নোনা পানির কুমিরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরি। কুমিরকে প্রচলিত ধ্যান ধারণায় বিপজ্জনক মনে করা হয়। তা সত্ত্বেও এই এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের মধ্যে এই প্রাণীটিকে পোষা হিসেবে লালন পালনের রেওয়াজ গড়ে উঠেছে।
প্রাণী বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রাণী অধিকারকর্মীদের কাছে বিষয়টা উদ্বেগের কারণ হিসেবে হাজির হয়েছে। একদিকে কুমিরকে পোষ মানানো নিয়ে চালু হয়েছে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আর অন্যদিকে, এর নর্দান টেরিটরি সরকার কুমির পোষার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব এনেছেন।
কুমির পোষা নিয়ে বিতর্ক বেশ চাওড় হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরি অঞ্চলে। দুই পক্ষই তাদের যুক্তি নিয়ে সরগরম করছেন গণমাধ্যম। কুমির পোষার পক্ষের দল বলছেন, এটি নাকি এই অঞ্চলের ঐতিহ্যেরই অংশ। বহুদিন ধরেই এই সরিসৃপগুলো লালন-পালনের রেওয়াজ তারা গড়ে তুলেছেন।
অন্যদিকে পরিবেশবাদীরা যুক্তি দিয়ে বলছেন, কুমির হলো এমন এক প্রাণী বন্দিদশায় যাদের পর্যাপ্ত যত্ন সম্ভব নয়। এতে নাকি এই প্রাণীগুলোর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। আর তাই তারা কুমিরকে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলেই ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে।
নর্দান টেরিটরি সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নিরাপত্তার বিষয়টি। তাদের যুক্তি নিকট অতীতে মানুষ এবং কুমিরের আকস্মিক মুখোমুখি হওয়ার বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটনাগুলো উভয়ের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এর মধ্যে মারাত্মকভাবে আহত হবার ঘটনাও আছে। ফলে নর্দান টেরিটরি কর্তৃপক্ষ কুমিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, মুক্ত জঙ্গলে কুমিরদের যে স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা আছে তা কোনভাবেই পোষ মানিয়ে নিশ্চিত করা যাবেনা।
পোষা কুমির নিয়ে এই বিতর্ক এখন রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি এবং বিরোধী দল কান্ট্রি লিবারেল পার্টি এই ইস্যুতে নিয়েছে মুখোমুখি অবস্থান। কান্ট্রি লিবারেল পার্টি আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচিত হলে তারা কুমির পোষার ব্যাপারটি বিবেচনা করবে। আর অন্যদিকে লেবার পার্টির অবস্থান এর বিরুদ্ধে।
প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞাটি ওই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে অনেকে মনে করেন। কারণ পর্যটকদের অনেকেই পোষা কুমিরের সঙ্গ পেতে চান। পাশাপশি স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই কুমিরকে নিজের আপনজনের মতোই ভাবেন।
শেষ পর্যন্ত, অস্ট্রেলিয়ার এনটি-তে (নর্দান টেরিটরি) পোষা কুমির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সুদূরপ্রসারী হবে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এটি এমন একটি জটিল বিষয় যার কোন সহজ উত্তর নেই, বরং বিতর্কই চলবে আরও বেশ কিছুদিন।
বিবিসি অবলম্বনে