই সিরিজে। বল হয় নিচু এবং অস্বাভাবিক টার্নও ছিল। এমন স্পিন সহায়ক উইকেটে ব্যাটারদের স্বাভাবিক খেলাই কঠিন হয়ে ওঠে। মিরপুরে প্রথম খেলতে নামা অজিরা স্বাভাবিক ভাবেই অল্প রানে গুটিয়ে যায় এবং একের পর এক ম্যাচ হারে।

লাভ কি ছিল?

ঘরের মাঠের সুবিধা সব দলই নেয়। আইসিসির নিয়মে এ ব্যাপারে কোনও বাধা নেই। তবুও বাংলাদেশের এমন জয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিসিবির সব মহল থেকেই ওই সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসকেই বলা হয় বিশ্বকাপের পুঁজি। পারফরম্যান্সের চেয়ে জয়ই বড় কথা এমন বার্তা দেয়া হয়।  

সেই আত্মবিশ্বাস যে একেবারে ফাঁকা বুলি তা প্রমাণ হয় বিশ্বকাপে। ওই সিরিজের পর ২০২১ বিশ্বকাপে গিয়ে পেস ও বাউন্সি উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ৭৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ম্যাচ হারে ৮ উইকেটে। আর মূল পর্বের সবগুলো ম্যাচ হারের পাশাপাশি প্রথম পর্বে স্কটল্যান্ডের কাছেও হারে মাহমুদউল্লাহর দল।

হেড পজিশন ঠিক রাখতে গলাবন্ধনী পরে ব্যাটিং করেছেন সাকিব। ছবি : বিসিবি

বর্তমানে বাংলাদেশ

অতীত সাফল্য স্মৃতিতে থাকলেও তা নিয়ে এখন কথা নেই। বরং বর্তমান পারফরম্যান্স দিয়েই বাংলাদেশ সুপার এইটে উঠেছে। ওই সময়ের স্পিন নির্ভর বাংলাদেশকে এবার পাচ্ছে না অজিরা। পেস শক্তিতে উজ্জীবিত এক বোলিং ইউনিটের মুখে পড়তে হবে তাদের।

গত তিন বছরে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের উন্নতিটাও চোখে পড়ার মতো। ২০২৩ সাল বেশ ভালো কেটেছে বাংলাদেশের। ছোট ফরম্যাটে আফগানিস্তান, ইংল্যান্ডকে হারানোর সাফল্যও আছে। সেসব সঙ্গী করে এবারের বিশ্বকাপে পা রাখা। কিন্তু হোঁচট খেতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হেরে।

সেই ধাক্কা সামলে বিশ্বকাপেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জয় দিয়ে শুভসূচনা করে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের জয় সুপার এইটের পথ করে দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিউ ইয়র্কের কঠিন পিচে অল্পের জন্য হারাতে না পারার আক্ষেপ আছে। আর নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে বেশ দাপটের সঙ্গেই হারিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

ডেথ ওভারে আগের দুই ম্যাচের মতো কিপটে হতে হবে মোস্তাফিজকে। ছবি : বিসিবি

অস্ট্রেলিয়া চ্যালেঞ্জ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগের রেকর্ড ছপিয়ে তিন জয়ের তৃপ্তি আছে বাংলাদেশের। দুর্দান্ত বোলিং ইউনিট ও মিডলঅর্ডারদের দৃঢ়তায় দারুণ কাটছে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ। এবার আসল পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষাটা সেরা দলের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া যে কোন ফরম্যাটেই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। তাদের হারানোর চ্যালেঞ্জও বিশাল।

তানজিম হাসান সাকিব, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেনরা এবার নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে পারবেন। যদি ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়েনিসদের কঠিন সময় উপহার দিতে পারেন। নতুন বলে দারুণ করছেন বাংলাদেশ পেসাররা। সেই ধারাবাহিকতা রেখে বিশ্বখ্যাত ব্যাটারদের শুরুতেই রুখতে হবে।

এবারের আসরে সব ম্যাচ জিতেই সুপার এইটে এসেছে অজিরা। স্টয়েনিস বাদে বাকি ব্যাটাররা সব ম্যাচে স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন না। এই অলরাউন্ডার দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের হাল ধরেন। হেড এক ম্যাচে ফিফটি করেছেন। ওয়ার্নার, মার্শ ও ম্যাক্সওয়েল এখনও পুরোপুরি জ্বলে উঠতে ব্যর্থ। বাংলাদেশ বোলারদের অস্ট্রেলিয়াকে কম রানে আটকে রাখার কাজটা তাই কিছুটা হলেও সহজ।

রানে ফিরতে মরিয়া শান্ত পরামর্শ নিচ্ছেন কোন হাথুরুসিংহের। ছবি : বিসিবি

কিন্তু ব্যাটারদের সত্যিই বড় পরীক্ষা দিতে হবে। টপঅর্ডার টানা চার ম্যাচে রান পাচ্ছে না। তাই বড় রান পাচ্ছে না দল। বিপক্ষে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজেলউড, স্টয়েনিস ও অ্যাডাম জাম্পার মতো উইকেট টেকাররা। দুশ্চিন্তার ব্যাটিং লাইন তাই এই ম্যাচে আরও চিন্তা বাড়াচ্ছে।

ভরসা হয়ে আছে মিডলঅর্ডার। সাকিব আল হাসান এক ম্যাচে ৬৪ করে দলকে ১৬০ এর কাছে নিয়ে যান। শুক্রবার যে কোনও এক ব্যাটারকে এভাবেই হাল ধরতে হবে। সে দায়িত্বটা সাকিব, মাহমুদউল্লাহ বা শুরুর দুই ম্যাচ পর রং হারানো হৃদয় নিতে পারেন। নয়তো জয়ের রান করা বা রান তাড়া করা কোনটাই সম্ভব হবে না।

পিচ কেমন

এবারের বিশ্বকাপে অ্যান্টিগার উইকেট সেরা পিচের একটি। দারুণ স্পোর্টিং, টিপিক্যাল টেস্ট উইকেট বলতে যা বোঝায়। এই পিচে বল দারুণ বাউন্স করে, পেসও ধরে। পেসাররা ভালো সুবিধা পান। তাই বলে রান করা কঠিন বলা যাবে না। এর জন্য উইকেটে সেট হওয়া চাই। টেকনিক্যালি সাউন্ড ব্যাটাররা রান পাবেন।

ঠিক যেমন সুপার এইটের আগের ম্যাচটিতেই দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র রান উর্বরা এক লড়াই উপহার দিয়েছে। কুইন্টন ডি কক তার সেরা স্কিল দেখিয়েছেন ৪০ বলে ৫ ছক্কা ও ৭ চারে ৭৪ রান করে। উইকেটে শুরুতে সেট হয়ে পরে হাত চালিয়েছেন ২২ বলে ৩৬ করা হেনরিখ ক্লাসেন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের টেকনিক্যালি ভালো ব্যাটার আন্দ্রে গুস ৪৭ বলে ৮০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন। রাবাদা-শামসিদের চাপে বাকি ব্যাটাররা কিন্তু সেই কাজটা করতে ব্যর্থ।

ভালো উইকেটে লিটনের রানে ফেরার সুযোগ। ছবি : বিসিবি

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে টেকনিক্যালি সবচেয়ে ভালো লিটন দাস। এই পিচে নিজের ছন্দে ফিরতে পারেন এই ব্যাটার। তার আগে উচ্চাভিলাষী শটের চিন্তা বাদ দিয়ে উইকেটে সেট হতে হবে। লিটন সেট হলে ব্যাটে বল পাবেন। তখন ছবির মতো সুন্দর শটগুলো খেলতে পারবেন অনায়াসে।  

পরিশেষে

স্বচ্ছন্দে পাওয়া টানা দুটি জয় নিয়ে সুপার এইটে পা রাখে বাংলাদেশ। তাই একাদশে পরিবর্তন আসার সুযোগ কম। আত্মবিশ্বাসী ইউনিট দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের মতো জ্বলে উঠবে। প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইনের কোমর ভেঙ্গে দেওয়ার মতো আঘাত করবে অজি ব্যাটিং লাইনেও। তাতে আরও একটি মিরপুর কাব্য রচিত হতে পারে অ্যান্টিগাতে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত