চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।
রবিবার সকালে দেশের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক ছিল না। সেবাপ্রার্থীদের গিয়ে বিফল হয়ে ফিরতে হয়েছে।
হাসপাতাল কর্মকর্তারা বলেছেন, এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসকদের মারধর ও ভাংচুর করা হয়। তারপর কর্মবিরতি শুরু করে চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নিরাপত্তাহীনতার কারণে চিকিৎসকরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। গতকাল কিছু মানুষ হাসপাতালে ভীষণ ঝামেলা করেছেন, তার ফলেই আজকের এ অবস্থা।”
শুধু ঢাকা মেডিকেলই নয়, ঢাকা মেডিকেলেরে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সারাদেশে চিকিৎসক ধর্মঘটের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
যা নিয়ে সূত্রপাত
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউরোসার্জারি বিভাগের একজন চিকিৎসক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মাথায় জখম নিয়ে একজন রোগী আসেন। কর্তব্যরত নিউরোসার্জন রোগীর সঙ্গে আসা ব্যক্তিদের জানান যে অস্ত্রোপচার করতে হব, কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের তখন রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। সেই সঙ্গে অস্ত্রোপচারের জন্য বন্ড সই করতে বলেন।
নিউরোসার্জারি বিভাগের ওই চিকিৎসক বলেন, “কিন্তু রোগীর স্বজনরা বন্ডসই দিতে রাজি হয়নি এবং ব্লাড সংগ্রহ হয়নি জানালে অপারেশন স্থগিত করা হয়। রোগীকে ওয়ার্ডে শিফট করা হয়, সকাল ৮টার দিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
“এরপর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কিছু বাইরের মানুষ এসে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ওপর আক্রমণ করে। তারা অভিযোগ করে ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু হয়েছে।”
তিনি বলেন, নিউরো সার্জারির অস্ত্রোপচার কক্ষে ঢুকে একদল বহিরাগত অন্তত তিনজন চিকিৎসককে মারধর করে, তারা সেখান থেকে চিকিৎসকদের বের করে মারতে মারতে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে নিয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেলে মারা যাওয়া ওই রোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
এর আগে শনিবার ইউরোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন এক রোগী মারা গেলে তার স্বজনরাও ইন্টার্ন চিকিৎকদের মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে বহিরাগত দুটি পক্ষ মারামারিতে জড়ায় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এই সব ঘটনা ধরে নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছে।
চিকিৎসকদের কী দাবি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, শনিবারের হামলার ঘটনার পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা প্রথমে কর্মবিরতির ডাক দেয়। এরপর অন্য চিকিৎসকরাও এতে যোগ দিয়েছে।
যার ফলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ইনডোর, আউটডোরসহ সব জায়গায় চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিউরোসার্জারির রেসিডেন্ট চিকিৎসককে সন্ত্রাসী কায়দায় মারধর, রামদা, চাপাতি নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে আক্রমণ, জরুরি বিভাগ ভাংচুরের প্রতিবাদে এই কর্মবিরতি।
চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
ঢাকা মেডিকেলের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সহসভাপতি সোহেল রানা রনি বলেন, শনিবার রাতেই তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। রবিবার সকাল থেকেই হাসপাতালের অন্য বিভাগের চিকিৎসকরাও এতে যোগ দেন।
তিনি বলেন, “যে হাসপাতালে নিরাপত্তা নেই, চিকিৎসকদের বাইরে থেকে এসে আক্রমণ করে যায়, সেখানে সিসি ক্যামরার ভিডিও দেখে খুব সহজেই তাদের শনাক্ত করা সম্ভব। এদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজই নয়, প্রায় সব হাসপাতালের সব চিকিৎসকরাই তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তাদের ব্যক্তিগত চেম্বার, অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের পক্ষে থেকে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (নিউরো সার্জারি) আব্দুল আহাদ রবিবার দুপুরে বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলবে।
তিনি বলেন, দোষিদের শাস্তি দাবিতে তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন এবং কাজেও ফিরেছিলেন। কিন্তু প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে পারেনি।
“সেই কারণে আমরা সারাদেশে কর্মবিরতির ঘোষণা করছি,” বলেন তিনি।