নিয়ম হলো ম্যাচের আগে দুই দল মূল ভেন্যুতে অনুশীলন করবে। নয়তো অনুশীলন সুবিধা থাকলে সেখানে ব্যাট-বলে ক্রিকেটাররা নিজেদের ঝালিয়ে নেবেন। কিন্তু ভারতের প্রতিপক্ষদের সঙ্গে করা হয় ভিন্ন আচরণ। বাংলাদেশও সেই তালিকায়। অ্যান্টিগায় সুপার এইটের ম্যাচের আগে পিচে অনুশীলন করেছে ভারত কিন্তু সেই সুবিধা দেয়া হয়নি বাংলাদেশকে। এটা আইসিসির একচোখা নীতি।
অ্যান্টিগায় অনুশীলনই হয়নি বাংলাদেশের
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি চার দিন হয়ে গেলেও এই মাঠের মূল পিচগুলোতে এখনও অনুশীলনের সুযোগই পায়নি নাজমুল হোসেন শান্তরা। প্রথমদিন অ্যান্টিগার পুরোনো ভেন্যুতে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল। বৃষ্টিতে তা পণ্ড হয়। এরপর থেকে দ্বীপটির কুলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ।
অ্যান্টিগার মূল ভেন্যুর সঙ্গে টাইগারদের সর্বোচ্চ পরিচিতি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুপার এইটের প্রথম ম্যাচ। আর এক বেলার ফিল্ডিং অনুশীলন। কিন্তু পিচ দেখে যেভাবে পরিকল্পনা সাজানো হয় সেই সুযোগটা দেয়া হয়নি বাংলাদেশকে। ফিল্ডিং অনুশীলনের দিন পুরোটা সময় পিচ ঢেকে রাখা হয়। ম্যাচ খেলেই যা একটু ধারণা নিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
ভারতের জন্য বাড়তি সুবিধা
অথচ ভারত শুক্রবার পুরোদমে অনুশীলন করেছে সেন্টার উইকেটে। একদম নেট লাগিয়ে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন ঘণ্টা ধরে। ভারতের বাকি ব্যাটাররা অনুশীলন করেছেন। মূল বোলাররা বুঝে নিয়েছেন পিচ কেমন আচরণ করে।
এমন না যে এবারই প্রথম ভারত এইরকম সুবিধা পাচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউইয়র্কের ম্যাচের আগে বাবর আজমদের মাঠের সঙ্গে পরিচিতিই হতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে নাসাউ কাউন্টিতে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের ম্যাচ ফেলা হয় ডালাসে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে নাসাউ কাউন্টিতে বিশ্বকাপের ম্যাচও খেলেছে ভারত।
প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে জয়ের চেষ্টা ভারতই করতে পারে এবং সেটা ক্রিকেটেই সম্ভব। কারণ আইসিসিকে অনেক আগে থেকেই ভারতের পক্ষ টানতে দেখা যায় সবসময়। যে অসুস্থ রীতিটা কখনই কোন দলের পক্ষে করে না ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।
তবুও জয়ের আশা বোলিং শক্তিতে
তবুও ভারতকে হারানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। বোলিং শক্তি নাজমুল হোসেন শান্তদের স্বস্তি দিচ্ছে। আগে সবসময় বাঁহাতি স্পিন নির্ভর বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাকে এখন বৈচিত্র্য এসেছে। অ্যান্টিগার ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথম ম্যাচটিতে খুব কার্যকর হতে পারেননি তারা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ আগের উইকেট বুঝে বোলারদের জন্য নতুন পরিকল্পনা সাজানো সম্ভব।
তাদের কাজ কিছুটা সহজ করে দিতে পারে ভারত টপঅর্ডারদের শান্ত রূপ। গত দুই ম্যাচে ভারতে পরিত্রাতা হয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। রোহিম-কোহলি-পান্তরা শুরুর দিকে বড় রান পাচ্ছেন না। নিজেদের সেরা ফর্মে থাকা বোলিং শক্তি দিয়ে ভারত টপঅর্ডারদের আটকে রাখতে পারেন বাংলাদেশ বোলাররা। মাঝের ওভারগুলোতে দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র রিশাদ হোসেন সূর্যকুমার-হারদিক পান্ডিয়াদের কঠিন সময় উপহার দিতে পারেন। আর শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান নেদারল্যান্ডস ও নেপাল ম্যাচের মতো বোলিং করলে ভারতকে খুব বেশি স্কোর দেয়া হবে না।
চিন্তা সেই ব্যাটিং নিয়েই
ভারতকে কম রানে আটকানো গেলেও বাংলাদেশের স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। আগে ব্যাট করা বা পরে, বাংলাদেশ ব্যাটারদের বাজে ফর্মে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েই যাচ্ছে। তার ওপর ভয় দেখাচ্ছে জাসপ্রিত বুমরাহর বোলিং। আগের ম্যাচে মাত্র ৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন এই পেসার।
শুধু বুমরাহ বাংলাদেশ টপঅর্ডারদের চিন্তার কারণ নয়, গত ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেয়ে নিজের জায়গা পাকা করেছেন কুলদ্বীপ যাদব। অ্যান্টিগার উইকেটে একজন চায়নাম্যান খুবই কার্যকর হবেন। এছাড়া হারদিক পান্ডিয়ার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও কার্যকর হয়ে ওঠা বাংলাদেশ ব্যাটারদের কঠিন সময় বাড়াবে।
এমন অবস্থায় স্বস্তি অধিনায়ক শান্তর রানে ফেরা। আগের ম্যাচে রান করে অ্যান্টিগার উইকেটে ব্যাটিংয়ের ধরনটা বুঝেছেন শান্ত। এছাড়া আবারও ছন্দে ফিরেছেন এই মুহূর্তে দলের সেরা ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়। সঙ্গে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সফল হলে ভালো রান পাওয়া বা তাড়া করা অসম্ভব না বাংলাদেশের জন্য।
একাদশে পরিবর্তন
এই ম্যাচে একাদশে বদল আসবে। অস্ট্রেলিয়ার দুই বাঁহাতি ওপেনারকে ফেরাতে পরিকল্পনায় এসেছিলেন শেখ মেহেদি হাসান। কিন্তু ভারতের ব্যাটাররা অফস্পিন ভালো খেলেন এবং ব্যাটিং লাইনে বাঁহাতি কম। তাই মেহেদিকে বসিয়ে ফেরানো হতে পারে শরিফুল ইসলামকে। অবশ্য চার পেসার তত্ত্বে না গেলে মেহেদির জায়গায় আবারও জাকের আলির একাদশে থাকবেন। তাতে একজন বাড়তি ব্যাটারে কিছু রান পাওয়ার বিশ্বাস আছে।
ওপেনিংয়ে আরেকটি বদল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঠিকঠাক রান করতে না পারা তানজিদ হাসান তামিমের জায়গায় একাদশে ফিরতে পারেন সৌম্য সরকার। তবে ভারতের বিপক্ষে তামিমের ২০২৩ বিশ্বকাপের ব্যাটিং বিবেচনায় নিলে তামিমের টিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাছাড়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটিতে ইনিংসের শুরু পেয়েছিলেন ১৭ রান করে।
পরিশেষে
ভারত ম্যাচ বলেই বাংলাদেশের উত্তেজনা বেশি। ভারতের সঙ্গে আলাদা রকম ভালো খেলার অতীত বাংলাদেশের আছে। দলটির সঙ্গে ২০২৩ এশিয়া কাপে সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচেও জিতেছিল সাকিব আল হাসানের দল। এমন আরো সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। সেই অতীত নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে টাইগারদের।