শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে মেট্রোরেলের স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
রবিবার সকালে মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মেট্রোরেলে যারা ভাঙচুর করেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “এখানে যে সমস্যাটা হয়ে গেছে… যেহেতু এটা গণ-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল, এখন প্রাথমিকভাবে সব মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে।
“আপনারা সবাই জানেন, যারা দেশকে পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছে, তাদের পক্ষে এ ধরনের কাজ তো করা সম্ভব না। এটা দুষ্কৃতকারীদের কাজ। আপনাদের কাছে তাদের ভিডিও আছে, ফুটেজ আছে। আমরা এর জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বাড়াতে এটিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই বা কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন) হিসেবে ঘোষণা করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এটাকে (মেট্রোরেল) যেন ভাঙচুর না করা হয়, সেজন্য কেপিআই হিসেবে আপগ্রেড করার চেষ্টা করছি, যাতে এটার নিরাপত্তা বাড়ে।
“মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, যাতে করে কেউ এভাবে সার্ভিসটাকে ব্যাহত করতে না পারে।”
টানা ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার সকাল থেকে আবারও মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। তবে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত চললেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে হামলা-ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন দুটি বন্ধ রয়েছে।
পুনরায় মেট্রোরেল সেবা শুরু হওয়ার পর রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে ঢাকার আগারগাঁওয়ে মেট্রোরেল স্টেশনে যান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সেখান থেকে মেট্রোরেলে করে সচিবালয় স্টেশনে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
উপদেষ্টা জানান, তিনি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, তার প্রথম কাজ হবে মেট্রোরেল চালু করা। সেটাই তারা করেছেন। এখানে বোর্ড পুনর্গঠন করতে হয়েছে। বোর্ডের সভা ছিল, কিছু দাবি-দাওয়া ছিল, এগুলো তারা দেখেছেন।
গত ১৭ আগস্ট থেকে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, “মেট্রোরেলের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সেটা চালু করা সম্ভব হয়নি। আপনারা জানেন, এটা বড় অন্যায় কাজ করেছে। তিন লাখ যাত্রীকে জিম্মি করে কোনও দাবি আদায়ের চেষ্টা– এটা কোনও শুভ লক্ষণ না।”
হামলা-ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালুর বিষয়ে জাপানের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে বলেও এ সময় জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আজ বিকালে জাপানের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন কীভাবে চালু করা যায় সে ব্যাপারে আলাপ হবে। মেট্রোরেলের এমডিকে বলেছি ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে এটা নির্ধারণ করে টাইম লাইন দিতে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হলে নিরাপত্তা বিবেচনায় সেদিন বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরদিন পরদিন ১৯ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। তবে ওইদিন মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মেট্রোরেলের ফিরে আসা।
সেই থেকে টানা ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার সকাল থেকে পুনরায় মেট্রোরেল সেবা চালু হয়েছে।