Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

সাগরে দানা বাঁধছে ‘দানা’ : যাচ্ছে কোন দিকে, আঘাত কখন

উইন্ডিডটকমে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’।
উইন্ডিডটকমে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’।
[publishpress_authors_box]

বঙ্গোপসাগরে মঙ্গলবার থেকেই সৃষ্টি হয় গভীর নিম্নচাপের। বুধবার তা ‘দানা’ নাম নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।

ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। তখন এতে বাতাসের শক্তি উঠতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

উইন্ডিডটকম জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ এখন যে অবস্থায় আছে সেভাবে থাকলে তা বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর উপকূলে পৌঁছবে। এটি মূলত ভারতে ওপরে আছড়ে পড়বে। তবে বাংলাদেশের উপকূলে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে।

দানার গতিপথ

গত ছয় ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ‘দানা’ উড়িষ্যার পারাদ্বীপ উপকূল থেকে প্রায় ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়বে। এসময় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ভারতের পুরি ও সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উত্তর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তখন বাতাসের গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর আবহাওয়া ও মহাসাগরবিজ্ঞান কমান্ডের তথ্য অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৮ ফুট হতে পারে।

কলকাতা আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে হাওয়ার গতি বেড়ে ১২০ কিলোমিটার হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ, সুন্দরবন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার। এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং বাঁকুড়ায় শুক্রবার পর্যন্ত ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে।

কলকাতা আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, বুধবার বিকেল থেকে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কলকাতায়। সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিও হতে পারে। একই পূর্বাভাস রয়েছে হাওড়া, হুগলি এবং ঝাড়গ্রামেও। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। 

দানাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কলকাতায় জারি হয়েছে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির কমলা সতর্কতা। জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া, ময়ূরভঞ্জ, কটক, ভদ্রক ও বালেশ্বরে জারি হয়েছে অতিভারি বৃষ্টির লাল সতর্কতা।

তবে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার ঘূর্ণিঝড়ের যে সম্ভাব্য গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে দানা বৃহস্পতিবার দুপুরে উড়িশ্যার বালাসোর এলাকা দিয়ে উপকূলে উঠে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর আবহাওয়া ও মহাসাগরবিজ্ঞান কমান্ডের তথ্য অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে না। তবে এর প্রভাব বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবনের একাংশ রয়েছে। এর প্রভাবে খুলনা ও বরিশাল উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে।

বুধবার বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ নিয়ে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বুধবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।

অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

দানার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জায়গায় আকাশ মেঘলা। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির পরিমান বাড়তে পারে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় যখন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে তখন এই ঘূর্ণিঝড়ের “গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার” হতে পারে।

যেভাবে নাম হলো ‘দানা’

সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দানা’। কাতারের দেওয়া এই নামের অর্থ, অতি সুন্দর ও মূল্যবান মুক্তা। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) আরএসএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করছে।

ইংরেজি বর্ণমালা কিউ, এক্স, ওয়াই ও জেড-এই ৫টি অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার ২১টি অক্ষর ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে করা হয়। তবে কোনো বছর ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে নামগুলোর সঙ্গে গ্রিক বর্ণমালা যুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত