রাত ১২ টা বাজে হঠাৎ মসজিদের মাইক থেকে ভেসে এলো সতর্ক বার্তা। কেউ একজন টানা বলে যাচ্ছেন ‘যার যার বাসা থেকে সবাই বেরিয়ে আসুন। সবাই বেরিয়ে আসুন। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ডাকাতি হচ্ছে। সবাই বেরিয়ে আসুন’। এভাবে টানা ১০ মিনিট থেমে থেমে মাইক থেকে ভেসে এল ঘোষণা।
এমন সময় হঠাৎ সদর দরজায় কারও টোকা। এই মধ্যরাতে? সত্যি বলতে, বেশ ভয়ই পেয়ে গেলাম। ডাকাত না-তো? আন্দোলনের পুরো সময়জুড়ে বাসায় একা একা আছি। ভয়, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে কাঁটিয়েছি একেকটা রাত। চোখের পাতা এক হতে হতে রাত প্রায় ফুরিয়ে যেতো।
কে?
ভাইয়া আমি পাশের বাসার।
দরজার পিপ হোলে চোখ লাগলাম। লুঙ্গি পরা ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। পাশের বাসার দরজাও খোলা। এমরান ভাই। দরজা খুলতেই বললেন, ‘ভাই শুনছেন তো? ডাকাতি হইতেছে আশেপাশে। কিছু নিয়ে নেমে পড়েন।’
উত্তরের অপেক্ষা না করেই দ্রুত নেমে গেলেন চারতলার সিঁড়ি দিয়ে।
থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর গায়ে একটা টিশার্ট চাপিয়ে নেমে পড়লাম। নেমে দেখি জনা পাঁচেক ছেলেপেলে লাঠি নিয়ে টহল দিচ্ছে। আমার বাসাটা হাউজিং এর একেবারে শেষ গলিতে। গলি পার হয়ে সামনে এগোতেই দেখি প্রায় ৩০-৪০ জনের একটা জটলা। হাসি হাসি মুখ। ফুরফুরে মেজাজে নিজেদের মধ্যে বাতচিৎ করছে।
হাউজিংয়ের গেইটের কাছাকাছি এগিয়ে যেতে প্রায় সমসংখ্যক মানুষের এমন জটলা দেখলাম। কিশোর, তরুণ, যুবা, নারী এমনকি বয়োবৃদ্ধরাও নেমেছে ডাকাত প্রতিরোধে। বিপদের আশঙ্কা মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত ঐক্য গড়ে দিল। এমন ঢাকা শহর আর কখনো দেখিনি।
পুলিশহীন ঢাকা শহরে গত ৩-৪ দিনের দৃশ্যটা এমনই। রাত নেমে এলেই ছড়িয়ে পড়ছে ডাকাতির ভয়। কিছুটা সত্যি, আর অনেকটাই গুজব।
অফিসে যাওয়া আসার পথেও চোখে পড়ছেনা কোন ট্রাফিক পুলিশ। তারপরও অত্যন্ত সু-শৃঙ্খলভাবে চলছে গাড়ি। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছে আন্দোলনের তরুণরা।
অফিসে যাওয়া আসার ওই পথটুকুই আমাদের আশাবাদী করে। আমাদের রাত্রিকালীন উদ্বেগ আর ভয়কেও এই প্রত্যাশা জয় করে নিবে বলেই বিশ্বাস।