Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

ঈদ বাজারে সারারা-গারারা আর নায়রা

naeradress-170324-01
Picture of আইরিন সুলতানা

আইরিন সুলতানা

“ওয়েলকাম! ওয়েলকাম! আমাদের এখানে নতুন কালেকশন দেখুন।”

রোজা শুরু হতেই দোকানে দোকানে ঈদের জামার নতুন কালেকশন চলে এসেছে। ক্রেতা টানতে বিক্রেতাদের ডাকাডাকি চলছে দোকানে। ইফতার সেরে ক্রেতারাও ঘুরে ঘুরে বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন নতুন নকশার জামা।

অনলাইনে ব্র্যান্ড প্রোমোটার ও উদ্যোক্তারা অবশ্য রোজা শুরু আগে থেকেই নতুন জামা নিয়ে ফেইসবুক লাইভ শুরু করে দিয়েছেন।    

এবার ঈদে অনলাইন আর অফলাইনে মেয়েদের জামার কী ‘কালেকশন’ চলছে তাই দেখতে বেরিয়েছিল সকাল সন্ধ্যা।     

জামার কারুকাজে ঝলমলে মিরপুর

মিরপুর ২ নম্বরে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দক্ষিণ দিকে সারি সারি দোকান ঝলমল করছে আলোকসজ্জায়। বাদ যায়নি লাগোয়া ফুটপাতও। পথচারীদের মাথার উপর ঝুলে আছে আলোর মালা।

চন্দ্রবিন্দু এবং নবরূপা আউটলেটগুলো মিরপুর ২ নম্বরের এই অংশে ব্যবসা করছে বহু বছর ধরে। তবু পাশাপাশি আরও দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা ভালো দেখা গেল।

অনেকে দোকানের বাইরে বসানো কাচের ঘরে ছোট-বড় ম্যানিকিনগুলোর গায়ে চড়েছে নতুন জামা। দোকানিরা ডেকে ডেকে বলছেন, ডিসপ্লেতে থাকা জামা ছাড়াও আরও অনেক কালেকশন আছে ভেতরে।

কোনো কোনো দোকানে দেখা গেল ২০ শতাংশ ছাড় ।

রঙজয়ীর দোকানের বাইরে ডিসপ্লেতে ম্যানিকিনের পরনে ছিল কামিজ আর কুচি দেওয়া সালোয়ার; যাকে তারা বললেন গারারা।

এসব গারারা ৩ হাজার ৬০০ টাকায় পাওয়া যাবে। কাপড়, সেলাই, কারুকাজের মান ভেদে দাম এর থেকে কম ও বেশি হবে অন্য অনেক শপিং মলে।

দেশে গারারা অবশ্য নতুন নয়। বিশেষ করে বিয়েকেন্দ্রিক সুপার হিট হিন্দি সিনেমার পর এদেশেও গারারা চলে আসে। সালোয়ারের হাঁটু বা এর পর থেকে ভাঁজ করা থাকে বলে দেখতে লেহেঙ্গার মতো মনে হয়। কিশোরী থেকে একহারা গড়নের তরুণীদের মধ্যে বিয়ের দাওয়াতে এমন পোশাক চলছে বেশ।

পালাজ্জো সালোয়ারের মতোই ঢোলা করে বানানো হয় সারারা বা গারারা সেটের সালোয়ার। দামি গারারা-সারারা সেটে কুচির ভাঁজ নিপুণ থাকে। কোনো কোনো সালোয়ারে দুই স্তরের কুচি থাকে। আবার দামের পড়তিতে সারারা-গারারা সেটে সালোয়ারের সেলাইয়ের নিপুণতাও কমে আসে।

সুতি, লিলেন, পপলিন থেকে কারুকাজ করা ভারী জর্জেট ও সিল্কের সারারা-গারারা অনেক শপিং মলেই পাওয়া যায় ঈদ ছাড়াও বাকি মাসে।   

সারারা-গারারা ছাড়াও এখানের কয়েকটা দোকানে ম্যানিকিনের গায়ে ছিল নায়রা কাট কামিজ।

দোকানিরা বললেন, কামিজের দুই পাশে কোমর থেকে কাটা থাকে। তারপর বিনুনির মতো করে ফিতা দেওয়া থাকে। গায়ের মাপ অনুযায়ী ফিতা টেনে বাঁধা যাবে। ফিতার ঝুল বেশ লম্বা থাকে অনেক কামিজে। ফিতার গোড়ায় ঝুলে থাকে টারসেল অথবা পমপম। আর এই রকম কামিজের নাম হলো নায়রা।

নায়রা কামিজের সাথে সারারা সালোয়ার, পালাজ্জো অথবা ঘাগড়ায় ঈদ এবং পরে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যে কোনও বয়সী নারীর জন্য মানানসই।  

মিরপুর ১২ নম্বরে লা রিভ আউটলেটে ঈদের জামা। ছবি: আইরিন সুলতানা

গত কয়েক বছরে মিরপুর ১২ নম্বর অনেক আড়ম্বর হয়েছে। এখানে রয়েছে আড়ং, লা রিভ এবং আর্টিসানের আউটলেট। এছাড়াও ওয়েস্টার্ন পোশাক নিয়ে আরও অনেক পোশাকের দোকান দেখা গেল।

পোশাকের রঙ ও কাপড়ের ধরনে নিজস্ব বিশেষত্ব নিয়েই মিরপুর ১২ নম্বরের আড়ং আউটলেটে উঠেছে ঈদের জামা।

হালকা রঙের পাশাপাশি উৎসবের জন্য ম্যাজেন্টা এবং মেরুন রঙের এক পিস এবং থ্রিপিস দেখা গেলো। শুধু কামিজ ১৮০০ টাকাতেও পাওয়া যাবে। আবার কারুকাজ করা সিল্কের থ্রিপিস পাওয়া যাচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা মূল্যে। এছাড়া মাঝামাঝি নকশা বৈচিত্র্যে সুতি থ্রিপিস ৫ হাজার টাকার মধ্যেও কেনা যাবে।

লেহেঙ্গা বা স্কার্ট রয়েছে এই আউটলেটের এক দিকে। উজ্জ্বল রঙের লেহেঙ্গা দুই থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে।

আড়ংয়ের তাগা অংশে ওয়েস্টার্ন আউটফিট ও দেশীয় মিশ্রণে ফতুয়া রয়েছে। ৭০০ থেকে তিন হাজার টাকায় কেনা যাবে মাঝারি ও লম্বা সাইজের ফতুয়া ও টপস।

এই এলাকায় লা রিভ আউটলেটে ঢুকতেই ক্রেতাদের স্বাগত জানানো হচ্ছে ঈদ কালেকশন দেখার জন্য। পার্টিওয়্যার থেকে উৎসবের জামা নিয়ে সুতি, সিল্ক ও জর্জেট কাপড়ের কামিজ, টপস, থ্রিপিস, সালোয়ার তোলা হয়েছে এই আউটলেটে।

একই রকম নকশার থ্রি পিসের অন্তত দুতিন রকম রঙ দেখা গেল এই আউটলেটে। এগুলোর দাম ৩ হাজার টাকার ওপরে।

শুধু টপ এবং কামিজ যেমন কেনা যায়, এর সঙ্গে পালাজ্জো ও লেগিংস আলাদা করে কেনা যাবে। হরেক রঙের পালাজ্জোগুলো নরম কাপড়ের এবং হাঁটুর নিজে চওড়া পাড়ের মতো নকশা আঁকা। কেনা যাবে ১২শ থেকে ১৯শ টাকার মধ্যে।

শপিং মল কিংবা বুটিকের দোকানে সারারা, গারারা, নায়রা নামে ক্রেতাদের টানার চেষ্টা থাকে। তবে আড়ং, লা রিভ ধরনের আউটলেটে এসব নামে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা দেখা যায় না সাধারণত।

মিরপুর ১২ নম্বরে আড়ং আউটলেটে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মাপে নতুন জামার মজুদ পর্যাপ্ত মনে হয়েছে। ক্রেতারাও রোজার শেষের দিকে ঈদ বাজারের ভিড় এড়াতে আগেভাগে কেনাকাটা করছেন। এদিকে জামা কেনার পর কেউ কেউ আসছেন জামার মাপ বদলাতে। দেখা গেল ওই মাপের জামা বিকিকিনি এরমধ্যে শেষ। ফলে ক্রেতাকে অন্য কোনও আউটলেটে পাঠানো যায় কি না, তেমন পরিস্থিতিও চলে এসেছে রোজার সপ্তাহ খানেক পার হতে না হতেই।       

উৎসবে ও বিয়ের অনুষ্ঠানে সারারা জামা পরছেন তরুণীরা। ছবি: অফুরন্ত ডটকম থেকে নেওয়া

ফেইসবুক লাইভে ব্যস্ত উদ্যোক্তারা

বিভিন্ন পণ্যের প্রচারে ও অনলাইন অর্ডারে ফেইসবুক লাইভ করেন এমন অনেক ব্র্যান্ড প্রোমোটার ও উদ্যোক্তা রয়েছেন। অনেকে শুরুতে কনটেন্ট ক্রিয়েটর থেকে এখন পণ্যের প্রোমোশন করেন ফেইসবুক লাইভে এসে।

ম্যাগনিফিক বাই ফারিয়া, সানভিস বাই তনি, মেক ইট আপ বাই ফারজানা ইসলাম পেইজ থেকে প্রতিদিনই থাকছে ঈদের জামা নিয়ে লাইভ।

এসব পেইজ থেকে শুধু যে দামি জামা দেখানো হয় তা নয়। কম মূল্যের জামা অথবা বিশেষ ছাড়ে অনলাইন অর্ডার করার মতো জামাও দেখানো হয় নিয়মিত।

মেক ইট আপ বাই ফারজানা ইসলাম পেইজ থেকে ৬শ টাকায় ঈদের জামা শিরোনাম দিয়েও লাইভ করা হয়েছে। মিষ্টি গোলাপি, আকাশি, বেগুনিসহ নানা রঙের সুতির থ্রি পিসগুলো সেলাই ছাড়া পাওয়া যাবে।

সেলাই করা জামার বেলায় লাইভে মাপ বলে দেওয়া হয়। ৩৮ থেকে ৪৬ সাইজের কামিজ আনা হয়।  অনলাইন কেনাকাটায় হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কামিজ পরে দেখার সুযোগ হচ্ছে না। তাই মাপে সামান্য ঢোলা কামিজ হলে বরং পাড়ার দর্জি বা নিজে সেলাই করে ঢোল কম কমে নেওয়া যায়।    

‘ইন্ডিয়ান-পাকিস্তানি’ জামা টানছে ক্রেতা

ফ্যাশনে হিন্দি সিনেমার বড় ছাপ বহু আগে থেকেই আছে। পাকিস্তানি শিফন ও জর্জেটের শাড়ি ও ওড়না প্রতি কয়েক যুগ আগেও তরুণীদের কাছে প্রিয় ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুবিধাজনক হওয়ার কারণে এখন দেশে সহজে ভারত ও পাকিস্তান থেকে থ্রি পিস আনা যাচ্ছে। অনলাইনে উদ্যোক্তাদের লাইভে ভারত ও পাকিস্তানের জামার বাড়তি চাহিদা দেখা যায় সারা বছরই; আর ঈদের সময় তো একটু বেশিই।

ফেইসবুকে প্রোমোশনাল লাইভে অনেক সময়ই বলা হয়, ভারতীয় ও পাকিস্তানি জামার কালেকশনগুলো দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায়।

লিরাস বুটিকের ঈদ কালেকশন নিয়ে মেক ইট আপ ফারজানা ইসলামের ফেইসবুক পেইজে লাইভ হয়ে গেলো ‘দিল্লির জামা এখন ঢাকাতে’ শিরোনামে। সিল্কের থ্রি পিসগুলোতে রয়েছে কারচুপি, কারদানা এবং থ্রিডি সিকোয়েন্সের কারুকাজ। সালোয়ার হবে পালাজ্জো ছাঁটের। উৎসবের সাজের সঙ্গে মানানসই উজ্জ্বল রঙের সেলাই করা এসব থ্রি পিসগুলোর দাম পড়বে আট হাজার টাকার উপরে।

দিল্লি থেকে আসা ঘন কারচুপির কারুকাজ করা ঝলমলে ক্রপটপ, লম্বা গাউন, কোমরের বেল্ট এবং লেহেঙ্গা সেটও দেখা গেলো। পরার সুবিধায় এসব ক্রপটপ বা ব্লাউজের পাশ দিয়ে চেইন বসানো থাকে। এমন একটি জামার সেট কিনতে খরচ হবে সাড়ে ১২ হাজার টাকা।

মিরপুর ২ নম্বরে সারি সারি দোকানে ক্রেতাদের টানতে চলে ডাকাডাকি। ছবি: আইরিন সুলতানা

সানভিস বাই তনি পেইজ থেকে তাদের শোরুমের পোশাকের অনলাইন অর্ডার নেওয়া হয়। ঈদের নতুন জামা নিয়ে লাইভে ক্রেতাদের টানতে ফলোয়ারদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে সাড়ে চার হাজার টাকার জামা ৫০০ টাকাতে দেওয়ার ঘোষণা দিতেও দেখা গেলো এখানে।

পাকিস্তানি আগানুর কালেকশন নিয়ে লাইভ দেখা গেলো এই পেইজে। এসব  থ্রি পিসের চাহিদা মেয়েদের মধ্যে অনেক তা বোঝা গেলো বিক্রেতার কথায়। এমব্রয়ডারি সিকোয়েন্সে কাজ করা রয়েছে গোটা কামিজ এবং হাতায়। জামার দামান অর্থ্যাৎ নিচে ঘন কারুকাজ করা পাড় রয়েছে। সাড়ে চার হাজার টাকা মূল্যের এই পাকিস্তানি থ্রি পিসগুলো বিশেষ ছাড়ে পড়বে ২২৫০ টাকা্।

সিল্কের কাপড়ে মিরর ও স্টোন বসানো পাকিস্তানি সেলাই ছাড়া থ্রি পিস নিয়ে আরও লাইভ দেখা গেলো এই পেইজে। এসব কালেকশনও সাড়ে চার টাকা নিয়মিত মূল্য; তবে সানভিস বাই তনি থেকে এসব বিশেষ ছাড়েও কেনা যাবে।  

দেশে বহু যুগ ধরেই চিকেনকারি কাপড়ের কামিজের চাহিদা রয়েছে।

লাইভে এই চিকেনকারির থ্রি পিসকে ‘সফিসটিকেটেড’ বললেন ম্যাগনিফিক বাই ফারিয়া পেইজের উদ্যোক্তা। এসব কামিজের হাতে কাটওয়ার্ক করা থাকে। আগানুর ছাড়াও সদা বাহার নামেও  জামার কালেকশন নিয়েও লাইভ হচ্ছে এই পেইজে। চিকেনকারি টুপিস সুতির সেট ২৪৫০ টাকা করে কেনা যাবে অনলাইনে অর্ডার করে।

ভারতীয় ও পাকিস্তানি জামার নকলও অনলাইন ও বাজারে মিলছে বলে ফেইসবুকের অনেক লাইভে সতর্ক করা হয়। আর এসব রেপ্লিকা জামা এক হাজার ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

ফেইসবুকে কোনো কোনো বুটিক পেইজে ‘ইন্ডিয়ান মাস্টার কপি ‘ লিখে সারারা ও অন্যান্য থ্রি পিস বিক্রি করতে দেখা যায়। এগুলোর দাম হাঁকা হয় আড়াই হাজার টাকার ওপরে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত