Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

উপজেলা চেয়ারম্যানদের ৭৭ শতাংশ ব্যবসায়ী : সুজন

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ৪৭০ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রায় ৭৭ শতাংশ বা ৩৬০ জনই পেশায় ব্যবসায়ী। ৪৮ জন চেয়ারম্যান নিজেদের কৃষিজীবী বলে উল্লেখ করেছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উঠে আসে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সম্প্রতি পাঁচ ধাপে ৪৬৯ উপজেলায় ভোট শেষ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় ভোট স্থগিত হলেও সেখানে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকায় ৪৭০ জন চেয়ারম্যান নিয়ে এ বিশ্লেষণ করে সুজন। দেশে উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি।

নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৭৭ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আপনারাও জানেন আমরাও জানি, মূল সংখ্যাটা আরও বেশি। অনেকে আসলে ব্যবসাই করে। ব্যবসার সংখ্যা আরও বেশি। ব্যবসায়ী হতে পারে, তাতে সমস্যা নাই। তবে এখানে টাকার খেলা থাকলে সমস্যা, যদি টাকা দিয়ে মনোনয়ন কেনে, ভোট কেনে।”

নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “যা দেখানো হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে, প্রশ্ন আছে? তাও সন্তোষজনক না, ৫০ শতাংশ পার হয়নি।”

সুজন সম্পাদক বলেন, “ভোটারদের অনীহা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করছে। এটা একই সুতোয় গাঁথা। মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা, জনগণের আস্থাহীনতা নির্বাচন কমিশনের ওপর।”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও সুজনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “কৌশলগত দিক ছিল আওয়ামী লীগের। সেখানে তারা কিছুটা হলেও সাকসেসফুল। কারণ ভোটটা ওপেন করে দেওয়ায়।”

উপজেলায় নির্দলীয় প্রতীকে ফিরে যাওয়া উচিত হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে। সেই জিনিসটা রাখতে পারলে ভালো। দলীয় মার্কা নিয়ে না আসাই ভালো। যে কারণে জনগণ এত সম্পৃক্ত হয়েছে। না হলে ৩৬ শতাংশ হতো না, ১৬ শতাংশ হতো।”

বিরোধীদলের স্থানীয় সরকারের ভোটে অংশ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তার মতে, নির্দলীয় হিসেবে, ব্যক্তি হিসেবে এসে নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করে নিতে পারতেন।

স্থানীয় সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতায়িত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাইলে তাদের যা খুশি করতে পারে। এটা ঠিক নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সব কর্তৃত্ব, সেটা হওয়ার কথা নয়। উপজেলার আর্থিক সক্ষমতা নাই। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ৪৭০ জনের মধ্যে ৩৬০ জন পেশায় ব্যবসায়ী, যা মোট চেয়ারম্যানদের ৭৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। নির্বাচিত ৪৮ জন চেয়ারম্যান পেশায় কৃষিজীবী। আইন পেশায় রয়েছেন ১৯ জন চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ১৫ জন শিক্ষাক, ৭ জন চাকুরিজীবী ও একজন গৃহিণী। ২৮ জন অন্যান্য পেশার সঙ্গে জড়িত। পেশার ঘর পূরণ করেননি ৭ জন।

এসএসসি পাস করেনি ৬৭ চেয়ারম্যান

নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫ ধাপে নির্বাচিত ৪৭০ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ১০৩ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, যা নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ।

স্নাতক পাস করেছেন ১৬৫ জন, যা নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের ৩৫ দশমিক ১১ শতাংশ।

৮৩ জন চেয়ারম্যান এইচএসসি পাস এবং ৫১ জন প্রার্থী এসএসসি পাস করেছেন। এসএসসির নিচে রয়েছেন ৬৭ জন। ১ জন শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি।

১১৪ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২২৩ মামলা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া ৪৭০ জনের মধ্যে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং ১৮২ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। এ ছাড়া ৭৫ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে।

নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের ২৫ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০২ ধারায় (হত্যা) মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ৩৬ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এই ধারায় মামলা ছিল। আর চারজনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে।

৪২ চেয়ারম্যানের বার্ষিক আয় কোটির অধিক

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৭০ জন বিজয়ী চেয়ারম্যানের মধ্যে ৮ জনের বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার কম। ১২৪ জনের বার্ষিক আয় ২ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে।

২০৪ জন চেয়ারম্যানের বার্ষিক আয় ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা। ২৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় করেন ৫১ জন চেয়ারম্যান। ৩৬ জনের আয় ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা।

৪২ জনের চেয়ারম্যানের আয় কোটি টাকার অধিক। ৫ জন আয়ের ঘর পূরণ করেনি।

সুজনের যেসব সুপারিশ

দেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণের কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করে সুজন।

সংগঠনটির মতে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণ এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার। রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ও সমঝোতা। আর এই সমঝোতার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও সংলাপ।

নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা নির্ধারণের বিষয়ে ঐক্যমতে আসতে হবে বলে মনে করে সুজন। তাদের মতে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।

সুজন আরও মনে করে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানসমূহকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা মনে করে, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।’

সুজনের সুপারিশে বলা হয়, সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার আলোকে আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনসমূহ সংশোধন করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একইসাথে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতিতে করতে হবে।

সংগঠনটির মতে, উপজেলা পরিষদকে দ্বৈতশাসনমুক্ত করতে হবে এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সদস্য সচিব হিসেবে পরিষদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করবেন। সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে তাদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করতে হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামানতের টাকা আগের মতো দশ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করতে হবে।

সুজনের সুপারিশে আরও বলা হয়, জেলা পরিষদ নির্বাচন মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে না করে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে আয়োজন করতে হবে। সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একীভূত আইন (আমব্রেলা এ্যাক্ট) করতে হবে এবং ব্যয় সংকোচনসহ অনেক ধরনের জটিলতা পরিহারের জন্য একইসাথে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত