Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

৩২ নম্বরে দাঁড়িয়ে যা বললেন সোহেল তাজ

বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফেইসবুক লাইভে কথা বলছেন সোহেল তাজ।
বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফেইসবুক লাইভে কথা বলছেন সোহেল তাজ।
[publishpress_authors_box]

ঢাকার ধানমণ্ডির পুরোনো ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি। কাগজে কলমে বাড়িটির নম্বর এখন ১০, রোড নম্বর ১১। অবশ্য বাড়িটির জন্য কোনও নম্বর মুখ্য নয়। ৩২ নম্বর বললেই বেশিরভাগ মানুষ বুঝে নেন, বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির কথা।  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতেই সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে।

পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালের ১৪ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত কিছু সামগ্রী নিয়ে এ বাড়িতে স্থাপন করা হয় ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’।

তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাও।

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। যা থেকে বাদ পড়েনি ৩২ নম্বরের বাড়িটিও। লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বাড়িটিতে, পুড়ে যায় জাদুঘরের সমস্ত সংগ্রহ, নথিপত্র।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুড়ে যাওয়া বাড়ির ছবি ছড়িয়ে পড়লে সেটির দায়িত্ব নেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের উদ্যোগে পরিস্কার করা হয় বাড়িটি। এখন পর্যন্ত তারাই বাড়িটির দেখভাল করছে। সাধারণ দর্শনার্থীদের সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকদেরও নাম-পরিচয় লিখে ঢুকতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল, যিনি সোহেল তাজ নামে পরিচিত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভে আসেন সোহেল তাজ। তিনি ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানান।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। এটা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসা, এখানেই বঙ্গবন্ধুর জাদুঘর ছিল। এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

“আজ আমরা জানি, বাংলাদেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে ছাত্র জনতার সম্মিলনে এবং ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিছু দুষ্কৃতিকারী জঘন্যতম ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “অতি সত্ত্বর এই দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।”

নিজের বিবেকের তাড়নায় ৩২ নম্বরে গিয়েছেন জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, “আমি আমার বিবেককে দিয়ে পরিচালিত হই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, যতটুকু পারি।

“আজকে বঙ্গবন্ধুর ৩২ এর এই বাসায় সেই আবেগের কারণেই উপস্থিত হয়েছি। আমি এটা কোনও অবস্থাতেই মেনে নিতে পারি না যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য…কারণ বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। তিনি বাংলাদেশের সম্বল, বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের আলোকে এবং মোড়কে প্রিজার্ভ (সংরক্ষণ) করে রাখতে হবে।”

সোহেল তাজ বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের ২৩ বছরের গণআন্দোলন, যেই গণআন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আজকে যে ছাত্র জনতা যারা আন্দোলন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ-যেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

“এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে সবার বাক স্বাধীনতা থাকবে, এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে মেধাই হবে মূল মাপকাঠি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই সেই চেতনা। কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য এই আদর্শকে বাস্তবায়ন করা যায়নি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বঙ্গবন্ধুর অবদান। একে অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। অতীত ভুলে গেলে ভবিষ্যত গড়া যায় না। তাহলে আর সেই বাংলাদেশ আধুনিক, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধশালী হবে না।”

শেখ মুজিবুর রহমানসহ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছেন তাদের সবার কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন বলেও মত দেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, “হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু; আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্ররণা দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

“তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এমনকী আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন, জিয়াউর রহমানসহ আমাদের ১১ জন সেক্টর কমান্ডার। এবং আরও বীর, অনেক বীর, অনেক হিরো এবং অনেক নায়ক, মহানায়ক  আছেন যাদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা আবশ্যক।”

এসব চরিত্রদের নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক হবে না মন্তব্য করে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তারা আমাদের অ্যাসেট, যারা আমাদের লিগ্যাসি তাদেরকে আমাদের সংরক্ষণ করে রাখতে হবে ন্যাশনাল আসেট (জাতীয় সম্পত্তি) হিসেবে।

“তাদেরকে নিয়ে যেন ভবিষ্যত বাংলাদেশে রাজনীতি না হয়, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত।”

বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, জাদুঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছিল উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, “এই দেশটা আমাদের সবার, রাজনীতির ঊর্ধ্বে এসে এই দেশকে ভালোবাসতে হবে।

“মনে রাখতে হবে যদি নীতি নৈতিকতা হারিয়ে ফেলি তাহলে কোনও জাতি মাথা উচু করে উঠতে পারবে না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত