খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) তিন কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের শান্তি রঞ্জন পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন– সিজন চাকমা, শাসন ত্রিপুরা ও জয়েন চাকমা।
প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ এ ঘটনায় শ্যামল চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করেছে। তবে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বুধবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফ তিন কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, “আজ সকাল ১০টার দিকে নব্য মুখোশ বাহিনীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের শান্তি রঞ্জন পাড়ায় ইউপিডিএফ কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে ইউপিডিএফের তিনজন কর্মী ঘটনাস্থলে নিহত হন।”
বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “এর আগে গত বছর এই সন্ত্রাসীরা পানছড়ির পুজগাঙে বিপুল চাকমাসহ চারজনকে হত্যা করলেও তাদের বিরুদ্ধে সরকার-প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
“গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে হাসিনার আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ বাহিনীর (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ যেমন নেওয়া হয়নি। একইভাবে প্রত্যাহার করা হয়নি হাসিনার আমলে খুন-গুমে জড়িতদেরও। ফলে তারা আবারও একই খুন-খারাবির নেশায় মেতে উঠেছে।”
বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে পানছড়িতে তিন ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যায় জড়িত নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, শেখ হাসিনার আমলে নিয়োজিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।
পাশাপাশি বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলায় ঘোষিত সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে জেলার সকল যানবাহন মালিক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান অংগ্য মারমা।
তবে ট্রিপল হত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিক) কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক দল। আমাদের নেতাকর্মীরা এসবের সঙ্গে জড়িত নয়। এটা ইউপিডিএফ-জেএসএসের (সন্তু লারমা) বিরোধের জেরে ঘটতে পারে।”
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, “আমরা ঘটনার খবর শুনেছি। ঘটনাস্থল অনেক দূরের এলাকা। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
ইউপিডিএফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় গুলি করে ইউপিডিএফের চার নেতাকে হত্যা করা হয়। পানছড়ির চার খুনের দেড় মাসের মাথায় এ বছরের ২৪ জানুয়ারি জেলার মহালছড়ি উপজেলায় আরও দুজনকে হত্যা করা হয়।
এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় দুজন, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে একই উপজেলায় আরও একজন এবং ১৮ মে রাঙ্গামাটিতে দুজনকে হত্যা করা হয়। ১ জুন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা লাগোয়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং ৮ জুন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় আরও একজন খুন হন। ২৭ জুলাই দীঘিনালায় একজন। সর্বশেষ বুধবার পানছড়িতে খুন হলেন আরও ৩ জন।
এ নিয়ে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ইউপিডিএফের ১৭ নেতাকর্মী-সমর্থক খুন হলেন।