Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

লুর নীরব বিদায় ‘ইমরানের দলের বিজয়’

Donald Lu
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির প্রভাবশালী কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড লু নীরবে পদত্যাগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় বিষয়টি জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রবিবার প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ডোনাল্ড লুর মেয়াদ ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে শেষ হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। তাকে বরখাস্ত করা হয়নি।

বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের বর্তমান সরকার এই ঘটনাকে একটি সাধারণ পরিবর্তন হিসেবে দেখলেও দেশটির অন্যতম রাজনৈতিক দল পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) একে বিজয় হিসেবে দেখতে পারে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বেশ পরিচিত মুখ ডোনাল্ড লু। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে ও পরে ডোনাল্ড লু দুই দফায় বাংলাদেশ সফর করেন।

লুর সময়কালে পাকিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল ছিল। পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর আঁতাতে ইমরান খানের সরকারের পতনের পর থেকেই ডোনাল্ড লু দেশটির রাজনৈতিক আলোচনার বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছিলেন।

২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পরিচালনাকারী ব্যুরোর দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রদূত এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আলবেনিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০২২ সালের মার্চে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগের তীর ছোড়েন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।

ইমরান খান তখন বিশেষ করে ডোনাল্ড লুর নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, লু তার সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় জড়িত ছিলেন।

পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ডোনাল্ড লু।

লু ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খানের মধ্যকার কথোপকথনকে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন ইমরান খান।

ওই কথোপকথন তখন ‘সাইফার টক’ ও ‘সাইফার গেইট’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মাজিদ তখন ইসলামাবাদে ইমরান খানের সরকারের কাছে একটি গোপন নথি পাঠিয়েছিলেন। আর সেই নথির বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে এনেছিলেন ইমরান খান।

নথিতে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটনের হুমকির প্রমাণ আছে বলে দাবি করে পিটিআই।

এমন প্রেক্ষাপটে ইমরান খান রাষ্ট্রীয় গোপনীয় এই নথি নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং এর বিষয়ব্স্তু জনসম্মুখে তুলে ধরেছিলেন।

সাইফারটি (তারবার্তা) ছিল রাষ্ট্রদূত মাজিদের সঙ্গে ডোনাল্ড লুর বৈঠক সম্পর্কিত। ইমরান তখন দাবি করেছিলেন, তিনি সাইফারের বিষয়বস্তু পড়েছেন। তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে পাকিস্তানের সবকিছু ক্ষমা করা হবে বলে তাতে উল্লেখ আছে।

ইমরানের দাবির প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পিটিআই কর্মীরা লুর পদত্যাগ দাবি করে তখন। তারা তার বিরুদ্ধে ইমরান খানকে অপসারণের উদ্দেশ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করার অভিযোগ তোলে।

পিটিআইর এমন দাবি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ডেমোক্র্যাট সরকার পিটিআইর অভিযোগ অস্বীকার করে ভিত্তিহীন বলে।

ডন বলছে, চুপিসারে ডোনাল্ড লুর এই বিদায়কে প্রতীকী জয় হিসেবে দেখতে পারে পিটিআই।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলো বলছে, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের, এমনকি ডেপুটি ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারিদেরও পদত্যাগ করতে বলেছে। ট্রাম্প তার রাজনৈতিক লক্ষ্য অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে চান।

ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থাকবে বলে লিখেছে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন।

পাকিস্তানের মিডিয়াগুলো এই অধ্যায়কে ‘সাইফার গেইট’ নামে চিহ্নিত করেছে। আর একে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রমাণ হিসেবেও দেখা হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ডোনাল্ড লু।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে মে মাসে বাংলাদেশ সফরে আসেন লু।

সে সময় তার বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বিবৃতিতে বলেছিল, “সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে।”

ডোনাল্ড লুর সেই সফরের আগে, জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ২০২৩ সালে ২২ সেপ্টেম্বর। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব-পুলিশের ১০ কর্মকর্তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

২০২৩ সালে জানুয়ারিতেও ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেছিলেন।

তখন তার সফরের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন। পরে তিনি শর্তহীন সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেন।

নির্বাচনের পরেও যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ বলে প্রতিক্রিয়া জানায়। এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করলেও সেটা আর আগায়নি। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।

সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডোনাল্ড লু আবার বাংলাদেশে আসেন।

তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, ডোনাল্ড লু ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকারী প্রতিনিধি হিসেবে গেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত