যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব রাজনৈতিক-সামাজিক প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছিল, তার একটি তালিকা দিয়ে এসবে আর ডলার খরচ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে প্রধান করে ট্রাম্প যে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) খুলেছেন, সেই দপ্তর শনিবার রাতে তাদের এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে এই তালিকা দিয়ে দেশের করদাতাদের অর্থ আর এসব কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে না বলে জানায়।
বাইডেন প্রশাসনের আমলে গ্রহণ করা ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ’ কর্মসূচিতে যে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হতো, তা ওই বাতিলের তালিকায় এসেছে।
ভারতের ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-সংক্রান্ত কর্মসূচিতে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং নেপালের আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণসহ একাধিক কর্মসূচির ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, চেক রিপাবলিক, সার্বিয়া, মলদোভা, লাইবেরিয়া, মালি, কসোভো ও মিশরের বিভিন্ন কর্মসূচির অর্থায়নও বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই দেশটির বিদেশি সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির প্রতি রুষ্ট। প্রথম মেয়াদেও তিনি সংস্থাটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন প্রশাসনের চাপে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের চেয়ারে পুনর্বার বসার পর ট্রাম্প ‘ডিপ স্টেটকে’ ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে শুরুতেই ইউএসএআইডির ওপর খড়গহস্ত হন। তিনি সংস্থাটিকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইউএসএআইডি সংক্রান্ত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ট্রাম্প দিয়েছেন বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ককে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ছোট করার উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
যে কর্মসূচিতে অর্থায়ন
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা- ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাজ্যের সহায়তা সংস্থা- ডিএফআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ প্রোগ্রাম (এসপিএল) বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি।
এটি বাস্তবায়ন করছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বিশ্বে নির্বাচনী গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে কাজ করে আসছে।
বাংলাদেশে এসপিএল কর্মসূচির আওতায় রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর পাশাপাশি দল ও নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সংযোগ জোরদার করার জন্য কাজ করা হতো।
এর আগে গ্রহণ করা ‘ডেমোক্রেটিক পার্টিসিপেশন অ্যান্ড রিফর্ম’ বা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও সংস্কার কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে এই এসপিএল গ্রহণ করা হয়।
এসপিএলের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিকদের সমর্থন অব্যাহত রাখা; যাতে তারা কার্যকর নেতা হওয়ার জন্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির পক্ষে সমর্থন করার জন্য এবং সংঘাত প্রশমনের জন্য একে অপরের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে।
এসপিএলের অধীনে গ্রামীণ, বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারী, যুব ও তৃণমূল স্তরের কর্মীদের অন্তর্ভুক্তিকে আরও ভালোভাবে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে সাতটি বিভাগীয় অফিস পরিচালনা করা হতো।
এসপিএলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক কাঠামো উন্নত করতে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে, তাদের নির্বাচনী এলাকার চাহিদা বোঝার জন্য দলগুলোর ক্ষমতা উন্নত করতে এবং প্রান্তিক নারী ও যুব সমাজের কাছে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে কাজ করে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে স্বাধীনভাবে দলীয় সম্মেলন করার জন্য দলগুলোর ক্ষমতা তৈরিতে কবাজ করেছে এসপিএল।
রাজনৈতিক দল, তৃণমূল স্তরের কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ প্রচার করে রাজনৈতিক সহিংসতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার বিষয়টিও এসপিএলের লক্ষ্য ছিল।
এছাড়া ইউএসএইডের ইয়ং লিডার্স ফেলোশিপ প্রোগ্রাম (ওয়াইএলএফপি) এসপিএলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম, যা তরুণ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বলে কর্মসূচির বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে।