Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার নতুন করে তদন্ত হোক, মত হাই কোর্টের

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিনটি স্মরণ করে আসছে আওয়ামী লীগ, তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবছর তাদের কোনও কর্মসূচি ছিল না।
[publishpress_authors_box]

২০ বছর আগে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলাটিতে বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত সবাইকে খালাস দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছে হাই কোর্ট।

বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় গত ১ ডিসেম্বর দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

বৃহস্পতিবার তাদের পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর সেখানে রায়ের পর্যবেক্ষণে নতুন করে তদন্তের বিষয়ে বিচারকদ্বয়ের মতটি পাওয়া যায়।

গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে দেশের ইতিহাসের ‘জঘন্য মর্মান্তিক ঘটনা’ উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে মামলাটি যথাযথ এবং বিশেষজ্ঞ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে আদালত।

মূল রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ কে এম আসাদুজ্জামান, তাতে সম্মতি জানিয়েছেন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন।

আওয়ামী লীগের শাসনকালে দেওয়া বিচারিক আদালতের রায়ে এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু দণ্ডিত ছিলেন।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হাই কোর্টের রায়ে এদের পাশাপাশি দণ্ডিত জঙ্গিরাসহ সব আসামিই খালাস পায়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে গ্রেনেড হামলার পর ‘তদন্তের নামে নাটক’র অভিযোগ ওঠে। তারপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তদন্তের পর ২২ জনকে আসামি করে সিআইডি অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্ত করে। তাতে আসামির তালিকায় যোগ হয় তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম।

সব মিলিয়ে তিনটি সরকার আমলে তদন্তের পর এখন হাই কোর্ট আবার তদন্তের পক্ষে মত জানাল।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “এটা এদেশের ইতিহাসের এক জঘন্য মর্মান্তিক ঘটনা, যেখানে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ বহু মানুষ প্রাণ হারিছেন। নিহতদের আত্মার ন্যায্য বিচারের জন্য এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

“আমরা মনে করি যে এই মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো উচিৎ, যাতে ন্যায় বিচারের জন্য সঠিক প্রশাসনের অধীনে একটি যথাযথ এবং বিশেষজ্ঞ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”

এ পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আদেশে একটি অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে রায়ে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, “এ মামলার দ্বিতীয় তদন্ত সঠিকভাবে না হওয়ায় বিচারের এখতিয়ার ছাড়াই বেআইনিভাবে বিচার হয়েছিল। বিচারকরা আইনগত সব দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছেন যে, অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া বেআইনি হবে।”

অভিযোগের পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়াই বিচারিক আদালতে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল মত দিয়ে রায়ে বলা হয়, “সেই কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারার অধীনে ডেথ রেফারেন্স খারিজ করা হয়। একই সঙ্গে আপিলকারীদের আপিল ও জেল আপিল অনুমোদন করা হলো। কারাগারে থাকা আপিলকারীদের একযোগে মুক্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ নেতা-কর্মী নিহত হয়। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়েছিল সেই হামলায়।

হামলার পরদিনই মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করছিল, পরে ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি পায় তদন্তভার। কিন্তু তখনই জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরেকে সিআইডির আসামি সাজানোর প্রয়াস নিয়ে ওঠে প্রশ্ন।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে তদন্ত মোড় নেয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির তৎকালীন সুপার ফজলুর কবীর। তাতে অব্যাহতি দেওয়া হয় জজ মিয়াসহ বিএনপি আমলে গ্রেপ্তার ২০ জনকে।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর সমাবেশস্থল।

সেই অভিযোগপত্রে জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে বিচারও শুরু হয়। রাজনীতিকদের মধ্যে তখন আসামি ছিলেন কেবল সালাম পিন্টু। তার ভাই জঙ্গি নেতা তাজউদ্দিনও ছিল আসামি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। এরপর সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক অভিযোগপত্রের আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অধিকতর তদন্তের পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল রায়। তাতে এই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দলীয় রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনে হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

রায়ে বিচারক বলেছিলেন, এই গ্রেনেড হামলা ছিল ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ একটি দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’।

বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ জনকে দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। তার মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর, সালাম পিন্টুসহ জঙ্গিরা ছিলেন।

তারেক রহমানসহ ১৯ জনের হয়েছিল যাবজ্জীবন সাজা। ১১ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, যাদের মধ্যে পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন।

ওই রায়ের পর ছয় বছর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এসে হাই কোর্টের রায় হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত