মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে এবার দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে ৬৫ চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জাতিগোষ্ঠীর নাগরিক। যাদের বড় অংশ শিশু-কিশোর।
সোমবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাদের রাখা হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারীন তাসনিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের এই নাগরিকরা চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষ। বিষয়টি উধ্বর্তন মহলকে জানানো হয়েছে। পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য সংঘাতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। তাই প্রাণ বাঁচাতে এপারে পালিয়ে এসেছেন তারা। সেখানে কৃষি এবং জুম চাষ করে জীবনধারণ করতেন বলেও জানিয়েছেন তারা।”
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশে। যাদের আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলায়। এদের বেশিরভাগই মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভিযানে ফলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করাকে ‘জাতিগত নিধন হিসেবে’ অভিহিত করেছে। অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠী এটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখে। গত সাত বছরে যাদের একজনকেও নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও আস্থার ঘাটতির কারণে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা দু’বার ব্যর্থ হয়েছে।
এরই মধ্যে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েক দফায় রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছেন। যদিও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তৎপরতায় তাদের দেশে ফিরতে হয়েছে।
তবে সবশেষ সোমবার নতুন ৬৫ মিয়ানমারের নাগরিকের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটল।
উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের এই নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশও কাজ করছে।
বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মাশরুকী জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে কতজন তা আনুষ্ঠানিকভাবে পরে জানানো হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধ করছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির দখলে।