Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা, তবে…

সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছেন পুড়ে যাওয়া পল্টন থানার সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছেন পুড়ে যাওয়া পল্টন থানার সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যাওয়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। যদিও দেশের অনেক থানা এখনও সেবা দেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই, যানবাহন ও অস্ত্র-গুলির সংকটও রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে পুলিশ সদস্যদের মানসিক ট্রমা।

তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে শুরু হয় অরাজক পরিস্থিতি।

ঢাকার গণভবন, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। জনরোষের শিকার হয় দেশের বেশিরভাগ থানা। চালানো হয় ভাঙচুর, লুটপাট; ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কোথাও কোথাও হত্যার শিকার হন পুলিশ সদস্যরা।

এমন সহিংস পরিস্থিতিতে জীবনরক্ষায় কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। সড়কে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থেকেও সরে যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

এ অবস্থায় দেশে বন্ধ হয়ে যায় পুলিশি সেবা, বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ।

হামলার শিকার পল্টন থানা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
হামলার শিকার পল্টন থানা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ৭ আগস্ট মো. ময়নুল ইসলাম বাহিনীর সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে সেই নির্দেশ মানেননি বেশিরভাগ সদস্য। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নিজেদের নিরাপত্তাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভও করেন তারা।

এরপর গত ১১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন পুলিশ সদস্যদের ১৫ আগস্টের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার সময় বেঁধে দেন। তিনি বলেন, “বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে অনুপস্থিতরা আর ‘চাকরি করতে চাইছেন না’ বলে ধরে নেওয়া হবে।”

এই হুঁশিয়ারির পর কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) কামরুল আহসানের দাবি, বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই প্রায় সব সদস্য কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।

যোগ দেওয়া মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, চাকরি হারানোর ভয়ে তারা কর্মস্থলে যোগ দিলেও পূর্ণাঙ্গভাবে সেবা দেওয়া শুরু করতে পারেননি। অনেক থানায় এখনও কোনো যানবাহন নেই, অস্ত্র, গোলা-বারুদ নেই। এছাড়াও অনেক থানা, ফাঁড়ি কিংবা পুলিশ বক্সে এখনও কর্ম পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে জনতার ক্ষোভের মুখে পড়েছিল পুলিশ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের কাজে আরও দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ ডেকেছিল কর্মবিরতি। তবে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ৬ দিন পর সোমবার সকালে ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেমেছে পুলিশ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই সময়ে সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নেমেছিল। নয়াপল্টনে সোমবার তাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদেরও দেখা গেছে।

অন্যদিকে এখনও অনেক পুলিশ সদস্য মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তারা জনসাধারণের সঙ্গে আগের মতো মিশতে ভয় পাচ্ছেন, কোলাহল এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। এ কারণেও সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এসআই পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আামাদের বিভাগের শতভাগ সদস্যই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া পরিচিত অন্যান্য বিভাগের সদস্যরাও উপস্থিত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।

“আসলে কেউই চাকরি হারাতে চান না। তাই সবাই বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই হাজির হয়েছেন।”

সিলেট রেঞ্জে কর্মরত এসআই পদমর্যাদার আরেক কর্মকর্তা বলেন, “দেশজুড়ে পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেছিলাম। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে দেখা করে সকল সমস্যা সমাধান ও দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।

“এছাড়াও এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন। আমরা তার কথার ওপর ভরসা রেখে কর্মবিরতি ভেঙে কাজে যোগ দিয়েছি। তবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি দাওয়া পূরণ না হলে আমরা আবারও কর্মবিরতি ঘোষণা করব।”

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা এতদিন দলীয় লেজুড়বৃত্তি করেছেন তাদের চাকরি থেকে অব্যবহি দেওয়াসহ বিভিন্ন শাস্তি হচ্ছে। এসব দেখে আমার আশান্বিত হয়েছি। আশা করছি এবার থেকে পুলিশ হবে শুধু জনগণের। আর কেউ পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর সাহস পাবে না।”

দাবি পূরণ করার জন্যই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন জানিয়ে এই পুলিশ সদস্য বলেন, “যদি আমি চাকরিই না করি, তাহলে দাবি জানাব কীভাবে?”

আরেক কনস্টেবল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সহিংসতার সময় মাঠ পর্যায়ে থাকা নিম্নপদের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হামলা-মারধরের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেভাবে সহিংসতার শিকার হননি। এখন প্রশাসনিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন উচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা বা হুকুমদাতারা। আমরা চাই তাদের এমন সাজা দেওয়া হোক যাতে আর কোনও সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধ্বস্তনদের অন্যায় কাজের হুকুম দেওয়ার সাহস না পান।”

৫ আগস্টের সহিংসতায় ঢাকার যেসব থানা আক্রান্ত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদপুর থানা। হামলাকারীরা পুরো থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পুড়িয়ে দেয় সব গাড়ি। তবে সেই ক্ষত কাটিয়ে কাজে ফিরেছে মোহাম্মদপুর থানা।

থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার থানার সব সদস্যই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। আমাদের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষকে পুলিশি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এখনও পর্যন্ত সেবা প্রার্থীদের উপস্থিতি কম মনে হচ্ছে।

“তবে যানবাহন স্বল্পতাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা এখনও পুরোপুরি সেবা দিতে পারছি না। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা মানুষকে পুরোদমে সেবা দিতে পারব। তখন সেবা প্রার্থীদের উপস্থিতিও বাড়বে।”  

সবার আগে কাজে ফিরেছে ট্রাফিক বিভাগ

কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সবার আগে কাজে ফিরেছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়ার ছয় দিন পর গত ১২ আগস্ট সকালে ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামে পুলিশ। এরই মধ্যে ঢাকায় ট্রাফিক বিভাগের সব সদস্য কাজে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের গবেষক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, “সব সদস্য কাজে ফিরলেও এখনও আমরা পুরোদমে সেবা দেওয়া শুরু করতে পারিনি। আমাদের বেশিরভাগ ট্রাফিক বক্স ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ট্রাফিক সদস্যদের মাথা গোজার কোনও ঠাঁই নেই। এরপর আমাদের সদস্যরা অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশা করছি খুব দ্রুতই আমরা শতভাগ সেবা দিতে পারব।”

এ মুহূর্তে ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গবেষণার কাজ করছেন জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “উন্নয়ন ও ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের পরও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে এখনও হাতের ইশারায় ট্রাফিকিং করতে হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে সরকারের ১১-১২টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত থাকলেও সবাই ট্রাফিক বিভাগের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়।

“যদি ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবাই একসঙ্গে কাজ করলে নগরবাসী আরও ভালো সেবা পাবে।”

একই সঙ্গে যুগোপযোগী ট্রাফিক আইন ও বিধিমালা তৈরির ওপরও জোর দেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত