Beta
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় কেন হয় : হারিকেন, সাইক্লোন ও টাইফুনের পার্থক্য কী

Cyclone
[publishpress_authors_box]

গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক পরিচলন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে উৎপত্তি হয় ঘূর্ণিঝড়ের, যা স্থানভেদে হারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোন নামে পরিচিত।

সাধারণত বিশ্ব মানচিত্রে নিরক্ষ রেখা বা বিষুবরেখা তথা পৃথিবীর মাঝখান দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যে কাল্পনিক রেখা আঁকা হয় তার আশে-পাশের উষ্ণ সমুদ্রের উপরে বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ফ্লোরিডার বিগ বেন্ড শহরের উপকূলে আছড়ে পড়ে ক্যাটাগরি-৪ বা চার মাত্রার হারিকেন ‘হেলেন’। ঝড়টির প্রভাবে ফ্লোরিডার উপকূলে সর্বোচ্চ ১৫ ফুট উচ্চতার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হয়। অংসখ্য গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে।

বিবিসি জানিয়েছে, আটলান্টিক মহাসাগরে উদ্ভূত এই হারিকেনের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৪৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ২০ লাখের বেশি ঘড়বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ‘হেলেন’র প্রভাবে প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।

এর আগে সেপ্টেম্বরের শুরুতে চীনের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত করে সুপার টাইফুন ‘ইয়াগি’।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, চীনে আঘাত হানার পর কিছুটা শক্তি হারালেও ‘ইয়াগি’ পর্যায়ক্রমে ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারেও তাণ্ডব চালায়। সবমিলিয়ে ইয়াগির তাণ্ডবে প্রাণ হারায় পাঁচ শতাধিক মানুষ।

ঘূর্ণিঝড় কীভাবে তৈরি হয়

নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের অর্ধেককে দক্ষিণ গোলার্ধ বলা হয়।

এই রেখা থেকে ৩০ ডিগ্রি উত্তর এবং ৩০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের তাপমাত্রাই সবচেয়ে বেশি থাকে।

বাংলাদেশ এই রেখার উত্তর পাশে তথা উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। ঢাকার অক্ষাংশ ২৩ ডিগ্রি ৪২ মিনিট উত্তর। তার মানে বাংলাদেশও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত।

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা আবশ্যক এবং একটি নির্দিষ্ট গভীরতা (কমপক্ষে ৫০ মিটার) পর্যন্ত এই তাপমাত্রা থাকতে হয়। এজন্য আমরা দেখি সাধারণত কর্কটক্রান্তি (২৩.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ) ও মকর ক্রান্তি (২৩.৫ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ) রেখার কাছাকাছি সমুদ্রে গ্রীষ্মকালে বা গ্রীষ্মের শেষে বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

নিরক্ষীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে সমুদ্রপৃষ্ঠ বেশি উত্তপ্ত হলে এর সংস্পর্শে আসা বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সেখানে বায়ুশূন্যতা তৈরি হয়। উত্তর গোলার্ধে এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য মেরু অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু দক্ষিণ দিকে (নিরক্ষরেখার দিকে) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর দিকে (নিরক্ষরেখার দিকে) প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের (coriolis force) কারণে এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে নিরক্ষ রেখার কাছে এসে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।

এ জন্য আমরা দেখি, উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও কোরিওলিস বল ন্যূনতম থাকায়, নিরক্ষরেখার শূন্য ডিগ্রি থেকে দুপাশের ৫ ডিগ্রির মধ্যে কোনও ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণ দুদিকে ১০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যেই বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের সমুদ্রের পানি বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বাতাসও হালকা হয়ে দ্রুত উপরের দিকে উঠে যায়। সেই বায়ু আবার শীতল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীচ থেকে শীতল বায়ু আবার গরম হয়ে উপরে উঠে এবং আগের বায়ুকে একপাশে ঠেলে দেয়। এই বায়ু চক্রের কারণে প্রবল বাতাস এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয় এবং দুটো একসঙ্গে ঘুরতে শুরু করে, যা একসময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।

ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বিস্ময়কর গাঠনিক চিত্র হলো এর ‘চোখ’। উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে এ চোখের গঠন বা আকৃতি আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের চোখের মতো অংশটি ক্ষুদ্র এবং প্রায় বৃত্তাকার বা কখনও এটি চ্যাপ্টা হয়। এই অঞ্চলের ব্যাস থাকে ৮-৫০ কিলোমিটার। চোখে বায়ুচাপ থাকে সর্বনিম্ন এবং তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ যত উত্তপ্ত থাকে ঝড় ততো বেশি শক্তিশালী হয়। চোখে বায়ুপ্রবাহ থাকে খুবই হালকা (সাধারণত ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার এর বেশি নয়) এবং মেঘ থাকে না বললেই চলে।

এর বিপরীতে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যায় চোখটির পরিসীমার বাইরে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায়, যাকে চোখ-দেয়াল বলা হয়। এখানে বাতাসের বেগ ও বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি হয়। চোখ-দেয়ালের বাইরের সীমানা থেকে বাতাসের বেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি সাধারণত বৃত্তাকার অথবা প্রায় বৃত্তাকার এবং এর ব্যাস ১০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঘূর্ণিঝড়গুলো প্রায়শই কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্গে একটি লম্বা লেজের মতো অঞ্চল নিয়ে আবর্তিত হয় এবং এ প্রলম্বিত অংশে একাধিক বলয় থাকে। সমগ্র বিষয়টি একটি সর্পিলাকার কাঠামো তৈরি করে, যা অনেকটা ‘উল্টানো কমা’ বা ‘উদ্ধৃতি চিহ্নের’ মত। ঘূর্ণিঝড়ের লেজটি কয়েক শত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের লেজের মতো অংশটি সাধারণত প্রাণকেন্দ্র বা মূল অংশটির পূর্বেই ভূমিকে অতিক্রম করে, যার ফলে ঝড় আসার আগে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় এবং ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার শুরুতে প্রায়ই বৃষ্টি হয়।

প্রতি বছর পৃথিবীজুড়ে গড়ে ৮০টি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়, এর মধ্যে কিছু ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে আবার কিছু ঘূর্ণিঝড় মহাসাগরে বিলীন হয়ে যায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।

হারিকেন

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর এবং উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বলা হয় হারিকেন। হারিকেনগুলো প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে আটলান্টিকের হারিকেনের বাতাসের গতি এবং ধ্বংসক্ষমতা বেশি হয়।

প্রাথমিক অবস্থায় আটলান্টিকের কোনও সামুদ্রিক ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের নিচে থাকে, তখন একে শুধু নিম্নচাপ বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারে উন্নীত হলে এটিকে একটি নাম দেওয়া হয় এবং ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার থেকে ১১৯ কিলোমিটার পর্যন্ত এটিকে একটি সাধারণ ঝড় বলা হয়। এরপর এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় এবং এর নাম হয় হারিকেন।

প্রাচীন মায়া সভ্যতার দেবতা হুরাকান— যাকে বলা হত ঝড়ের দেবতা, তার নাম থেকেই হারিকেন শব্দটি এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার কোনও ঘূর্ণিঝড় কতটা শক্তিশালী তা বোঝাতে ১৯৭৩ সালে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করে। ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে সাফির-সিম্পসন স্কেল নামের ব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়।

আমেরিকান প্রকৌশলী হার্বার্ট সাফির ও আওহাওয়াবিদ রবার্ট সিম্পসনের তৈরি এই ব্যবস্থায় রয়েছে পাঁচটি বিভাগ (ক্যাটাগরি)। এতে প্রথম ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড় হলো সবচেয়ে দুর্বল। আর ক্যাটাগরি ৫ এর ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় সবচেয়ে শক্তিশালী।

এই স্কেলে বাতাসের গতি অনুযায়ী আটলান্টিকের হারিকেনগুলোকে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়।

কোনও হারিকেনের ঘূর্ণি বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১১৯ থেকে ১৫৩ কিলোমিটার (৭৪ থেকে ৯৫ মাইল) হলে সেটিকে ক্যাটাগরি-১ হারিকেন বলা হয়।

অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়ের তিন ধরনের নাম।

১৫৪ থেকে ১৭৭ কিলোমিটার (৯৬ থেকে ১১০ মাইল) গতির হারিকেনকে বলা হয় ক্যাটাগরি-২ হারিকেন।

কোনও হারিকেনের বাতাসের গতি ঘণ্টায় ন্যূনতম ১৭৮ থেকে ২০৯ কিলোমিটার (১১১ থেকে ১২৯ মাইল) হলে সেটিকে শক্তিশালী এবং ক্যাটাগরি-৩ হারিকেন বলা হয়।

ঘূর্ণি বাতাসের গতি ২০৯ থেকে ২৫১ কিলোমিটার (১৩০ থেকে ১৫৬ মাইল) পর্যন্ত হলে সেটিকে ক্যাটাগরি-৪ আর ২৫২ কিলোমিটার (১৫৭ মাইল) বা তার বেশি হলে সেটি ক্যাটাগরি-৫ হারিকেন। এই দুই ক্যাটাগরির হারিকেন সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়।

কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাফির-সিম্পসন স্কেলটি আর যথেষ্ট নয়। কারণ বর্তমানে অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এই স্কেলের সর্বোচ্চ স্তর ক্যাটাগরি-৫ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা পরিমাপে ‘ক্যাটাগরি-৬’ যুক্ত করার পক্ষে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা বেশি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রের তাপমাত্রা ১৯৭০ সালের পর প্রায় এক ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর ফলে এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং বেশি সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে।

আর সাধারণত আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়া বা কমা প্রাকৃতিক একটি চক্রের কারণে ঘটে। এই চক্রের বৈজ্ঞানিক নাম আটলান্টিক মাল্টিডিকেডাল ওসিলেশন যা সংক্ষেপে এএমও নামে পরিচিত। এই চক্রের কারণে আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা কয়েক দশক ধরে কখনও বাড়ে, আবার কয়েক দশক ধরে কমে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে চক্রের এই বর্ধিষ্ণু ধারা বিগত বর্ধিষ্ণু ধারাগুলোর চাইতে অস্বাভাবিক রকমের বেশি। তারা এই অস্বাভাবিকতার জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন।

সাফির-সিম্পসন স্কেল আটলান্টিক এবং আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পূর্ব পাশে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের ঝড়ের তীব্রতা পরিমাপ করে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন স্কেল ব্যবহার করা হয়। তবে অধিকাংশ স্কেলই প্রায় এক।

টাইফুন

উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বলা হয় টাইফুন। এসব ঘূর্ণিঝড় প্রধানত ফিলিপাইন ও জাপান এবং তাদের আশেপাশের দেশগুলোর ওপর আঘাত হানে।

চীনা শব্দ টাই-ফেং থেকে এসেছে টাইফুন। শব্দটির অর্থ প্রচণ্ড বাতাস। অনেকে অবশ্য মনে করেন ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও টাইফুন শব্দটি এসে থাকতে পারে। আবার অনেকের মতে, তুফান শব্দটিই এসেছে টাইফুন বা টাই-ফেং থেকে।

সাধারণত টাইফুনের মৌসুম হল মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে। তবে বছরের যে কোনও সময়েই টাইফুন তৈরি হতে পারে। শক্তির নিরিখে টাইফুনেরও বিভিন্ন শ্রেণিবিন্যাসের স্কেল রয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক টাইফুনকে বলা হয় ‘সুপার টাইফুন’।

সাইক্লোন

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বলা হয় সাইক্লোন। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য হয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিক পর্যন্ত আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়গুলো। সাইক্লোনের মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে। তবে এর আগে-পরেও সাইক্লোন সৃষ্টি হতে পারে।

সাধারণভাবে সব ঘূর্ণিঝড়কেই সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কাইক্লোস থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা। এটা অনেক সময় সাপের বৃত্তাকার কুণ্ডলী বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ১৮৪৮ সালে হেনরি পিডিংটন তার সেইলর’স হর্ন বুক ফর দ্য ল’ অব স্টর্মস বইতে প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করেন। তারপর থেকেই ঘূর্ণিঝড় বোঝাতে সাইক্লোন শব্দের ব্যবহার শুরু হয়।

বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়।

সাইক্লোনের কেন্দ্রের ঘূর্ণিবাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের গতি যখন ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম বা তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে সেটিকে ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম বা হারিকেন গতিসম্পন্ন সাইক্লোন বা অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ যদি ২২০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায় তাহলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত