Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
প্যারিস অলিম্পিক

১৮ কোটির জনসমুদ্রে তৃতীয় সাগর, এরপরও..

সাগর ইসলাম বিশ্বকাপ আর্চারিতে ভয়াবহ ব্যর্থ। প্রথম রাউন্ডই পার হতে পারলেন না।
সাগর ইসলাম বিশ্বকাপ আর্চারিতে ভয়াবহ ব্যর্থ। প্রথম রাউন্ডই পার হতে পারলেন না।
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাগর ইসলামকে নিয়ে নেই চোখে পড়ার মত কোনও উন্মাদনা। যতটা উন্মাদনা রয়েছে বাংলাদেশ ও নেপালের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে। অথচ দুটো ঘটনাই একই দিনে ঘটেছে।

সোমবার সকালে সেন্ট ভিনসেন্টে নেপালকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সন্ধ্যায় তুরস্কে অলিম্পিক গেমসের কোয়ালিফাইং ইভেন্টে চেক প্রজাতন্ত্রের অ্যাডাম লিকে হারিয়ে প্যারিস অলিম্পিকের টিকিট নিশ্চিত করেন সাগর ইসলাম। পরে ফাইনালে উজবেক আর্চারের কাছে হেরে রুপা জিতেছেন। 

রুপার চেয়ে বড় ঘটনা হলো, সাগরের সরাসরি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের টিকিট পাওয়া। অনেকটা নীরবেই সরাসরি অলিম্পিক অংশগ্রহণের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন বিকেএসপির এই আর্চার। বাংলাদেশের এই ইতিহাস মোটেও দীর্ঘ নয়, এর আগে মাত্র দুজন সফল হয়েছিলেন। অলিম্পিকে নিজের যোগ্যতায় সরাসরি খেলেছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও আর্চার রোমান সানা।

বাংলাদেশি গলফার সিদ্দিকুর রহমান সরাসরি খেলেন অলিম্পিকে।

বিশ্ব গলফ র‌্যাঙ্কিংয়ে ভাল অবস্থানের সুবাদে সিদ্দিকুর ২০১৬ রিও অলিম্পিকে খেলেন সরাসরি। এরপর ২০১৯ সালে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে রোমান সানা পেয়েছিলেন ২০২১ টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার টিকিট।

সাধারণত যা হয়-অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ চেয়ে থাকে আইওসির দেওয়া ওয়াইল্ড কার্ডের দিকে। এই দয়ার কার্ডে অ্যাথলেটের সরাসরি কৃতিত্ব থাকে না। অথচ এটি পেলেই ধন্য হয়ে যান অনেক অ্যাথলেট। সেখানে সাগর বড় ব্যতিক্রম, কোয়ালিফাইং রাউন্ড উতরে যাবেন প্যারিস অলিম্পিকে। 

অন্যদের সঙ্গে সাগর ইসলাম। অলিম্পিকের বাছাইয়ে টিকিট হাতে পাওয়ার পর।

বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করা কতটা সম্মানের সেটা শুধু একজন অ্যাথলেটই অনুধাবন করতে পারেন। এই অর্জনের উন্মাদনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সেভাবে নেই বলে হতাশ এস এ গেমসে সোনাজয়ী শুটার শারমিন আক্তার রত্না, “ ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৩ জন একটা বৈশ্বিক আসরে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এটার সঙ্গে অন্য যে কোনও কিছুর তুলনা চলে না। আমাদের দেশের মানুষেরা ক্রিকেটের বাইরে যেন কিছু বুঝতে চায় না। যদি অলিম্পিক থেকে কেউ একটা পদক নিয়ে আসে তারপরও দেখা যাবে বাংলাদেশের মানুষের এই নিয়ে মাতামাতি নেই। কারণ তারা বুঝবেই না অলিম্পিক গেমসটা আসলে কি।” সমস্যাটা হলো, খেলার জনপ্রিয়তায়। চেনা অলিম্পিক ইভেন্টগুলোও এদেশে জনপ্রিয় নয়। সেখানে আর্চারি তো অনেক পিছিয়ে, সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত।  

সাগরের এই অলিম্পিকের কোটা প্লেস অর্জন যে অনেক বড় পাওয়া সেটা মানছেন কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ। রোমান সানার পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি আর্চার এই ইতিহাস গড়েছেন। জার্মান কোচ এর পুরো কৃতিত্ব বাংলাদেশের সব আর্চারকেই দিচ্ছেন। তুরস্ক থেকে মুঠোফোনে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি জানান, “অবশ্যই এটা বাংলাদেশের আর্চারির জন্য অনেক বড় কিছু। ছেলেরা অলিম্পিকে খেলার জন্য এতদিন কঠোর পরিশ্রম করেছে। আর সেই পরিশ্রমের ফল পেয়েছে সাগর। এটা পুরোটাই টিম ওয়ার্ক। তিনজন ছেলে পরিশ্রম করেছে। সেখান থেকে ব্রেক থ্রু পেয়েছে সাগর।” এর আগে এই কোচের অধীনেই রোমান সানা অলিম্পিক-যাত্রার পথ সুগম করেছিলেন।

সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন রোমান সানা। ছবি: সংগৃহীত।

আগামী ২৬ জুলাই শুরু হবে অলিম্পিক গেমস। এত অল্প সময়ে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা কঠিনই হবে সাগরের। ফ্রেডরিখ নিজেও সেটা বুঝতে পারছেন, “আমরা প্রস্তুতির মধ্যেই যদিও রয়েছি। এখানে বিশ্বকাপে আসাটাও সেই প্রস্তুতির অংশ। তবে অলিম্পিকের জন্য আমাদের আরও বেশি সময় দরকার ছিল।”

ভিয়েতনাম, কিউবা, চেক প্রজাতন্ত্র, উজবেকিস্তান এবং বাংলাদেশ অলিম্পিকের কোটা প্লেস পেয়েছে সোমবার। বিকেএসপির আর্চার সাগর এই দিনটার জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন। ওয়ার্ল্ড আর্চারিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ‍রুপাজয়ী বলেন, “এটা পেতে অনেক পরিশ্রম করেছি। অনেক লড়াই করেছি। কোনও ছুটিতে বাড়ি যাইনি। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। প্রচুর প্র্যাকটিস করেছি। আমি এই দিনটির জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম। আজ আমি খুব খুশি।”

হাকিম আহমেদ রুবেলের সঙ্গে সাগর ইসলাম।

তুরস্কের কন্ডিশনটা ঠিক পক্ষে ছিল না সাগরের। যে ম্যাচ জিতে কোটা প্লেস নিশ্চিত করেছেন সেটা খেলতে অনেক কষ্ট হয়েছিল সাগরের, “খুবই কঠিন ম্যাচ ছিল। বাতাস ছিল প্রচুর। আমি বেশ কিছু বাজে শটও খেলেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি পেরেছি।” ১৮ কোটির জনসমুদ্রে তৃতীয় সফল অ্যাথলেট সাগর, যিনি সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নেবেন। তার নিস্তরঙ্গ জীবনে এটা বড় উপলক্ষ হলেও এর ঢেউ লাগেনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে।    

রোমান সানার মতোই সাগর নিজের যোগ্যতায় অলিম্পিকের চাবি খুঁজে নিয়েছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় আর্চার হিসেবে অলিম্পিকে যাচ্ছেন যিনি। এবার পদক মঞ্চে চোখ সাগরের, “অবশ্যই আমি অলিম্পিকে যেতে পেরে গর্বিত। আশা করি এই সুযোগ প্যারিসে কাজে লাগিয়ে পদক মঞ্চে উঠতে পারব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত