হতাশার গল্প আরও লম্বা হলো, টি-টোয়েন্টিতে না পারার আক্ষেপও বাড়ল। ব্যাটিং ব্যর্থতার আরেকটি উদাহরণ দিয়ে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের হার ৮৬ রানে। ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। স্বাগতিকদের দেওয়া ২২২ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ করেছে ৯ উইকেটে ১৩৫ রান। সর্বোচ্চ ৩৯ বলে ৪১ করেছেন মাহমুদউল্লাহ। সিরিজের শেষ ম্যাচে হায়দরাবাদে যে বাংলাদেশের ভাগ্য ফিরবে এমন ভাবারও সুযোগ নেই।
ভালো উইকেট বা খারাপ, বাংলাদেশ ব্যাটারদের অবস্থার উন্নতি নেই। গোয়ালিয়রে নতুন উইকেটে খারাপ করার একটু ব্যখ্যা তবুও ছিল। নতুন উইকেটে নেমেই বুঝে উঠতে পারেননি শান্তরা। কিন্তু দিল্লিতে রানের উইকেটে সেই ব্যখ্যা দাঁড়ায় না।
দিল্লিতে আগে বোলিং নিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত আগে ব্যাট করায় উইকেটের আচরণও বুঝতে পেরেছেন ব্যাটাররা। তাতে খুব একটা সুবিধা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাটাররা ভালো উইকেটেও রান করতে ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতাই শান্ত-লিটন-হৃদয়দের দিকে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে টি-টোয়েন্টির সামর্থ্যের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ২২১/৯ (২০ ওভার) (নিতিশ ৭৪, রিংকু ৫৩, হারদিক ৩২; রিশাদ ৩/৫৫, মোস্তাফিজুর ২/৩৬, তাসকিন ২/১৬, তানজিম ২/৫০)।
বাংলাদেশ : ১৩৫/৯ (২০ ওভার) (মাহমুদউল্লাহ ৪১, মিরাজ ১৬, ইমন ১৬, লিটন ১৪; নিতিশ ২/২৩, বরুন ২/১৯)। ফল : ভারত ৮৬ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : ।
গড়ে ওঠা জুটিটাও দাঁড়াল না
বাংলাদেশ দলের জন্য জুটি দাঁড় করানো এক পাহাড় অতিক্রম করার সমান। গোয়ারিয়র থেকে দিল্লি ইনিংসে বড় জুটি নেই একটিও। মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদি মিরাজ মিলে সতর্ক খেলে একটি জুটি গড়তে চলেছিলেন। পাওয়ার শটের অভাবে তাও শেষ হলো ৩৪ রানে।
১৬ বলে ১ চারে ১৬ রানে ফিরিছেন মিরাজ। রিয়ান পরাগের বলে লং শট খেলতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়েছেন। মিরাজ। তার পরপরই আউট হলেন জাকের আলিও। মায়াঙ্ক যাদবের বলে পুল শট করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ আউট তিনি। ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
১০ ওভারেই ম্যাচের বাইরে বাংলাদেশ
লক্ষ্য ২২২ অথচ ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৭০। মাহমুদউল্লাহ ১০ ও মিরাজ ১৫ রান অপরাজিত।
অথচ শুরুর ৬ ওভারে ৩ উইকেট ৪৫ রান করা ভারত পরের ১৫ ওভারে তুলেছে ১৭৬ রান। ওই সংগ্রহ ওভার প্রতি প্রায় ১২ রান করে নিয়েই বানিয়েছে ভারত ব্যাটাররা। দিল্লির ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ভারত তাদের কাজটা করেছে ঠিকই ব্যর্থ হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা।
ওভারপ্রতি ১১ রানের প্রয়োজনীয়তায় নেমে এখন পর্যন্ত ওভারপ্রতি ৭ রান করে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের বাকি অংশে বিশেষ কিছু না করলে আরও একটি অসহায় হার অপেক্ষা করছে সফরকারীদের জন্য।
পাওয়ার প্লে-তে ৩ উইকেট নেই
শুরুটা ভালো হয় কিন্তু সেই শুরু চট করে হারিয়ে পথ খুঁজতে হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই নিয়মের আর পরিবর্তন হয় না। দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও তাই হলো।
তিন ওভারের মধ্যে বিনা উইকেটে ২০ রান তুলে ভালো শুরু করা বাংলাদেশ পরের তিন ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে পথ হারালো। পারভেজ হোসেন ইমন ৩ চারে ঝড়ো শুরু করেছিলেন। আর্শ্বদীপ সিংযের বলে ১২ বলে ১৬ করে ফিরলেন।
এক ছক্কা মেরে শুরু করা লিটনের ওপর বড় ভরসা ছিল যে আর হয়তো কিছু করবেন। কিন্তু বরুণ চক্রবর্তীর নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড হয়ে ১১ বলে ১৪ রানে ফিরলেন। নাজমুল শান্ত করেছেন ২ চারে ৭ বলে ১১। এমন শুরুগুলো আর বড় ইনিংস হয় না।
তাই বাংলাদেশের আক্ষেপও শেষ হয় না। ২২২ রানের পেছনে ছুটে ৬ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৪৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য বাংলাদেশের চাই ২২২
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে দিন কাটালেন রিশাদ হোসেন। ৩ ওভারে দিয়েছিলেন ৪৭ রান। ওই অবস্থায় শেষ ওভারে তাকে আক্রমণে দেখা একটু অবাক হওয়ারই ছিল। কিন্তু শেষ ওভারেই ঘুরে দাঁড়ালেন রিশাদ। ওভারে তিন উইকেট নিয়েছেন।
হারদিক পান্ডিয়া, বরুন চক্রবর্তী ও আর্শদীপকে আউট করেছেন এ লেগ স্পিনার। তাতে অবশ্য রিশাদের জন্য লজ্জার দিন কাটেনি। রিশাদ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে টি-টোয়েন্টি বোলিং করেছেন এই ম্যাচে। সর্বোচ্চ ৫৫ রান দিয়েছেন তিনি। এক ওভারে তিন ছক্কায় ২৪ রানও খরচ করেছেন।
রিশাদ শুধু নয়, স্পিন-বা পেস সব বোলারকেই বেধরক পিটিয়ে ৯ উইকেটে ২২১ রান করেছে ভারত। পুরো ইনিংস জুড়েই তাদের ব্যাটারদের আইপিএল প্রদর্শনী ছিল। ভারতের ম্যাচ নয় মনে হচ্ছিল দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ চলছে দিল্লির মাঠে।
শুরুর পাওয়ার প্লেতে ৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভালো শুরু করেছিল বাংলাদেশ। নিতিশ কুমার রেড্ডি ও রিংকু সিং মিলে সেই ধাক্কা দারুণ ভাবে সামাল দেন। দুজনে মাত্র ৪৯ বলে করেন ১০৮ রান। নিতিশ ৭ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৪ বলে ৭৪ ও রিংকু ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ২৯ বলে করেছেন ৫৩ রান।
বাংলাদেশের হয়ে ৩টি রিশাদ ও ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন, সাকিব ও মোস্তাফিজুর।
দুইশো হয়ে গেল ভারতের
দিল্লি স্টেডিয়ামের নতুন ঐতিহ্য ধরে রেখে টি-টোয়েন্টিতে আরও একবার দুইশো রান হয়ে গেল এক ইনিংসে। বাংলাদেশ বোলারদের ওপর চার-ছক্কার বৃষ্টি ঝড়িয়ে ১৯তম ওভারেই দুইশো করল ভারত।
দিল্লিতে সবশেষ ৫টি আইপিএল ম্যাচের চারটিতেই দুইশো রান করে হয়েছে। এক ম্যাচের দুই ইনিংসে এর চেয়ে কম রান ছিল। এবার আন্তর্জাতিক ম্যাচেও রানের ফোয়ারা দেখা গেল।
দিল্লি মাতিয়ে ফিরলেন রিংকু
ভারতের গ্যালারীতে লিজেন্ড ক্রিকেটারদের নাম ধরে স্লোগান দেওয়ার রেওয়াজ আছে। সেখানে শচিন-শচিন, ধোনি-ধোনি এবং কোহলি-রোহিতদেরও নাম শোনা গেছে। এবার দিল্লির গ্যালারী গর্জে উঠলো রিংকু -রিংকু আওয়াজে।
আসলে দিল্লিতে রিংকু বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ইনিংস খেলেছেন তাতে তার নামে উল্লাস ধ্বনী দেওয়াই যায়। মাত্র ২৯ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কার ঝড়ো ইনিংসে ভারতের বড় রানের সুর বেঁধে দিয়েছেন তিনি। নিতিশ কুমার রেড্ডির সঙ্গে ১০৮ রানের জুটি গড়েছেন।
এমনিতে খুব একটা ব্যাট করার সুযোগ হয়না রিংকুর। আইপিএলেও শেষের দিকে কয়েক ওভার পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় ফিফটি তুলে নিলেন।
রিংকু ফিরলেও ভারত বেশ ভালো অবস্থানে আছে। ১৭ ওভারে ৫ উইকেটে তুলেছেন ১৮৫ রান।
ভয়ঙ্কর জুটি থামালেন মোস্তাফিজ
১০৮ রানের বিশাল জুটি। মাত্র ৮ ওভারেই এ রান তুলে নিয়েছেন নিতিশ কুমার রেড্ডি ও রিংকু সিং। উইকেট টিকে থাকলেও ভারতের রান দুইশো ছাড়িয়ে কত হতে পারতো তা ভাবাও যায় না।
এই ভয়ঙ্কর জুটি থামালেন মোস্তফিজুর রহমান। মাত্র ৩৪ বলে ৭ ছক্কা ও ৪ চারে ৭৪ রান করা নিতিশকে থামিয়েছেন কাটার ডিলেভারিতে। ১৩.৩ ওভার শেষে ১৪৯ রান ভারতের।
এক ওভারে ২৪ দিলেন রিশাদ
প্রথম পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট নিয়ে ভারতের রান আটকে রেখেছিল বাংলাদেশ। পরের ৫ ওভারে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন দুই তরুণ নিতিশ কুমার রেড্ডি ও রিংকু সিং।
মাত্র ২৭ বলে দুই পাওয়ার হিটারের জুটি ৫৬ রানের। দশম ওভারে রিশাদ হোসেনকে তিন ছক্কা ও একটি চার মেরেছেন দুজনে। মোট ২৪ রান দিয়েছেন রিশাদ। তার ক্যারিয়ারে এক ওভারে দেওয়া সর্বোচ্চ রান। এতে ১০ ওভার শেষে ভারতের রান ৩ উইকেটে ১০১।
সূর্য এবার আলো ছড়াতে পারেননি
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারত অধিনায়কের ব্যাট তার নামের মতোই হেসেছিল। দলকে দ্রুত জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে তার ইনিংস দারুণ কাজে লাগে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে একেবারে ব্যর্থ সূর্যকুমার।
মোস্তাফিজুর রহমানের কাটারে পরাস্ত হয়েছেন তিনি। মিডঅফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১০ বলে ৮ রান করে। এতে ৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৫ রান তুলেছে ভারত। আগের ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে এসেছিল ৭১।
অভিষেক শর্মার স্টাম্প উড়িয়ে দিলেন সাকিব
একের পর এক চার মেরেই যাচ্ছিলেন অভিষেক শর্মা। লাইনের বলগুলোকেও ড্রাইভ করে চার বানিয়ে নিচ্ছেন। বোলারদের জন্য এমন চিত্র হতাশার।
টানা দুই চার হজমের পর দুর্দান্ত এক ডিলেভারিতে অভিষেকেই উইকেট উপরে দিলেন সাকিব। দুই চার হজমের প্রতিশোধ নিলেন তিনি। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ১১ বলে ১৫ রান করে ফিরলেন অভিষেক।
টানা দুই ওভারে উইকেট হারিয়ে তৃতীয় ওভার থেকে ২ উইকেট ২৫ ভারতের।
দ্বিতীয় ওভারে প্রথম উইকেট
মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম ওভারে উড়ন্ত সূচনা করেছিল ভারত। সঞ্জু স্যামসন ও অভিষেক শর্মা মিলে ১৫ রান নিয়েছেন এক ওভারেই। তাদের ব্যাটে ২ ওভারেই ১৭ রান উঠে গেছে।
এই জুটিতে থামিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। সঞ্জু স্যামসনকে মিডঅফে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানিয়েছেন তিনি। তাসকিনে অফস্ট্যাম্পের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন সঞ্জু। হালকা বাউন্স হওয়া বল তার ব্যাটে হাওয়ায় ভাসে। ৭ বলে ১০ রান করে ফিরেছেন এই ব্যাটার।
টস জিতে বোলিং নিল বাংলাদেশ
ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে বোলিং নিয়েছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবার টস জেতার সঙ্গে সঙ্গেই আগে বোলিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে গোয়ালিয়র স্টেডিয়ামের নতুন উইকেটে আগে ব্যাটিং করতে হয় বাংলাদেশকে। নতুন উইকেট কেমন আচরণ করে তা বোঝার লড়াইটা ম্যাচের মধ্যে করতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। সেই লড়াইয়ে ডাহা ফেল মেরেছেন শান্তরা। ‘
কিন্তু পরের ইনিংসে ভারত ব্যাটাররা দারুণ খেলেছেন। তাদের দেখে মনেই হয়নি গোয়ালিয়রের নতুন স্টেডিয়ামে উইকেটও নতুন। দিল্লিতে সেই ঝুঁকি নিতেই চাননি শান্ত। তাই টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিব একাদশে ফিরেছেন শরিফুল ইসলামের জায়ড়ায়। ভাবে ভারতও প্রথম ম্যাচের একাদশ নিয়েই নামছে।
বাংলাদেশ : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন দাস, পারভেজ হোসেন ইমন, তাওহিদ হৃদয়, মোহাম্মদ মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, তানজিম সাকিব, জাকের আলি।
ভারত : সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), সঞ্জু স্যামসন, অভিষেক শর্মা, নিতিশ রেড্ডি, হারদিক পান্ডিয়া, রিংকু সিং, ওয়াশিংটন সুন্দর, বরুন চক্রবর্তী, আর্শদীপ সিং, মায়াঙ্ক যাদব।