ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী এবং শিশু। তার মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী শিশুর বয়স একদিন। আর সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রাণ হারান ৯৭ বছর বয়সী এক নারী।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা অফিস অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, যা এখনও চলছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় গাজা উপত্যকায় ৪৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৫৬১ জন।
গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর প্রথম ছয় মাসে নিহত ৮ হাজার ১১৯ ফিলিস্তিনির মৃত্যু পর্যালোচনা করেছে জাতিসংঘের সংস্থা ওএইচসিএইচআর। তারা দেখেছে, এই নিহতদের বড় অংশই নারী এবং শিশু, শতকরা হিসাবে প্রায় ৭০ শতাংশ।
গাজায় কেবল নিহত শিশুর হার ৪৪ শতাংশ জানিয়ে ওএইচসিএইচআর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় প্রথম ছয় মাসে মৃত্যুবরণ করা সর্বকনিষ্ঠ একদিন বয়সী শিশুটি ছেলে ছিল। এর বাইরে নিহত শিশুদের অধিকাংশেরই বয়স ৫-৯ এর মধ্যে। এরপর ইসরায়েলের হামলায় বেশি মারা গেছে ১০-১৪ বয়সী শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের এক হামলায় একসঙ্গে ৫ বা তারও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে, এমন ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮৮ শতাংশ। এর অর্থ, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দেদারছে মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন ‘কাঠামোগত’ হামলা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়।
এতে বলা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে যদি একটি জাতিগত বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে নির্মূল করা হয়, তবে তা গণহত্যার শামিল।
নিহতদের বয়স ও লিঙ্গ নিয়ে জাতিসংঘসংশ্লিষ্ট সংস্থাটির এই প্রতিবেদন প্রকাশের অনেক আগে থেকে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, গাজায় যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে নারী ও শিশু।
ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনটিকে অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছে জেনেভায় ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিশন। ‘অযাচাইকৃত তথ্যের’ ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে, সংস্থাটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও তুলেছে তারা।
এদিকে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
তিনি বলেন, সশস্ত্র সংঘাত চলাকালে বেসামরিক নাগরিকদের যাতে কষ্ট না হয়, তা যুদ্ধনীতিতে বলা আছে। এই নীতিকে ইচ্ছে করেই অসম্মান করছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা।