সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আরও ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলার জরুরি ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। এই ঋণ পেতে সংস্থাটির সঙ্গে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্লুমবার্গ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। এটি কাটিয়ে উঠতে ঋণের প্রয়োজন। বকেয়া ঋণ মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক থেকেও ডলার কেনা হচ্ছে।”
অনেক সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়ার শর্তে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি মোট ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয় আইএমএফ। তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যেই পেয়েছে বাংলাদেশ।
গভর্নর আহসান মনসুর জানান, অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার পেতে সংস্থাটির সঙ্গে কথা চলছে।
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন ডলার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছে আরও এক বিলিয়ন ডলার করে চাওয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটার পর একটা ধাক্কা লেগেই আছে। শুরু হয়েছিল সাড়ে চার বছর আগে ২০২০ সালের মার্চে কোভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাবের মধ্য দিয়ে। দুই বছরের সেই ধাক্কা কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও তছনছ হয়ে যায়; ওলোটপালট হয়ে যায় সব হিসাব-নিকাশ। যার মাশুল এখনও দিতে হচ্ছে।
এর মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে সহিংস ঘটনায় দেশে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। এরপর ক্ষমতার পালা বদলের পরও অস্থিরতা রয়ে গেছে।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট থেকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু আইন শৃংখলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। স্বস্তি ফিরছে না মানুষের মধ্যে।
এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যার কবলে পড়েছে দেশের ১২টি জেলা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। পানিবন্দি আছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবারের মানুষ। বন্যায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
এমন পরিস্থিতি সংকটে থাকা অর্থনীতিকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্যই আইএমএফের কাছ থেকে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছেন গভর্নর আহসান মনসুর।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সংকটের আগেই দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ চাপে ছিল। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত তা ছিল সাড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার। এ দিয়ে প্রায় তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব।
আইএমএফের সঙ্গে তিন দশক কাজ করা অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুরকে সম্প্রতি গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সরকার পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও দুই ডেপুটি গভর্নর পদত্যাগ করেন।
গত ১৩ আগস্ট আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিন দিনে আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে ২০ কোটি ডলারের বেশি কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে প্রতি মাসে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার কেনা।
২০২২ সালের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার। ছয় মাস পর ৩০ জানুয়ারি সংস্থাটি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়, ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে এ অর্থ।
আইএমএফ পর্ষদ ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করার দুদিন পর গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার পায় ডিসেম্বরে।
সবশেষ তৃতীয় কিস্তি ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার পায় গত ২৬ জুন।