জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আনা একটি প্রস্তাবে আবারও ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবটি গৃহীত হলে তা হামাসকে ‘উৎসাহিত’ করত।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’র দাবি জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি গাজায় হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মির ‘তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তি’র দাবিও জানানো হয়েছিল।
গাজার যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তাতে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় কোনোবারই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়নি জাতিসংঘে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বুধবার উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে “শান্তির পথ নয়, বরং আরও সন্ত্রাস, দুর্ভোগ ও রক্তপাতের রোডম্যাপ” বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “অনেকে এই অন্যায়কে পাস করানোর চেষ্টা করেছেন। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানাই।”
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট। যুদ্ধবিরতির সঙ্গে জিম্মিদের মুক্তির একটি যোগসূত্র থাকা জরুরি।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রকে ফিলিস্তিনের “জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অংশীদার” বলে আখ্যা দিয়েছে।
তাদের ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্র একটি অপরাধী রাষ্ট্র, যা গাজায় শিশু ও নারীদের হত্যা করছে এবং সাধারণ মানুষের জীবন ধ্বংস করছে।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের এক আকস্মিক হামলা ঘিরে গাজায় সংঘাতের সূচনা হয়। ইসরায়েলের ভূখণ্ডে চালানো হামাসের ওই নজিরবিহীন হামলায় ১ হাজার ২০৬ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাসের যোদ্ধারা।
ওই হামলার জবাবে সেদিনই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৯৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা গাজায় নিহতের এই সংখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের গাজার ২৪ লাখ অধিবাসীর প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যুদ্ধাবস্থার কারণে সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।