ভারতে অবস্থানরত সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হাসিনা সরকারের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সহিংসতায় নিহত ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. আমানতের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে গুলিতে নিহত হন আমানত।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন আমানত। ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাসের পর নারায়ণগঞ্জ কলেজে ভর্তি হন তিনি। বিএনপি সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদকের (এজিএস) দায়িত্ব পালন করেন আমানত।
চাষাড়ায় তার জানাজায় অংশগ্রহণ শেষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে ঢাকায় যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আমানত। তার লাশ এতদিন হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল।
“আমানতের স্বজনরা আজ (বৃহস্পতিবার) তাকে শনাক্ত করে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আসেন। আমানতের মতো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাদের এই ঋণ আমরা কোনোদিন ভুলব না।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। আজ ১৫ আগস্টকে ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু জনগণ তা রুখে দিয়েছে। এই পরাজিত শক্তি যদি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে দেশের জনগণ তা রুখে দেবে।”
ছাত্র-জনতা হত্যায় জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “হাসিনা সরকারের নির্দেশে যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গায় মানুষের কথা, ছাত্রদের কথা তুলে ধরব।”
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় বসে বাংলাদেশে নির্বাচন করার জন্য ভারতকে চাপ দিতে বলেছেন। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এদেশে নির্বাচন কবে কখন হবে, তা এদেশের মানুষই ঠিক করবে।”
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, “এখন শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার সময়। আমি তাদের অনুরোধ করছি, তারা যাতে রবিবার ক্লাসে ফিরে যান।
“একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তাদের কর্মস্থলে ফিরে আসার পথ করে দিতে হবে। ফিরে আসলে তাদের স্বাগত জানাতে হবে। এখন আমাদের দেশ গড়ার পালা।”
দেশের নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবিলায় চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ কাটিয়ে দ্রুত স্থিতিশীলতায় ফিরতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন সারজিস আলম।