ঢাকার আশুলিয়ায় ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে বন্ধ করা হয়েছে ২১৯ পোশাক কারখানা।
শ্রমিক অসন্তোষে আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোর মধ্যে ১৩৩টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা দেখিয়ে বন্ধ করা হয়েছে বাকি ৮৬টি কারখানা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২১৯টি কারখানা বন্ধের তথ্য জানান আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম।
বৃহস্পতিবার সকালে আশুলিয়ায় বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার কাজে যোগ দেয় শ্রমিকরা। তবে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, টিফিন বিল বৃদ্ধি, সমানুপাতিকহারে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। তখন কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় এদিন সকালে বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তাদের সড়কেও টহল দিতে দেখা যায়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, “বুধবার আমরা শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিতে মাইকিং করেছি। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, সে বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে।
“দাবি-দাওয়া নিয়ে যেসব বিরোধ রয়েছে, তা কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায়, তা নিয়ে কথা হচ্ছে। কলকারখানা অধিদপ্তরে যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, তাদের সঙ্গেও আলাপ–আলোচনা চলছে।”
তবে কারখানা বন্ধের পেছনে মালিকদের দায়ী করছেন শ্রমিক নেতারা। তাদের অভিযোগ, বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মানা হলেও তার প্রয়োগ দেখছে না শ্রমিকরা। কারণ, মালিকদের বড় অংশই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ পরিকল্পিতভাবে উসকে দেওয়া হচ্ছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন বলেন, “শ্রমিকদের দাবি নিয়ে রবিবার তিন পক্ষের বৈঠকে মালিকরা সমঝোতায় আসে। দাবি পূরণে আশ্বাসের ভিত্তিতে পরদিন যখন শ্রমিকরা কারখানা ফিরে যায়, তখন কোনও কারণ ছাড়াই কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
“আশ্বাস অনুযায়ী কী কী পাবে—তা জানতে শ্রমিকরা যখন কর্তৃপক্ষের কাছে যাচ্ছে, তখনই কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। একটি কারখানায় ২০-৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। একটি বন্ধ করলে স্বাভাবিকভাবে বাকিগুলোতে প্রভাব পড়ে।”
এর পেছনে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মালিকদের অনাগ্রহ এবং অসহযোগিতা মূল কারণ। যেসব কারখানা বা এর আশপাশের কারখানায় আন্দোলন হচ্ছে, তার বেশিরভাগেরই মালিক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট।
“তারা অনেকেই মামলার আসামি হয়েছেন বা গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তারা নিজেদের রক্ষার জন্য শ্রমিকদের ব্যবহার করতে চাইছে। যেসব দাবি কারখানায় মিটিয়ে ফেলা যায়, সেসব নিয়ে ইচ্ছা করেই কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। মামলা থেকে বাঁচার জন্য ও রাষ্ট্রকে চাপে ফেলতে এসব কাজ তারা করে থাকতে পারেন।”
সাধারণ শ্রমিকরা উৎপাদনে ফিরে যেতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, “অবিলম্বে দাবিগুলো কারখানা পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে উৎপাদনে ফিরে যেতে চায় শ্রমিকরা। সরকারের এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।”