জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের (এস আলম) ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আহসানুল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান।
মামলায় এস আলমের দুই ভাই সহিদুল আলম ও মো. রাশেদুল আলমসহ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়- ১ এ সংস্থাটির উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাত এই মামলা করেন।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, আসামিরা নিজেদের মধ্যে যোগসাজস করে মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখা থেকে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।
মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তানভীর আহমদ, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ড. মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, ড. মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, সাবেক পরিচালক খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান ও সাবেক নমিনী পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরোওয়ার চৌধুরী চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করেন। পরের মাসে ওই শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই না করেই ঋণ অনুমোদন করেন।
মিথ্যা তথ্যের উপর জালিয়াতি করে তৈরি করা কাগজের মাধ্যমে ঋণের জন্য আবেদন করে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ।
প্রথমে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হলেও পরে সেটা ১১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয় উল্লেখ করে মামলা বলা হয়, মুরাদ এন্টারপ্রাইজ যে বিনিয়োগের কথা বলে ঋণ নিয়েছিল তার শর্ত ভেঙে এ টাকা থেকে এস আলমের অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করা হয়।
এর মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। নিয়ম না মেনে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিন শাখা থেকে ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ঋণ দেওয়া হয়। দুদকে এ অভিযোগ জমা হওয়ার পর উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন কমিশন। কিন্তু অনুসন্ধান কাজ তখন এগোয়নি।
সেই সময় সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনও সাড়া পাননি অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গতি পায় ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির এ অনুসন্ধান। এরপর গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ব্যাংকটির অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।
আইএফআইসি ব্যাংকের ১৯০৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ, অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত
ব্যাংকিং আইন-কানুন অমান্য করে আইএফসি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারেয়ার বিরুদ্ধে একটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
সংস্থাটির ডিজি আক্তার হোসেন জানান, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ যথাযথ ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া ও ঋণ নিয়মাচার না মেনেই জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়।
এর মধ্যে ব্যাংকটির গুলশান শাখা থেকে ব্লুমুন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও এক্সিস বিজনেস লিমিটেডকে, প্রিন্সিপাল শাখা থেকে এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ, গ্লোয়িং কন্সট্রাকশন অ্যান্ডি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, ভিস্তা ইন্টান্যাশনাল লিমিটেড ও স্কাইমার্ক ইন্টান্যাশনাল লিমিটেডকে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
১৩৭ বাস কেনায় দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত
সরকারিভাবে ১৩৭টি বাস কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও মন্ত্রণালয়েল সাবেক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দিয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে দুদকের ডিজি আক্তার জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।