একাদশে দুই অভিষিক্ত, দলে বেশ কয়েকজন নতুন মুখ। তবুও সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে একদম উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। গোয়ালিয়রে ১২৮ রান মাত্র ১২ ওভারে তাড়া করেছে দলটি। অবশ্যই অপেক্ষাকৃত তারুণ্য নির্ভর দল হলেও ভারত এ সিরিজে ফেভারিট হয়েই মাঠে নেমেছে। তবে প্রথম ম্যাচেই ওই অসম লড়াই আবারও দেখিয়ে দিল টি-টোয়েন্টির পাঞ্জা লড়াইয়ে বাংলাদেশ কতটা দুর্বল।
বাংলাদেশের দুর্বলতা যে ব্যাটিংয়ে তা নাজমুল হোসেন শান্তরা অনেকবারই বলে থাকেন। ১৫০ এর বেশি রান করার অনভ্যস্ততা বড় মঞ্চে বাংলাদেশকে আটকে দেয়। বদলে যাওয়া দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে সেই অনভ্যস্ততাই বুধবার বাধা হয় কিনা…নাজমুলদের সামনে সেটাই ভয়।
দিল্লি স্টেডিয়ামে আগে স্পিনিং পিচ ছিল। এ মাঠে রান কম হতো। এ বছর আইপিএলে মাঠটিতে হওয়া ৫ ম্যাচের ১০ ইনিংসের মধ্যে ৮টিতেই ছিল দুইশো ছাড়ানো স্কোর। বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও ব্যাটিং পিচ পাওয়া যাবে এ নিয়ে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ দুইশো রান করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
এই বাধা টপকানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ আরেকটি চ্যালেঞ্জ নিতে পারে। মাহমুদউল্লাহর জন্য খেলা। মঙ্গলবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজই তার শেষ। বিদায়ী সিরিজে সব বাধা ও সংকীর্ণতা কাটিয়ে ভালো কিছু উপহার দিতে চাইবো দল।
ভালো কিছু স্মৃতি দিল্লিতে আছে বাংলাদেশের জন্য। ভারতের সঙ্গে ১৫ টি-টোয়েন্টিতে যে একটি জয় তা এ মাঠেই পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে নেয় বাংলাদেশ। পরের দুটিতে হেরে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে মাহমুদউল্লহর দল।
ওই সিরিজের অধিনায়ক ৫ বছর পর দিল্লিতেই ফরম্যাটটি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন। ২০১৯ এর সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আজ ম্যাচটি জিততে চান অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার, “আমরা যখন মাঠে ঢুকছিলাম, তখন সেদিনের জয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল। ওটা একটা ভালো মুহূর্ত ছিল। অবশ্যই চাইবো আগামীকাল (আজ) এমন কিছু ফিরিয়ে আনতে।”
কিন্তু নিজেদের বাধা সম্পর্কেও জানেন মাহমুদউল্লাহ, “অবশ্যই আমরা সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভালো করিনি। ব্যাটিংটা খারাপ হয়েছে কিন্তু আমাদের বোলাররা গত বছরগুলোতে বেশ ভালো করে আসছে। ওদের দিক থেকে ম্যাচটি খারাপ ছিল না। আমরা এক ম্যাচের ওপর নির্ভর করে মুষড়ে পরতে পারি না। ওই অবস্থা থেকে বের হয়ে আমাদের জয় পেতে হবে। আমরা চেয়েছিলাম আগ্রাসী ব্যাটিং করতে। এ ম্যাচেও চেষ্টা করবো তবে একটু বুঝে খেলতে হবে।”
অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের নেটে বুঝে খেলার ইঙ্গিত অবশ্য পাওয়া যায়নি। ভারতীয় নেট বোলারের কাছেই বারবার পরাস্ত হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। প্রায় ৩৯ হয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ যে আর টি-টোয়েন্টির গতি ধরতে পারছেন না তা স্পষ্ট। তবুও নিজের শেষ দুটি ম্যাচে তাকে ছাড়া একাদশ গড়ার সুযোগ নেই।
মাহমুদউল্লাহ না পারলেও বাকিরা পেরেছেন। নেটে বেশ ভালো ভাবেই বোলারদের সামলেছেন তাওহিদ হৃদয়, পারভেজ হোসেন ইমন, জাকের আলি, মেহেদি হাসান মিরাজরা। তবে গোলযোগ বাঁধে ম্যাচে। বরাবরের মতো ম্যাচে ঠিকঠাক ব্যাটে বলে হয় না তাদের।
ভারতের এ সমস্যা নেই। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিত শর্মা-রাহুল দ্রাবিড়ের তৈরি করা আক্রমণাত্মক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট ধরে রেখেছে গম্ভীর-সূর্যকুমার জুটি। নিতিশ রেড্ডি ছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাকি ব্যাটাররা ১৫০ স্ট্রাইকরেটের ওপর ব্যাট করেছেন। দিল্লি স্টেডিয়ামের উইকেট তাদের কাজটা আরও সহজ করে দিতে পারে বুধবার।
বাংলাদেশ একাদশে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। একটা জায়গাতে বদল হতে পারে। শরিফুল ইসলামের জায়গায় খেলতে পারেন তানজিম হাসান সাকিব। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ব্যাটার কমিয়ে খেলার বোকামি করবে না বাংলাদেশ।
মঙ্গলবারের অনুশীলনে সবার শেষে মাঠের পাশের নেটের দিকে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আকাশের দিকে তাকিয়ে বারবার মনে মনে হয়তো কিছু বলছিলেন। নিজের শেষটা জয়ে দেখতে চান এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তার প্রার্থনায় দলের সাফল্য আসলেই হয়।