Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

দেশে এইচএমপিভির রোগী শনাক্ত

HMPV
[publishpress_authors_box]

চীন থেকে ভারতেও ছড়িয়ে পড়ার পর উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশেও একজনের দেহে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

আক্রান্ত এই নারীর বয়স ৩০ বছর। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। তিনি কখনও বিদেশ যাননি।

রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই সংক্রমণর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, শারীরিক অন্য জটিলতার কারণে এই নারীকে আইসিইউতে নিতে হলেও তার অবস্থা উন্নতির দিকে।

অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ ফরহাদ হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভৈরব থেকে আসা ওই নারী মূলত ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া নামের একটি ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত ছিলেন। একটি বেসরকারি হাসপাতালে অন্যান্য কিছু পরীক্ষার জন্য গেলে তার এইচএমপিভি ধরা পড়ে।”

আক্রান্ত নারী বর্তমানে ঢাকার সরকারি এক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

তার অন্যান্য কিছু জটিলতাও রয়েছে। এই কারণেই তার পরিস্থিতির অবনতি হয় এবং আইসিইউতে তাকে নিতে হয়। তবে এখন তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে “ বলেন ডা. ফরহাদ।

যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি সেখানকার এক চিকিৎসক সকাল সন্ধ্যাকে জানান, তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

করোনাভাইরাসের মতোই এই ফ্লু ভাইরাস চীন থেকে শুরু করে হংকং, মালয়েশিয়ায় ছড়িয়েছে। ভারতেও এরই মধ্যে ডজনখানেক রোগী ধরা পড়েছে।

কোভিড মহামারি চীন থেকে ছড়িয়েছিল বলে এইচএমপিভি নিয়ে বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।

এনিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আগেও এই ভাইরাস ছিল, এটা নতুন না, সব দেশেই আছে, বাংলাদেশেও রয়েছে। তাই উদ্বেগের কিছু নেই। অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

এইচএমপিভিকে সাধারণত প্রাণঘাতী বলা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে যারা বৃদ্ধ, যারা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম। যেহেতু তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য আরও বেশি সাবধানতা জরুরি। সঙ্গে সাবধান হতে হবে শিশুর বেলাতে।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা জানান, বাংলাদেশে এইচএমপিভি একটি মৌসুমী ভাইরাস।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি জানান, বাংলাদেশে করা এক গবেষণায় ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী ২০০ জন নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেসময় তাদের শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে ২৬ জনের শরীরে এইচএমপিভি ধরা পড়েছিল।

মানবদেহে এইচএমপিভি সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে। তবে এর অস্তিত্ব বিশ্বে আগেও ছিল। এর সংক্রমণ মৃদু, প্রাণঘাতী নয়। তবে বৃদ্ধ, যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং শিশুদের জন্য এটা জটিল হতে পারে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা আকরাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অনেক আগেই এইচএমপিভি শনাক্ত হয় বাংলাদেশে এবং প্রতি বছরই এক কিংবা একাধিক কেইস পাওয়া যায়, তবে সেটি খুব বেশি নয়। সিভিয়ার কেইস এখনও পাওয়া যায়নি।”

লক্ষণ কী

চিকিৎসকরা বলছেন, এইচএমপিভি করোনাভাইরাসের মতোই শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ঠাণ্ডা, সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, র‌্যাশ ওঠার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

ডা. আরিফা আকরাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের অর্ন্তগত।

কোভিডের সঙ্গে এইচএমপিভির অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা ইত্যাদি।

করোনাভাইরাসের মতো এইচএমপিভিও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

ডা. আরিফা বলেন, “এইচএমপিভিতে সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যেটা করোনার সময়ে আমরা দেখেছিলাম।”

আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিসের সংস্পর্শে এলেও এর সংক্রমণ ঘটতে পারে।

এটি মূলত শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশে আক্রমণ করে। এটি কখনও কখনও নিউমোনিয়া, হাঁপানির মতো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের আকার ধারণ করতে পারে। এই ভাইরাসের সুপ্তিকাল তিন থেকে ছয় দিন।

ডা. আরিফা আকরাম বলেন, “এইচএমপিভিতে আক্রান্তদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসুস্থতার তীব্রতা কম থাকে। তবে অসুস্থতার তীব্রতা রোগীর উপর নির্ভর করে।”

ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথের ২০২১ সালের একটি নিবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মারা যাওয়া ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক শতাংশের মৃত্যুর জন্য এইচএমপিভি দায়ী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত