Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু

অ্যান্টিভেনম থাকার পরও না পাওয়ার অভিযোগ

ঝালকাঠির আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ঝালকাঠির আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর মধ্যেই ঝালকাঠিতে সাপে কাটার পর দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

তারা অ্যান্টিভেনম নিতে হাসপাতালে গিয়েও তা পাননি। তাদের স্বজনদের অভিযোগ, অ্যান্টিভেনম থাকার পরও তাদের দেওয়া হয়নি।

গত ২৯ জুন ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় সাপে কাটার পর সেলিম আকন নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। সেদিন সকালে সাপ কাটার পর তাকে নেওয়া হয়েছিল আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

কিন্তু সেখানে অ্যান্টিভেনম পাননি তিনি। তার স্বজনদের অভিযোগ, অ্যান্টিভেনম রাখার স্টোররুমের চাবি নেই বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরতরা।

ঘণ্টাখানেক পর সেলিমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়।

এর আগে কাঁঠালিয়াতেই হ্যাপি আক্তার নামে এক নারী সাপের দংশনে মারা যান। আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অ্যান্টিভেনম না পেয়ে তাকেও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে নেওয়া হচ্ছিল। তবে পথেই তিনি মারা যান, দুটি ছোট সন্তান রেখে।

হ্যাপির শ্বশুর হারুন অর রশীদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, গত ১৩ জুন ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বারান্দার জানালা খুলতে গেলে তা পুত্রবধূকে সাপে কামড় দেয়। এরপর তারা দ্রুত তাকে আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়েছিলেন।

“সেখানে যাবার পর বউমাকে ওরা রক্ত দেয়। কিন্তু ইনজকশন ( অ্যান্টিভেনম) দেয়নি। প্রথমেই যদি তাকে ইনজেকশন দেওয়া যেত, তাহলে আমার নয় বছরের নাতনি আর পাঁচ বছরের নাতিটা মা হারা হতো না।”

অ্যান্টিভেনমের কথা বলেছিলেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা ইনজেকশনের কথা বললে তারা একেক সময় একেক কথা বলেন। কেউ বলেন ইনজেকশন আছে, কেই বলে নাই। এরপরই বাধ্য হয়ে আমরা বরিশালের দিকে রওনা হই।”

তবে মুক্তিযোদ্ধা হারুন পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন আমুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জুনের আগেই অ্যান্টিভেনম এসেছিল।

“স্টোরেই ছিল। কিন্তু যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা এটা জানতেনই না। তাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। এরা জীবন নিয়ে খেলা করেছে। এদের বিচার হওয়া উচিৎ,” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন তিনি।

বর্ষাকালে সাধারণত সাপের উপদ্রব বাড়ে। প্রতিবছরেই এই সময়ে সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার গবেষণা থেকে ২০২৩ সালে জানানো হয়, প্রতি বছর দেশে ৪ লাখের বেশি মানুষকে সাপে কাটে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় প্রায় সাড়ে সাত হাজার জনের। এসব ঘটনার ৯৫ শতাংশই ঘটে গ্রামে।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, যেসব সাপের কামড়ে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে, সেসব সাপের কামড়ের পর অ্যান্টভেনম দেওয়া জরুরি। এই প্রতিষেধক সাপের বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

এবছর রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব বাড়ার পর প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিকিৎসালয়গুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সারাদেশের সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে জানান, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিভেনম আছে এবং হাসপাতালগুলোতে তা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তারপর সকাল সন্ধ্যা খোঁজ নিয়ে দেখে, বিভিন্ন এলাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম নেই। গত ২৫ জুন সকাল সন্ধ্যায় ‘রাসেলস ভাইপার : অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা আছে কতটা’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার দুদিন পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেনন, “ভ্যাকসিন নেই রোগী মারা গেছে- দয়া করে মানুষের কাছে এই ভুল তথ্য কেউ দেবেন না। বাংলাদেশের প্রত্যেক হাসপাতালে রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম আছে।”

ঢাকায় বসে সেমিনারে দেওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সেকথা বলার দুদিনের মধ্যেই ঝালকাঠির সালেহ আকন মারা গেলেন অ্যান্টিভেনম না পেয়ে এবং তা হাসপাতালে থাকার পরও।

পুত্রবধূ হারানো হারুন বলেন, “খবরে দেখাচ্ছে সব হাসপাতালে সাপের ইনজেকশন (অ্যান্টিভেনম) আছে। তাহলে সেলিম মারা গেল কেন? তারা বলে চিকিৎসা আছে, তাইলে এইখানে দুইটা মানুষ কেন মারা গেল?”

ঝালকাঠির এই দুটি মৃত্যু নিয়ে স্বজনদের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে সকাল সন্ধ্যা আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাপস কুমার পালের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নজরে আনার পর তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তাই না কি? আমি তো কিছু জানি না। আমাকে তথ্য দেন, আমি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত