চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে শুক্রবার ভোর থেকে দেশজুড়ে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
তারা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। এসময় পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আপাতত সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
মাহবুব মোর্শেদ নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন জাহাজটি গত রবিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি রওনা হয়। হঠাৎ জাহাজের কর্মীদের সঙ্গে মালিকের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তিনি অন্য জাহাজের কর্মীদের খোঁজ নিতে বলেন।
সোমবার রাতে চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে নোঙর করে রাখা অবস্থায় জাহাজটি পায় অন্য একটি জাহাজের কর্মীরা। সেখানে রক্ত মাখা লাশ দেখে তারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে। গুরুতর আহত তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও দুজনের মৃত্যু ঘটে।
নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া (৫৬), ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন মিয়া (৪১), সুকানি আমিনুর মুন্সি (৪২), গ্রিজার সজিবুল ইসলাম (২৯), মাজেদুল ইসলাম মজিব (১৬) ও শেখ সবুজ (২৭) এবং বাবুর্চি রানা।
আহতের নাম জুয়েল, তিনি ছিলেন জাহাজের সুকানি।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সে খুনের কথা স্বীকার করেছে বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছে র্যাব। তবে সেই স্বীকারোক্তিতে সন্তুষ্ট নয় নৌ যান শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা বলছেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা কখনোই একার পক্ষে করা সম্ভব না। একজন শ্রমিক জাহাজের নোঙর তুলে একাই জাহাজ চালিয়ে চলে যাবে তা অবিশ্বাস্য; কারণ এটা কোনও টেম্পু নয়। ফলে যে কারণ দেখিয়ে এতগুলো নাবিককে হত্যার কথা বলা হয়েছে সেগুলো যৌক্তিক নয়। আর এখানে অনেক প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর মিলছে না বলে নৌযান শ্রমিকদের কাছে মনে হয়েছে। একজন শ্রমিক সুপারম্যান না যে সে একাই জাহাজের নোঙর তুলে, ইঞ্জিন রুমে ঢুকে, জাহাজ চালিয়ে এতদূর যাবেন।”
আকাশ মণ্ডল জাহাজের একজন লস্কর শ্রমিক। তার জাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা বা সনদ কিছুই নেই। ফলে কীভাবে সে এতদুর জাহাজ চালাবে? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এটা অসম্ভব। এখানে যে কারণগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো বাস্তবসম্মত না। তাই শ্রমিকরা তা মানতে নারাজ।”
এজন্য প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি তুলেছেন শ্রমিকরা। চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, “এর আগে দাবি আদায়ে আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। তাই শুক্রবার ভোর থেকেই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।”
লিখিত বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে, এমভি আল-বাখেরা জাহাজে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন; হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার; মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা এবং নৌপথে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আপাতত সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। পণ্যবাহী এবং তেলবাহী নৌযান এবং চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর কাজ কর্মবিরতির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন।
ফেডারেশনের অফিস সচিব আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। অথচ আমাদের আহত শ্রমিক, যিনি কথা বলতে পারছেন না, তিনি লিখেছেন তাকে সাত থেকে আটজন হামলা করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তি আরও বলেছেন, প্রায় এক ঘণ্টা তিনি একা জাহাজ চালিয়েছেন। জাহাজ সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা জানেন, বাস চালানো সম্ভব হলেও একা একটি জাহাজ চালানো যায় না।”
এই গ্রেপ্তার ও জবানবন্দি কি প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা- এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।