‘ভাত দে’ সিনেমার চার দশক পূর্তি এবং এর নির্মাতা আমজাদ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করতে যাচ্ছে চ্যানেল আই।
১৪ ডিসেম্বর আমজাদ হোসেনের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের এই দিনে ৭৬ বছর বয়সে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মারা যান তিনি। আবার চার দশক আগে, ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ‘ভাত দে’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল।
নির্মাতা আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্র ও সাহিত্যকর্মে মানুষ ও সমাজের নানা স্তরের মানুষের সংকট ও সমাজের অসঙ্গতির চিত্র ক্রমাগত ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যার ব্যতিক্রম নয় ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রটিও।
চলচ্চিত্রটির একটি সংলাপের সূত্র ধরে কিংবদন্তী শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী বলেছিলেন, “‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের বিখ্যাত সংলাপটি, ‘আমি ভাত চুরি করি না তো, খিদা লাগলে খাই।’ এমন গভীর মমতামাখা সংলাপ দুঃখী মানুষের প্রতি অপার ভালোবাসা ছাড়া লেখা সম্ভব নয়।”
জীবনঘনিষ্ঠ সামাজিক কাহিনির প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রটিতে একজন নারীর জীবনের নানা টানাপোড়েনের গল্পের পাশাপাশি তৎকালীন সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন আমজাদ হোসেন।
চলচ্চিত্রটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- শাবানা, আলমগীর, রাজীব , আনোয়ার হোসেন, আনোয়ারা, আঁখি আলমগীর (শিশুশিল্পী), জাহানারা ভূঁইয়া,টেলি সামাদ, আখতার হোসেন। চলচ্চিত্রটির কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা করেছেন আমজাদ হোসেন।
কালজয়ী এই চলচ্চিত্রটি নয়টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি শনিবার দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে দেখা যাবে চ্যানেল আই-এর পর্দায়।
নির্মাতা আমজাদ হোসেন সম্পর্কে গবেষক ও নির্মাতা সাজেদুল আউয়াল বলেন, “সাহিত্য ও চলচ্চিত্র-আঙ্গিকে তিনি প্রধানত গ্রামীণ শ্রমজীবী সমাজ-মানুষের কথাই বলেছেন। তাদের বাস্তবচিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব একটি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, যা অনেকটা মার্কসবাদী চিন্তাভাবনা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। তিনি তার যাপিতকালের ঘটে চলা সমাজবাস্তবতার কথাই চলচ্চিত্র ও তাঁর সাহিত্যকর্মে ধরে রেখে গেছেন। আমজাদ হোসেন গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতা-কাঠামোতে স্থিত দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে তাঁর চলচ্চিত্র ও সাহিত্যকর্মে স্থান করে দিতেন বেশি। তার কিছু সৃষ্টিশীলতা, বিশেষ করে কাহিনি-সংলাপ রচনার দক্ষতা ও চরিত্র-ঘটনাপ্রবাহ দাঁড় করানোর স্বভাবজাত প্রতিভা দ্বারা বাংলাদেশের অনেক বড়মাপের চলচ্চিত্রজনও উপকৃত হয়েছেন – এঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে জহির রায়হান ও খান আতাউর রহমানের কথা বলা যায়। তার চলচ্চিত্রযাত্রা যেমন বহুভঙ্গিম, তেমনি তাঁর সাহিত্যকর্ম তথা গল্প-উপন্যাসও পাঠকপ্রিয়।”
আমজাদ হোসেন পরিচালিত ব্যাপক দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র হচ্ছে- ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।