Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিশ্বের প্রথম ফুসফুস ক্যান্সারের টিকার পরীক্ষা শুরু

গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে শুরু হয়েছে বিশ্বের প্রথম ফুসফুস ক্যান্সারের টিকার পরীক্ষা। ছবি: পিএ।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে শুরু হয়েছে বিশ্বের প্রথম ফুসফুস ক্যান্সারের টিকার পরীক্ষা। ছবি: পিএ।
[publishpress_authors_box]

রোগীদের মধ্যে বিশ্বের প্রথম ফুসফুস ক্যান্সারের এমআরএনএ টিকার পরীক্ষা শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাটির পরীক্ষা সফল হলে তা হবে এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এতে ক্যান্সার থেকে লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা যায় ফুসফুস ক্যান্সারে। ফুসফুস ক্যান্সার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে এবং টিউমার বেশি ছড়িয়ে পড়লে রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।

তবে বিশেষজ্ঞরা নতুন যে টিকাটির পরীক্ষা চালাচ্ছেন, এটি একেবারে শেষ পর্যায়ের রোগীকেও সুস্থ করতে পারবে। টিকাটি শরীরকে ক্যান্সার কোষগুলোকে খুঁজে বের করতে এবং মেরে ফেলতে নির্দেশ দেবে। এরপর তাদের আর ফিরে আসতে দেবে না।

বায়োএনটেকের তৈরি বিএনটি ১১৬ নামের টিকাটি নন-স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সার (এনএসসিএলসি) রোগের চিকিৎসার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ফুসফুস ক্যান্সারের এই ধরনটিতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।

মানুষের ওপর বিএনটি ১১৬ টিকার এই প্রথম ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ৭টি দেশের ৩৪টি গবেষণা কেন্দ্রে চালানো হবে। দেশগুলো হল— যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্পেন ও তুরস্ক।

যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে রয়েছে ৬টি গবেষণা কেন্দ্র। গত মঙ্গলবার প্রথম যুক্তরাজ্যের একজন রোগী তার প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাজ্য থেকে ২০ জন রোগীর ওপর এই পরীক্ষা চালানো হবে।

আর ৭ দেশ মিলিয়ে সর্বমোট প্রায় ১৩০ জন রোগীকে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হবে। সার্জারি বা রেডিওথেরাপির আগের প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শেষ পর্যায়ের রোগীদের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হবে। ইমিউনোথেরাপির পাশাপাশি তাদের এই টিকাটিও দেওয়া হবে।

টিকাটি কোভিড-১৯ টিকার মতোই মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) ব্যবহার করে কাজ করবে। টিকাটি ক্যান্সারের কোষগুলোকে শনাক্ত করে সেগুলোকে নির্মূলের জন্য শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে।

এটি কেমোথেরাপির মতো স্বাস্থ্যকর কোনও কোষের ক্ষতি করবে না। ভালো কোষগুলোকে স্পর্শ না করেই ক্যান্সার রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করাই এর মূল লক্ষ্য।

যুক্তরাজ্যে চলমান পরীক্ষার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হাসপাতাল এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের (ইউসিএলএইচ) পরামর্শক মেডিকেল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক সিও মিং লি।

তিনি বলেন, “আমরা এখন ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এমআরএনএ-ভিত্তিক ইমিউনোথেরাপি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের এক উত্তেজনাপূর্ণ নতুন যুগে প্রবেশ করছি।

“এটি ডেলিভারি করা সহজ। এর মাধ্যমে ক্যান্সার কোষে নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন নির্বাচন করে তাদের টার্গেট করা যায়। এই প্রযুক্তি ক্যান্সার চিকিৎসার পরবর্তী বড় পর্যায়।”

লন্ডনের ৬৭ বছর বয়সী জ্যানুসজ্ র‌্যাকজ্ যুক্তরাজ্যের প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রথম টিকাটি পেয়েছেন। গত মে মাসে প্রথম তার ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকেই তিনি কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি নেওয়া শুরু করেন।

তিনি নিজেও একজন বিজ্ঞানী, যিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশেষজ্ঞ। তার পেশা তাকে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমিও একজন বিজ্ঞানী। আমি জানি যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এই ধরনের পরীক্ষায় মানুষের অংশগ্রহণের ‍ওপর নির্ভর করে।”

র‌্যাকজ্ বলেন, “পরীক্ষাটি সফল হলে তাতে আমারই লাভ হবে। এটি একটি নতুন পদ্ধতি, যা এখনও সবার জন্য সহজলভ্য হয়নি। এটি আমাকে ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।

”এছাড়াও আমি সেই দলের একটি অংশ হতে পারি, যারা এই নতুন পদ্ধতির কার্যকারিতার প্রমাণ দেবে। যত দ্রুত এটি সারা বিশ্বে প্রয়োগ করা হবে তত বেশি মানুষকে বাঁচানো যাবে।”

মঙ্গলবার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চ ইউসিএলএইচ ক্লিনিকাল রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে ৩০ মিনিটের ব্যবধানে র‌্যাকজ পরপর ছয়টি ইনজেকশন নেন।

প্রতিটি জ্যাবে আলাদা আলাদা আরএনএ স্ট্র্যান্ড রয়েছে। প্রথমে টানা ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহে একবার এবং তারপর ৫৪ সপ্তাহ ধরে প্রতি তিন সপ্তাহে একবার করে তাকে টিকাটি দেওয়া হবে। এরপর টিকাটির ফলাফল পাওয়া যাবে।

অধ্যাপক সিও মিং লি বলেছেন, “আমরা আশা করছি, এই বাড়তি চিকিৎসা যোগ করলে ক্যান্সার ফিরে আসা বন্ধ হবে। ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীদের, এমনকি অস্ত্রোপচার এবং রেডিয়েশনের পরও রোগ ফিরে আসে।”

লি আরও বলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করছি। ১৯৯০-র দশকে যখন আমি কাজ শুরু করি তখন কেউ বিশ্বাস করেনি কেমোথেরাপি কাজ করে।”

“আমরা এখন জানি প্রায় ২০-৩০ শতাংশ রোগী ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে শেষ পর্যায়ের (স্টেজ-৪) ক্যান্সার থেকেও বেঁচে ফিরে আসে। আমরা তাদের বেঁচে থাকার হার আরও বাড়াতে চাই। ইমিউনোথেরাপির পাশাপাশি এই এমআরএনএ টিকা ক্যান্সার রোগীদের বাঁচার হার বাড়াবে।

“প্রথম ধাপের পরীক্ষা সফল হলে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালানো হবে। তারপরে আশা করি এটি বিশ্বব্যাপী গৃহীত চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠবে এবং ফুসফুস ক্যান্সারের লাখ লাখ রোগীকে বাঁচাবে।”

র‌্যাকজ্ আশা করেন তার চিকিৎসা শেষ হলে তিনি দৌড় প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে পারবেন এবং লন্ডন ম্যারাথন সম্পূর্ণ করে তার আজীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত