কানপুরের স্টেডিয়ামে ভারতের সামনে জয়ের জন্য ৯৫ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। দুই সেশনের খেলা বাকি ছিল। রান তাড়ায় শুরুতে দুই উইকেট হারালেও খুব একটা ভাবনায় পড়তে হয়নি তাদের।
তরুণ ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল আর বিরাট কোহলি ঠিকই ভারতকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। কানপুরের বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টে খেলা হলো সব মিলিয়ে আড়াই দিন। স্বাগতিকদের দারুণ বোলিং-ব্যাটিং আর আগ্রাসী পরিকল্পনাতেই ভারত আরও একবার প্রমাণ করল কেন তারা টেস্টে বিশ্ব সেরা। কানপুরে বাংলাদেশকে হারাল ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এর আগে চেন্নাই টেস্টেও বাংলাদেশকে হারতে হয়েছিল ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে। দুই ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হলো নাজমুল হোসেন শান্তরা।
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মেহেদি হাসান মিরাজ বলেছিলেন দ্বিতীয় দিন যতটা সম্ভব ব্যাটিং করতে চায় বাংলাদেশ। সেই চেষ্টায় কানপুর টেস্টের পঞ্চম দিন প্রথম সেশনও পার করতে পারেনি বাংলাদেশ। এক সেশনেই ৮ উইকেট হারিয়ে কানপুর টেস্টে হারের ক্ষণ গুনছে সফরকারীরা।
২৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের দিন শুরু হয়। ওপেনার সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৫০ ছাড়ানো জুটি বাদে আর লড়াই দেখাতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দুই সেশন খেলার লক্ষ্যটাও তাই পূরণ হতে পারেনি। পঞ্চম দিন ১৪৬ রানে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
লাঞ্চ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের শেষ ওভারে তাইজুল ইসলামকে এরবিডব্লিউ আউট করেন বুমরাহ। শেষ উইকেট বাকি, তাই লাঞ্চের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৩০ মিনিট। খালেদ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে এই ৩০ মিনিট পার করেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু বর্ধিত সময়ের শেষ ওভারে নিজেই বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে লড়াইয়ের শেষ টানেন। ৬৩ বলে ৩৭ রান করেছেন মুশফিক।
ভারতকে জয়ের জন্য মাত্র ৯৫ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে টি-টোয়েন্টি খেলা স্বাগতিকদের জন্য দুই সেশনে এই রান করা খুব সহজ ব্যাপার।
শেষ ইনিংসে শূন্য সাকিবের!
দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলা না হলে কানপুরে সাদা পোষাকে শেষ ম্যাচ খেলছেন সাকিব। শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসটা তার জন্য ভুলে যাওয়ার মতো হয়েছে। উইকেটে মাত্র ২ বল টিকেছেন। করেছেন ০ রান।
রবীন্দ্র জাদেজার সাধারণ একটি বলে রক্ষণাত্মক খেলতে চলেছিলেন সাকিব। কিন্তু ঠিকঠাক ডিফেন্সও করতে পারেননি। মিডলস্ট্যাম্পের বলে পুশ করবেন না ডিফেন্স করবেন সেই দ্বিধা থেকে শেষে পুশ করে বল তুলে দিলেন জাদেজার হাতে। বাজে শট সিলেকশনে সহজ ক্যাচ দিলেন জাদেজাকে।
বাংলাদেশ ৯৪ রানে হারালো ৭ উইকেট। লিড মাত্র ৪২ রানের।
ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের প্রতিরোধ
৫৫ রানের জুটিতে ভারতকে অপেক্ষায় রেখেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলাম। সেই অপেক্ষা বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। কানপুর টেস্টের পঞ্চম দিন পানি পানের বিরতির পর টানা দুই ওভারে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন দুজন।
দুই ব্যাটারের বিদায়ের কিছু পরেই ফিরলেন লিটন দাসও। জাদেজার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মাত্র ১ রান করে। ৯১ রানে ৩ উইকেটে থাকা বাংলাদেশ তিন রান করতে হারালো তিন উইকেট। প্রথম সেশনেই ভেঙে পড়ল সফরকারীদের প্রতিরোধ।
ভারতের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি ওপেনার হিসেবে হাফসেঞ্চুরি করে অন্যরকম মাইলফলক গড়েছেন সাদমান। ১০১ বলে ১০ চারে ৫০ রানে বড় ইনিংস খেলার ছাপও ছিল। কিন্তু মনসংযোগ আর বাড়াতে পারেননি। হাফসেঞ্চুরির পরই আকাশ দ্বীপের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। এদিকে ১৯ রান করা শান্ত সরাসরি বোল্ড হয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজার বলে।
শান্ত-সাদমান জুটির পঞ্চাশ
ভারতের হতাশা বাড়িয়ে দারুণ জুটি গড়েছেন সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫৩ রানের জুটি গড়ে এগিয়ে চলছেন দুই ব্যাটার। জুটিতে সাদমানের রাত ৩২ ও শান্তর ১৯। কানপুর টেস্টের প্রথম ঘন্টা শেষে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে তুলেছে ৩ উইকেটে ৮৯। লিড ৩৭ রানের।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রায় ৩ দিন বৃষ্টিতে পণ্ড হওয়ায় ম্যাচ নেমে আসে দুই দিনে। দুই টেস্টে জয়ের আশায় থাকা ভারতের জন্য যা দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল। তাই ম্যোচে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৩৩ রানের জবাবে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট করে স্বাগতিকরা। মাত্র ৩৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তোলে তারা।
৫২ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে আমন্ত্রণ জানায় ভারত। ৩৬ রানে ৩ হারানোর পর সাদমান-শান্তর ব্যাটে জুটি গড়েছে সফরকারীরা। যা পঞ্চম দিন বাংলাদেশকে দ্রুত অলআউট করার লক্ষ্যে থাকা ভারতের জন্য হতাশার কারণ। এই ম্যাচ না জিতলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৪ পয়েন্ট হারাবে ভারত। উল্টোদিকে বাংলাদেশের জন্য ৪ পয়েন্ট পাওয়া দারুণ ব্যাপার হবে।
সুইপ করতে গিয়ে আউট মুমিনুল
আগেরদিন সুইপ করে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন। ওই ইনিংসে অনেকবার সুইপ শটে বাউন্ডারী আদায় করে নেন মুমিনুল হক। সেইসব শটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ।
কানপুর টেস্টের পঞ্চম দিনও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সুইপ করেছিলেন মুমিনুল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার শটের জায়গাতেই ছিলেন ফিল্ডার। তাই পঞ্চম দিন সকালে মাত্র ২ রানে আউট আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান।
মুমিনুলের আউটে সকালেই ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারাতে হয় বাংলাদেশকে।