গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার কোরবান শেখ হিল্লোল (৩৫) এবং মো. শরীফ (২৭) জুলাই আন্দোলনে আহত ছিলেন। তবে হাসপাতালে ভর্তি থেকেই গত ৪ জানুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের কর্মসূচিতে শহীদ মিনারে গিয়েছিলেন তারা।
ওই দিন সেখানে নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হোসেনের ওপর হামলা হয়। সেই ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন শাহবাগ থানায় মামলা করেন।
সেই মামলার এজাহারে কোরবান ও শরীফ দুজনের নামই আসামির তালিকায় রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে সোমবার ভোররাতে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে বিক্ষোভ শুরু করে গণঅধিকার পরিষদের একদল নেতা-কর্মী। এরপর দুজনকেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারের সময় ওই দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন না। তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে।
অন্যদিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন কোরবান ও শরীফ।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে যাদের অবস্থা ভালোর দিকে, তাদের কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতেও যাচ্ছেন বলে আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
চিকিৎসাধীনরা জানিয়েছেন, কোরবান গত জুলাই মাসে আন্দোলনের শুরুতেই আহত হয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ৪১৬ নং ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কয়েকটি অস্ত্রোপচার হলেও তার চোখে ছররা বুলেট এখনও রয়ে গেছে।
শরীফ গত ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন। তিনি একই ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারও কয়েকটি অস্ত্রোপচার হলেও চোখে এখনও গুলি রয়ে গেছে।
কী ঘটেছিল রাতে
চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আন্দোলনকারী নাম না প্রকাশ করে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, রাত ৩টার দিকে গণঅধিকার পরিষদের ৬০-৭০ জন নেতা-কর্মী হাসপাতালে সামনে আসে। এসময় তাদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক পুলিশও ছিল। তাদের দেখে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীও আসে। পরে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করেন।
এরপর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরীর অনুরোধে কোরবান ও শরীফ স্বেচ্ছায় পুলিশের সঙ্গে থানায় যান বলে জানান আহত ওই তরুণ।
তিনি বলেন, “আহত কাউকে গ্রেপ্তারের জন্য গভীর রাতে হাসপাতালে হানা দেওয়ার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা আমাদের ভাইদের দ্রুত মুক্তি দিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানাই।”
এদিকে আহত কোরবান ও শরীফকে নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের বক্তব্য ভিন্ন রকমের।
রাশেদ খাঁন সোমবার ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “নতুন করে জন্ম নিয়েছে ‘আহত লীগ’। এরা গণঅভ্যুত্থানে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে আহত হয়েছে। এদের প্রতি কিসের সহানুভূতি? প্রকৃত আহতদের উচিৎ এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।”
হাসপাতালে গণঅধিকার কর্মীদের বিক্ষোভের আগে রবিবার রাশেদ আরেক পোস্টে লেখেন, “গণঅভ্যুত্থানে আহতদের পুঁজি করে হাসপাতালে একটি গ্রুপ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এরা গণঅভ্যুত্থানের সময় গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে নাকি বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আহত হয়েছিল, সেটি নির্ণয় করা জরুরি। অসুস্থতার নাটক করে সুস্থ সবল লোকগুলো এখনও জোরপূর্বক হাসপাতালে ভর্তি।
“গতকাল ফারুক হাসানের ওপর শরীফ ও হিল্লোলের নেতৃত্ব ২০-২৫ জন হামলা করেছে। এই গ্রুপটি শহীদ মিনারে হামলা করে আবার চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতালে বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছে।”
পুলিশ কী বলছে
কোরবান ও শরীফ শাহবাগ থানার মামলার আসামি বলে তাদের ওই থানার পুলিশই গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের সময় শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুরও সেখানে ছিলেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে খালিদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাউকে গ্রেপ্তার করিনি আমরা। অভিযুক্ত দুজনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়।”
সোমবার সকালে দুজনকেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয় বলে জানান ওসি।
তবে আদালত ৫০০ টাকা মুচলেকায় দুজনকে জামিন দিলে মুক্তি পান কোরবান ও শরীফ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
কোরবান ও শরীফকে পুলিশ গ্রেপ্তারের সময় হাসপাতালেই ছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী। কোরবান ও শরীফের জামিনের আদেশের আগে তার সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা।
চিকিৎসাধীন দুজনকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রাতে ওই দুজনকে সাময়িক ছাড়পত্র দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।”
গ্রেপ্তারের কারণে তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত হবে কি না- জানতে চাইলে ডা. খায়ের বলেন, “আপাতত তাদের আর কোনও অপারেশনের প্রয়োজন নেই। আমাদের এমন অনেক রোগী আছে, যাদের অপারেশনের পরপরই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের অবস্থাও বর্তমানে এমনটাই।
“তারা এমন একটি স্টেজে রয়েছেন যে হাসপাতাল থেকে সাময়িক দূরে থাকলেও চিকিৎসায় কোনও প্রভাব পড়বে না। এরপরও আমরা তাদের মনিটরিং করব। যেখানেই থাকুক, তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করব।”
আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে দীর্ঘ সময় লাগলে কী হবে- প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “আমি ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি মনিটর করছি, যাতে তারা চিকিৎসার পাশাপাশি আইনি সুরক্ষাও পায়। আমি মনে করি, অভিভাবক হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। আশা করছি, খুব দ্রুতই সব সমাধান হয়ে যাবে।”