Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

ডিভোর্স কেন ভালো?

Divorce
[publishpress_authors_box]

সংবাদমাধ্যমে গত বছর ধরে বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের খবর খুব নজর কাড়ে। ২০২৩ সালে ঢাকায় প্রতি ৪০ মিনিটে ১টি করে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিসংখ্যানে আমরা আঁতকে উঠেছিলাম। ভাবছিলাম, সমাজ কোন রসাতলে যাচ্ছে! সোশাল মিডিয়া জুড়ে একটা ‘ক্যাওয়াজ’ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ পরিসংখ্যানটিতে আসেনি- বিচ্ছেদের পর দুইপক্ষই আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো ও সুখী আছেন কিনা!

২০২৩ সালে সিনেজুটি পরীমণি ও শরিফুল রাজের পারিবারিক কলহ বছরজুড়ে শোবিজ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার বিষয় ছিল। দীর্ঘ কাদা ছোঁড়াছুড়ির পর গত সেপ্টেম্বরে এই দম্পতির বিচ্ছেদ হয়। ডিভোর্স লেটার পাঠান পরিমণিই, যাতে মনের অমিল ও মানসিক অশান্তির কারণ তুলে ধরেন তিনি।

চিত্রনায়িকা পরিমণির ফেইসবুক জুড়েই এ বিচ্ছেদের আগে নানা বিষোদগার ও হতাশামূলক স্ট্যাটাস ছিল। গণমাধ্যমেও তিনি এবং তার সাবেক স্বামী রাজ একাধিক সাক্ষাৎকারে একে-অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। অথচ বিবাহ বিচ্ছেদের চারমাস পরই একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে ‘ভালো আছেন’ বলে ফেইসবুকে জানিয়েছেন তিনি। 

সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল ও অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদের দীর্ঘ ২৩ বছরের সংসার ভেঙে যায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। প্রথমদিকে বিচ্ছেদ নিয়ে দুইজনের কেউই মুখ খোলেননি। পরে এক সাক্ষাৎকারে তানিয়া আহমেদ জানিয়েছিলেন, বোঝাপড়া না হওয়াসহ একাধিক কারণে দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল। কোভিড মহামারীর আগ থেকেই সম্পর্ক ভালো না যাওয়ার কারণে দুইজনেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। একাধিকবার চেষ্টাও করেছেন সংসার টিকিয়ে রাখার, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার। কিন্তু দূরত্ব কমেনি। তাই মানসিক শান্তির জন্যই বেছে নিয়েছেন বিচ্ছেদ।

সাম্প্রতিক ফেইসবুক স্ট্যাটাসগুলো বিশ্লেষণ করলে তানিয়া আহমেদের বিচ্ছেদ পরবর্তী উচ্ছ্বল জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। 

বিল গেটস আর মেলিন্ডা গেটস জুটিকে কে-না  চেনেন। বিলিয়নিয়ার এই জুটি আদর্শ দম্পতি হিসেবে কাটিয়েছেন ২৭ বছর। ২০২৩ সালে আচমকা দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় তাদের  বিচ্ছেদের খবর এলে সারা দুনিয়ায় আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। 

গত কয়েক বছর ধরেই তাদের টালমাটাল দাম্পত্যের খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচিত ছিলো। 

দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যম জানায়, শান্তিপূর্ণভাবে দাম্পত্য কাটিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আর আশাবাদী হতে পারছিলেন না এই দম্পতি। সৃষ্টি হয়েছিলো আস্থা এবং বিশ্বাসের সংকট।

‘ডিভোর্স’ পরবর্তী প্রাথমিক ধাপগুলো দুই পক্ষের জন্যই কঠিন হতে পারে। কেননা দুই পক্ষকেই পাড়ি দিতে হতে পারে কঠিন সময়। কিন্তু  এই প্রাথমিক ধাপগুলো পাড়ি দিতে পারলে জীবনে সৃষ্টি হতে পারে নতুন সম্ভাবনা, জীবন হতে পারে আনন্দময়। ডিভোর্স যতো বিপর্যয়ই নিয়ে আসুক না কেন, পরবর্তীতে এটাই হতে পারে আপনার সেরা সিদ্ধান্ত যদি সত্যিই আপনি বৈবাহিক সম্পর্কে খুব অসুখী হয়ে থাকেন। 

বেশিরভাগ মানুষ ‘ডিভোর্স’ বা বিবাহ বিচ্ছেদকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখেন। তাই কোনও দম্পতির ডিভোর্স হওয়ার পর সেটির কারণ নিয়ে চুপ থাকাটাই এখানকার রেওয়াজ। আর যদিওবা বিচ্ছেদ নিয়ে কোনও পক্ষ কথা বলেন- সেটি মূলত বিষোদগার হয়ে দাঁড়ায়।

একটি অসুখী এবং বিষাক্ত বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে সময় মতো বের হয়ে আসতে পারাই বাস্তব সম্মত যদি সেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ একেবারেই না থাকে। 

চলুন জেনে নিই ডিভোর্স এর ইতিবাচক দিকগুলো-

পারিবারিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব 

বিবাহ বিচ্ছেদ পরিবারের শিশুদের জন্য কঠিন হতে পারে। তবে বাবা-মা’র মধ্যে প্রতিদিন অশ্রদ্ধাপূর্ণ তর্ক, নেতিবাচক মন্তব্য এবং প্রতিদিনের ঝগড়া শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভীষণ ক্ষতিকর। কিন্তু একবার আপনি ডিভোর্সের প্রাথমিক ধাক্কাটুকু সামলে নিতে পারলে, সন্তানদের পূর্বের তুলনায় বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন। 

বেশিরভাগের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যেসব অভিভাবকরা সন্তানদের খুব একটা সময় দিতেন না, তারাই ডিভোর্সের পর সময় ভাগ করে অনেক বেশি সময় দিচ্ছেন। এর ইতিবাচক ফল পাচ্ছে সন্তানরা। 

বিষাক্ত সংসারের চেয়ে বরং ডিভোর্স নিলে আগের বিশৃঙ্খল পারিবারিক জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে একজন মানুষ অনেক বেশি নিজের দক্ষতার দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন, যা  পেশাগত দক্ষতার জন্য ভালো।

মিলিন্ডা ও বিল গেটস এর বিচ্ছেদ নিয়ে দুজনের তাদের যৌথ ঘোষণা এর একটি চমৎকার উদাহরণ। তারা ডিভোর্স নিয়ে বিবৃতিতে বলেছিলেন, “২৭ বছরে আমরা অসাধারণ তিনটি সন্তান পেয়েছি। এমন একটা ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। আমরা যে বিশ্বাস থেকে ফাউন্ডেশনটি চালু করেছি, সেটা থাকবে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ আমরা একসঙ্গে চালিয়ে যাব। কিন্তু আমরা এটা আর বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমাদের জীবনের পরের ধাপে দম্পতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব।”

সামাজিক জীবনে স্বস্তি

ডিভোর্সের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারলেই হঠাৎ খেয়াল হবে হাতে অনেক সময়। এ সময়টুকু কাজে লাগিয়ে পুরোনো বন্ধুত্বগুলো আরেকটু ঝালিয়ে নিতে পারা যায়। খুঁজে পাওয়া যায় নতুন বন্ধু। বেশিরভাগ মানুষই বিয়ের মতো দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে ঢুকে যাওয়ার পর পুরোনো বন্ধুত্বগুলো হারিয়ে ফেলেন। বিচ্ছেদের পর খোঁজ নেওয়ার ফুরসৎ মেলে ছেলেবেলার বন্ধুদের, পুরনো কলিগ অথবা প্রতিবেশিদের। মনোযোগ দেওয়া যায় সামাজিক নানা কাজে। এভাবে গড়ে তোলা যায় একটি সক্রিয় সামাজিক জীবন। 

ডিভোর্সিদের জন্য টিপস

১. নিজের জীবনে বন্ধু এবং পারিবারিক সদস্যদের আরও বেশি করে জায়গা দিন। এটি আপনার ডিভোর্স পরবর্তী ধাক্কা এবং একাকীত্ব কাটিয়ে উঠতে খুব সাহায্য করবে। 

২. আপনার সাবেক পার্টনারের সাথে মিউচুয়াল এমন বন্ধুদের এড়িয়ে চলবেন না। এড়িয়ে চলা বরং আপনাকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে তুলবে। 

৩.  নিজের নতুন নতুন আগ্রহের জায়গা খুঁজে বের করুন। এমন শখ যেগুলো পূরণ হয়নি, সেগুলো পূরণে মনযোগ দিন। আপনার আগ্রহ শখ ইত্যাদির সাথে মিলে যায় এমন মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করুন।  

নিজ টাকাকড়ির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ

ডিভোর্স কেবল আইনি বিচ্ছেদই নয়। এটা সম্পর্কের আর্থিক বন্ধন থেকেও মুক্ত করে। বৈবাহিক সম্পর্কে আর্থিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। এসবের জেরে সম্পর্ক হতে পারে অশ্রদ্ধার। ডিভোর্স আর্থিক বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে নিজ উপার্জনের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে সহায়তা করে। আর এ সময়কে কাজে লাগিয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া যায়। 

শেষ কথা

এ লেখাটি মোটেই বিবাহ বিচ্ছেদ উৎসাহিত করার জন্য নয়। ডিভোর্স কখনো কখনো যে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে সেটি তুলে ধরাই এর লক্ষ্য ছিল। কেউ কেউ ডির্ভোসের পর ডিপ্রেশনের শিকার হন। সেই হতাশা থেকে নতুন করে সামাজিক জীবনে ফিরে আসা আর অর্থময় করে তোলার কিছু টোটকা কেবল এখানে দেয়া হলো।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত