রশিদ খানের বলে মাহমুদউল্লাহ ও রিশাদের জোড়া আউট। ওই দুই উইকেটে ম্যাচ থেকে অনেক দূরে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটিং যুদ্ধে টানা হতাশায় জেরবার দলটি আগে থেকেই ব্যাকফুটে ছিল। এরসঙ্গে স্নায়ু যুদ্ধ যোগ হয়ে নাভিশ্বাস তুলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের। এই দুরবস্থায় আফগানিস্তানকে ধাক্কা দেওয়া কঠিন ছিল। যে চ্যালেঞ্জ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ১১৬ রানের লক্ষের ম্যাচ হারল করুণ ভাবে। সেমিফাইনাল মরীচিকার পেছনে ছুটে স্বাভাবিক জয়টাও মেলেনি নাজমুল হোসেন শান্তদের।
টার্নিং পয়েন্ট
তাসকিন ও মোস্তফিজুর রহমানের উইকেট না গেলে বাংলাদেশ জিতে যেত – এমনটা বলতেই পরেন অনেকে। কিন্তু ম্যাচের হার ঠিক হয়ে যায় আরও আগেই। রশিদ খানের করা বাংলাদেশের ইনিংসের ১১তম ওভারে। ওই ওভারের শেষ দুই বলে মাহমুদউল্লাহ ও রিশাদকে ফেরান রশিদ।
মাহমুদউল্লাহকে বলা হচ্ছিল ফিনিশার। বিশ্বকাপের আগে সাইলেন্ট কিলার ছদ্মনাম পাওয়া এই অভিজ্ঞ বিপিএলে কয়েকটি ইনিংসে ভালো করে দলে জায়গা পান। এর আগে ২০২৩ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন কয়েকটি ম্যাচে। কিন্তু রশিদ খান, নূর আহমেদদের সামনে নিজেকে আর ফিরে পাননি মাহমুদউল্লাহ।
এর সঙ্গে রিশাদের কিছু না বঝেই ওই স্লগ শট। ওই মুহূর্তে রশিদের শেষ বলটি ব্লক করে দিলেও ক্ষতির কিছু ছিল না। জয়ের জন্য পরের ওভারে চেষ্টা করতে পারতেন। বড় শট নেয়ার সামর্থ্য যতোই থাকুক, রশিদ খানের মতো বোলারের মুখোমুখি হওয়ার প্রথম বলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন এক ব্যাটারের জন্য বড় শট খেলা সহজ না। কিন্তু সেই কঠিন কাজ করতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসেন রিশাদ।
লিটনের সঙ্গে রিশাদের শেষ জুটির যে ভরসা ছিল তা শেষ হয় ১১তম ওভারে। সঙ্গে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন তো দূরের কথা, ম্যাচ জয়ও কঠিন হয়ে যায়।
মাহমুদউল্লাহর ৯ বলে ৬
নবম ওভারে ৯ বলে ১৪ রানে ক্যাচ আউট হয়ে থামেন তাওহিদ হৃদয়। ৬৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ওই সময় ক্রিজে এসে মাহমুদউল্লাহ দলকে বিপদের আরও গভীরে ঠেলে দেন।
হৃদয় ফেরার পর মাহমুদউল্লাহ ধীর ব্যাটিংয়ে ৯ বলে ৬ রান করেন। নবম ওভারের পর ৩ ওভারে ৪৩ রানের দরকার ছিল বাংলাদেশের। ওই সময় নূর আহমেদের করা ১০ম ওভারে মাহমুদউল্লাহ নিয়েছেন মাত্র ৪ রান। ওই ওভারে নূর আহমেদের বল বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি।
এর আগে ও পরে রশিদ খানের দুই ওভারে তিনটি বল মুখোমুখি হয়ে দুটি সিঙ্গেল নেন। আর নূরের ওভারের ৫ বলে সিঙ্গেলও নিতে পারেননি। একটি কাভার ড্রাইভে চার না এলে মাহমুদউল্লাহর রান থাকত ২। বিশ্বকাপের এমন বড় ম্যাচে কঠিন মুহূর্ত সামলানোর জন্য অভিজ্ঞ ব্যাটারদের ওপরই ভরসা করে দল। কিন্তু রং হারানো মাহমুদউল্লাহ যেভাবে হতাশ করলেন এরপর আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজেকে ভাবা উচিত নয় তার।
রশিদের শেষ ওভারে দুই ছক্কা
আফগানিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠার ইতিহাসে রঙিন হয়ে থাকবে রশিদ খানের দুটি ছক্কা। তানজিম সাকিবের করা ২০তম ওভারটিতে দুটি ছক্কা মারেন এই অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় বলে পয়েন্টের ওপর দিয়ে আর শেষ বলে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে।
নিজেদের ইনিংসের মোস্তাফিজের ১৯তম ওভারটিতে মাত্র ১ রান নিতে পারে আফগানিস্তান। রশিদি নিজে মিস করেন চারটি বল। ওই ওভার শেষে মাত্র ১০০ রান ছিল আফগানদের। শেষ ওভারের ওই ১৫ রান তাদের সেমিফাইনালের পথে তাই মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ হয় ।
বাংলাদেশের বিরহ নায়ক লিটন
টানা হতাশার পাহাড় মাথায় নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন লিটন দাস। ছোট রান তাড়াতেও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ব্যাটিং লাইনে আগলে রেখেছিলেন একপ্রান্ত। তবে শেষ হাসিটা তার হয়নি। দল হারায় রানে ফেরার স্বস্তিতেও থাকা হচ্ছে না এই ওপেনারের।
টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে প্রথমবার ব্যাট ক্যারি করার উদাহরণ উপহার দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৪ রানে। ১৭ ইনিংস পর টি-টোয়েন্টি ফিফটি পেলেন লিটন। এই ফরম্যাটে তার ১১তম। সবচেয়ে বড় কথা রানে ফিরেছেন। এই ম্যাচে দলকে দাগের ওপারে নিতে পারলে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ত লিটনের। তা হয়নি, দিনশেষে বিরহের নায়ক হয়েই রইলেন।