ফুটবল কোচ নিয়ে একটা প্রবাদ আছে— “কোচ হলো দুই প্রকার- বরখাস্ত হয়েছেন কিংবা বরখাস্ত হতে চলেছেন।”
ফুটবলে কোচ যেহেতু সর্বেসর্বা, ফলে সাফল্য না পেলে দায়ভার তার ওপর বর্তায়। দেখিয়ে দেওয়া হয় বেরিয়ে যাওয়ার পথ। এই জায়গায় নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবতে পারেন গ্যারেথ সাউথগেট। বিশ্বসেরা স্কোয়াড পেয়েও ইংল্যান্ডকে কোনও সাফল্য দিতে পারেননি তিনি। এরপরও টিকে আছেন।
ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে কাজ করেছেন তিন বছর। এই অভিজ্ঞতা দিয়ে ২০১৬ সালে পান থ্রি লায়ন্সের মূল দলের দায়িত্ব। এরপর ২০১৮ ও ২০২২- দুটি বিশ্বকাপ ও ২০২০ সালের ইউরোতে দল সামলেছেন সাউথগেট। সাফল্যের ঘর ফাঁকা। নামী সব খেলোয়াড় নিয়েও ইংল্যান্ডের শিরোপা খরা কাটাতে পারেননি তিনি।
প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ও আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা। বিশ্ব ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়দের মিলনমেলা এই লিগে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতার মান যেভাবে বাড়িয়েছে ইংল্যান্ড, সেই তুলনায় বাড়েনি জাতীয় দলের সাফল্য।
অথচ এই দলে কোন পজিশনে ভালো মানের খেলোয়াড় নেই? বেঞ্চে যারা থাকেন, তারাও ক্লাব পর্যায়ে দাপট দেখানো খেলোয়াড়। এবারের ইউরোর দলটাই দেখা যাক। জ্যাক গ্রিলিশের মতো খেলোয়াড়ের জায়গা হয়নি! প্রাথমিক দলে পর্যন্ত থাকার সুযোগ হয়নি মার্কাস রাশফোর্ড-জর্ডান হেন্ডারসনের মতো খেলোয়াড়দের।
জার্মানির ইউরোতে তারুণ্যনির্ভর আক্রমণে আস্থা রেখেছেন সাউথগেট। তাতে কি প্রথম ইউরো জয়ের স্বাদ পাবে ইংল্যান্ড? ১৯৬৬ সালের পর আবার কোনও শিরোপা ফিরবে ইংল্যান্ডে?
২০২০ সালের ইউরোতে খুব কাছে গিয়েও পারেনি ইংলিশরা। ফাইনালে ইতালির কাছে হেরেছিল টাইব্রেকারে। এখন পর্যন্ত সাউথগেটের বড় সাফল্য বলতে এটাই। ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল কিংবা ২০২২ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া ইংল্যান্ডের সামর্থ্যের সঙ্গে বেমানান।
এজন্য সাউথগেটের ফুটবল কৌশলকে দায়ী করা হয়। পজিশন অনুযায়ী খেলোয়াড় ব্যবহার করার দুর্বলতা যেমন আছে, তেমনি বেঞ্চের খেলোয়াড় ব্যবহারেও দূরদর্শিতায় কমতি আছে। পিছিয়ে পড়া ম্যাচগুলোতে প্রায়ই ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেন তিনি।
ওই ‘ভুল’ হয়তো বুঝতে পেরেছেন সাউথগেট। সে কারণেই কিনা জুড বেলিংহামের পজিশন নিয়ে বলেছেন, “রিয়াল মাদ্রিদের পজিশনই তৈরি হয়েছে বেলিংহামের জন্য।”
রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা হীরা হয়ে উঠতে পারেন ইউরোতে। বার্নাব্যুর প্রথম মৌসুসেই পেয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ। ক্লাবের পর দেশের হয়ে ইউরোপসেরা হওয়ার মিশনে নেমেছেন তিনি।
সাউথগেটের দলে আছে ফিল ফডেনের মতো চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে যার হাতে উঠেছে মৌসুমসেরার পুরস্কার। তার সঙ্গে আক্রমণভাগে বিশ্বস্ত হ্যারি কেইন। আরও আছেন আর্সেনালের জার্সিতে আলো ছড়ানো বুকায়ো সাকা ও চেলসিতে দারুণ মৌসুম কাটানো কোল পালমার।
এমন সব খেলোয়াড় নিয়েও ইউরো মিশন প্রত্যাশানুযায়ী হয়নি ইংল্যান্ডের। ‘সি’ গ্রুপের সেরা হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করলেও পারফরম্যান্সে ছিল না ধার। স্লোভেনিয়ার সঙ্গে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ড্র করায় ইংলিশ সমর্থকরা বেজায় চটেছিলেন। বোতল ছুড়ে মেরেছিলেন সাউথগেটের দিকে।
শেষ ষোলোতে তাদের প্রতিপক্ষ স্লোভাকিয়া। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শক্তিমত্তায় যাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ইংল্যান্ড। চোখবন্ধ করে যাদের পক্ষে বাজি ধরা যায়।
ফাইনালের পথটাও ইংল্যান্ডের তুলনামূলক সহজ। স্লোভাকিয়া-বাধা পেরোলে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে সুইজারল্যান্ডের। দুর্দান্ত গতিতে সুইসরা এগিয়ে গেলেও সামর্থ্য বিবেচনায় এখানেও ফেভারিট থাকবে ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে হয়তো পেরোতে হবে নেদারল্যান্ডস-বাধা। অর্থাৎ, ফাইনালের পথে ইংল্যান্ড এড়াতে পেরেছে শক্তিশালী জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্সকে। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে ফাইনালে হয়তো এই দলগুলোর একটির মুখোমুখি হবে ইংলিশরা।
এই হিসাবে অনেক ‘যদি’-‘কিন্তু’ রয়েছে। এরপরও ফাইনালের পথ ও সামর্থ্যের বিবেচনায় থ্রি লায়ন্সের ইউরো জয়ের সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি। এবার তাই কোনও অজুহাত খাটবে না সাউথগেটের।
দুর্দান্ত স্কোয়াডের সঙ্গে ফাইনালের ‘সহজ পথ’- এবার না হলে আর কবে?