অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া সিলেট আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পাঁচ নেতাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে মেঘালয়ের একটি আদালত।
বুধবার মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলস জেলার এমলারিয়াং বিচারিক আদালতে জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর জোয়াই কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
জোয়াই জেলা আদালতের আইনজীবী রাম সিং সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মেঘালয় রাজ্যে অবস্থানের শর্তে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। জামিনের জন্য আদালতে আর্থিক জামানত দেওয়া হয়েছে। পরে বুধবার রাতে জোয়াই জেলা কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল এবং সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাতক উপজেলা যুবলীগ নেতা সাহাব উদ্দিন সাহেল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জোয়াই পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর জে কে মাজাও সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাংলাদেশের কিছু নাগরিকের বিরুদ্ধে ডাউকি পুলিশ স্টেশনে গত ১৬ আগস্ট একজন ট্রাক ড্রাইভার লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ১৯ আগস্ট মামলা হয়। এই মামলায় রবিবার পাঁচ জনকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
“ডাউকি থানায় দায়ের করা মামলায় অনুপ্রবেশ, ছিনতাই, জাতীয় সড়কে ডাকাতি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়। ধৃতরা বেশ কিছু দিন মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থান করছিলেন। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনকে অবহিত না করে তারা মেঘালয় রাজ্য ত্যাগ করে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়ায় আইন অমান্য করেছেন তারা। শুনানি শেষে আদালত তাদের শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে।”
এজাহারে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও পুলিশ তদন্তসাপেক্ষে এই পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলার আরও ৪ আসামী পলাতক।
মামলার বাদী ট্রাক ড্রাইভার ইউ হেনরি মানার গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনে আপত্তি নেই জানিয়ে আদালতে লিখিত দেন বলেও জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের এই ৫ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছিল বলে খবর প্রচার করে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের শ্বশুর আ ন ম ওয়াহিদ কনা মিয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভিন্ন কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হলেও অপপ্রচার করে সামাজিকভাবে আমাদের হেয় করা হয়েছে। আত্মীয় স্বজনের কাছে লজ্জা পেতে হয়েছে। আমার মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। কয়েকটি গণমাধ্যম সঠিক সংবাদ প্রকাশ করায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। এখন কারাগার থেকে মুক্তির খবর পেয়ে স্বস্তি বোধ করছি।”
জোয়াইয়ে অবস্থানরত সিলেটের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের এই নেতারা দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রায় ৩ মাস আগে ভারতে প্রবেশ করে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের লাইমক্রা পুলিশ স্টেশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন। কিন্তু অজ্ঞতাবশত সংশ্লিষ্ট থানাকে না জানিয়ে কিছুদিন আগে তারা কলকাতায় যান। পরে কলকাতা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেএমডিএ) আওতাধীন বাগুইআটি এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে বসবাস করতে থাকেন।
সেই বাগুইআটি থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।