Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

রিজার্ভের অস্বস্তি কাটার ইঙ্গিত কি মিলছে

মার্কিন ডলার
মার্কিন ডলার
Picture of আবদুর রহিম হারমাছি

আবদুর রহিম হারমাছি

ঈদের আগে বেড়েছিল রেমিটেন্স, তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, এআইআইবি ও কোরিয়া সরকারের দেওয়া ঋণ; তাতে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে উঠতে পারে জুন মাসেই।

আর তাহলে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে, তা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

রেমিটেন্সে ভর করে গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুসৃত বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে তা ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যেই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, এআইআইবি ও কোরিয়া সরকারের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসাবে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার আসছে। তখন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে।

শুক্রবার বাংলাদেশের জন্য ৯০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এর ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে সংস্থাটি।

ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংক সদর দপ্তর।

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মেহেরিন এম মাহবুব সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রবি অথবা সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ৯০ কোটি ডলারের দুই প্রকল্পের ঋণচুক্তি সই হবে। চুক্তির পর কয়েক দিনের মধ্যে বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলার বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে।”

যে রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এক সময় ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল, তা কমতে কমতে এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে গত ১৪ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।

দুই সপ্তাহ আগে গত ৫ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৩২ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ২৬ কোটি ডলার।

দুই সপ্তাহে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৮৬ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার।

বরাবরের মতো এবারও রিজার্ভ বাড়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে রেমিটেন্স বা বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ।

বিদায়ী অর্থ বছরের ১৬ দিন বাকি থাকতেই রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ৩০১ কোটি ৯৩ লাখ (২৩.০২ বিলিয়ন) ডলার, এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে জুন মাসের ১৪ দিনে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। মাসের বাকি ১৬ দিনে এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩৫০ কোটি (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে, তখন তা হবে একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।

বিশ্ব ব্যাংকের পর এডিবির বাজেট সহায়তার ২৫ কোটি ডলারও এ মাসেই রিজার্ভে যোগ হবে। গত ১০ জুন সংস্থাটির সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি।

এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) ৪০ কোটি ডলার এবং কোরিয়া সরকার ১০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার অর্থও জুন মাসের মধ্যে রিজার্ভে যোগ হবে বলে জানিয়েছেন ইআরডি কর্মকর্তারা।

চলতি জুন মাসের মধ্যে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে; যদিও সেখানে একটি শর্তের বেড়াজাল রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

বিপিএম-৬ ও ‘গ্রস’ হিসাবের বাইরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে আকুর দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ এবং আইএমএফের স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ যায়। আর এসব বাবদ বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ যায়।

সে হিসাবে বাংলাদেশের প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ এখন সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আর আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসাবে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো নিট রিজার্ভ দেখাতে হবে।

সবশেষ গত মার্চ মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ বর্তমানের ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

জুনের মধ্যে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছলে তখন প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে এই বাজেট সহায়তা গ্রহণ একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এই অর্থ সরাসরি রিজার্ভে যুক্ত হবে। এতে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বাড়বে। স্বস্তি পাবে সরকার।”

দীর্ঘদিন আইএমএফে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলে আসার অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, “সার্বিক বিষয় বিবেচনা নিয়ে আইএমএফ বাংলাদেশের নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১৪ দশমিক ৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। এটা একটা স্বস্তির খবর।”

রিজার্ভ আর কমবে না এই আশাবাদ প্রকাশ করে তার পেছনে যুক্তি দেখিয়ে আহসান মনসুর বলেন, “গত ৯ মে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলার বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেছে। এর পর থেকে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

“রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। রিজার্ভও বাড়বে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত