কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড় থেকে অপহৃত তিন বনকর্মীসহ ১৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদার পশ্চিমের গহীন পাহাড় থেকে এদের উদ্ধার করেন পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা। তাদের সহযোগিতা করেন বনবিভাগের কর্মী ও স্থানীয় জনতা।
সোমবার সকালে পাহাড়ে গাছের চারা রোপন করতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন এই ১৮ জন।
তবে সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরে অপহৃত অপর নয় জনকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বনবিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ জানান, হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া পাহাড়ে বনবিভাগের জমিতে গাছের চারা রোপন করতে গিয়ে বনকর্মি সহ ১৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। সেদিন রাতেই মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারিরা ভুক্তভোগি পরিবারগুলোকে ফোন করেছিল বলে খবর পাওয়া যায়।
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, “উদ্ধার অভিযানে অপহরণে জড়িত ২ জনকে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপহরণ চক্রটিও শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।”
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, উদ্ধার ব্যাক্তিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তখন বিস্তারিত জানা
এছাড়া মঙ্গলবার সকাল ৮ টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে দুইটি অটোরিকশা থামিয়ে চালকসহ ৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শামলাপুর সিএনজি অটোরিকশার লাইনম্যান মো. আবদুর রহিম।
তিনি বলেন, “সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে হোয়াইক্যং থেকে আসা শামলাপুরগামী দুটি সিএনজি অটোরিকশা হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে পৌঁছালে ঢালা থেকে ডাকাতদলের সদস্যরা দুটি সিএনজির চালকসহ আনুমানিক ৮ জনকে অপহরণ করেছে বলে জানা গেছে। তবে অপহৃতদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।”
এ বিষয়ে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা জানিয়েছেন, অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কতজন অপহরণ হলেন সেটার সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। তবে সিএনজি দুইটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাত ১১ টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নেরবড় ডেইল এলাকার বাসিন্দার নাজিম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানান বাহারছড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাস্তার মাথা নিজ মুদির দোকান থেকে জসিমকে অপহরণ করে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যায়। অপহরণের পর এখনও সন্ত্রাসীদের পক্ষে কোন যোগাযোগ করা হয়নি।”
জসিমকে উদ্ধারেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা।
হ্নীলা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করে বলেন, “পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এরপর মুক্তিপণ আদায় করে ধরে নিয়ে যাওযা লোকজনকে ছেড়ে দেয়। সন্ত্রাসীদের দাবি করা টাকা না ফেলে অপহৃরিতদের নানান ধরনের নির্যাতন করা হয়। এলাকার লোকজন অপহরণ আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।”
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, উদ্ধার ১৮ জন এবং অপহৃত থাকা ৯ জন ছাড়াও গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯জন রোহিঙ্গা নাগরিক।
অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।