সাড়ে তিন মাস পর নিজেদের উপদেষ্টা পরিষদের কলেবর বাড়ালেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই দফায় উপদেষ্টা পরিষদে যোগ হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বর্তমান বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন।
রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন তিন উপদেষ্টাকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ড. ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে সেখ বশির উদ্দিনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পেয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
তবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে কোনও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
নতুন উপদেষ্টারা
মাহফুজ আলম
যে আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে, সেই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসাবে সম্প্রতি মাহফুজ আলমকে তুলে ধরেছিলেন খোদ ড. ইউনূস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলন এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের সন্তান মাহফুজ মাদ্রাসা থেকে আলিম পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনার সময় তিনি কয়েকটি পাঠচক্র পরিচালনা করতেন। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সমকালীন জনমত’ শিরোনামের দুই খণ্ডে প্রকাশিত বইয়ের লেখক তিনি। ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর মাহফুজ আলমকে নিজের বিশেষ সহকারী করেন। পাশাপাশি সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের সদস্য হিসাবেও রয়েছেন তিনি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটক নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এখন পুরোপুরি চলচ্চিত্র নির্মাতা। টিভি নাটকে হাত পাকিয়ে ২০০৪ সালে ব্যাচেলর নামে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। তারপর এই পর্যন্ত ১১টি সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। তার আগে নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র বানিয়েছেন অসংখ্য। নিজস্ব ঢঙে নাটক, চলচ্চিত্র নির্মাণের তাগিদে তিনি তৈরি করেন ‘ছবিয়াল’ নামে একটি সংগঠন। তার এই সংগঠনের সদস্যরা বর্তমান বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মাতিয়ে রেখেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সরব ছিলেন ফারুকী।
সেখ বশির উদ্দিন
সেখ বশির উদ্দিন আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সেখ আকিজ উদ্দিনের ছেলে। আকিজ উদ্দিনের আরেক ছেলে সেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। আকিজ বশির গ্রুপ বর্তমানে ১৮টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, বাথওয়্যার, জুট, পার্টিকেল বোর্ড, ডোরস, প্যাকেজিং, গ্লাস ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ২৫টির বেশি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
৮ আগস্ট শপথ নিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ ১৪ জন। এরপর ১১ আগস্ট দুজন এবং ১৩ আগস্ট একজন শপথ নেন। এই তিনজনের নাম ৮ আগস্টই জানানো হয়েছিল, তবে তারা সেদিন শপথ নিতে উপস্থিত হতে পারেননি।
এরপর ১৬ আগস্ট আরও চারজন শপথ নিলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২১ জনে গিয়ে ঠেকে।
বর্তমান উপদেষ্টারা হলেন- অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক সচিব মো. তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধিকারকর্মী শারমিন এস মুরশিদ, ফারুক–ই–আজম বীরপ্রতীক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সুপ্রদীপ চাকমা, ডা. বিধান রঞ্জন রায়, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আ ফ ম খালিদ হোসেন, ফরিদা আখতার, নুরজাহান বেগম, মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
নতুন তিনজন যুক্ত হওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২৪ জন হলো।
বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে, তার মধ্যে ড. ইউনূসের সরকারের আকারই সবচেয়ে বড়।
তবে তার সরকারের বর্তমান উপদেষ্টাদের তিনজন বাদে বাকি কারও সরকার পরিচালনার কোনও অভিজ্ঞতা নেই।
এদের মধ্যে ওয়াহিদউদ্দিন একাধিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন। হাসান আরিফও এনিয়ে দুই বার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে ২০০৭ সালের ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন সরকারে ছিলেন।
ড. ইউনূস নিজে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন।