রোগীদের কথা বিবেচনা করে কর্মবিরতির মধ্যেও তিন ঘণ্টা সরকারি হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিকিৎসকরা।
সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আবদুল আহাদ।
হাসপাতালে হামলা ও চিকিৎসকদের মারধরের প্রতিবাদে রবিবার তিনিই সারাদেশে চিকিৎসক ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানালেও বহির্বিভাগে সেবা বন্ধই রেখেছিল চিকিৎসকরা।
ধর্মঘটী চিকিৎসকরা সোমবার সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করে। এরপর বিকাল ৪টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তারা।
চিকিৎসকদের আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. আহাদ বলেন, তাদের যে চারটি দাবি ছিল, তার মধ্যে একটি পূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে হামলার ঘটনায় একজন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এজন্য কর্মসূচি শিথিল করেছেন তারা।
“আমরা গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মেডিকেলসহ সারাদেশের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া শুরু করেছি। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সীমিত পরিসরে আউটডোর সেবা চালু রাখব। আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আউটডোর খোলা রাখব। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে।”
জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অন্যান্য চিকিৎসা সেবাও যথারীতি দেওয়া হবে বলে জানান ডা. আহাদ।
শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে দুর্ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর নিউরো সার্জারি বিভাগে ভাংচুর এবং চিকিৎসকদের মারধর করে একদল ব্যক্তি। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একই রকম ঘটনা ঘটে।
এর প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে কর্মবিরতি শুরু করে চিকিৎসকরা। চার দফা দাবি তুলে ধরে সারাদেশেও চিকিৎসক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় দুপুরে।
তাদের দাবিগুলো ছিল- অপরাধীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ঢাকা মেডিকলসহ সারাদেশের হাসপাতালে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনী নিযুক্ত করতে হবে, তারা ২৪ ঘণ্টা অস্ত্রসহ থাকবে; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
এরপর বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপরই চিকিৎসকরা কর্মসূচি শিথিল করে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চিকিৎসকদের কর্মসূচি নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে।
কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় ডা. আহাদ বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা হাসপাতালগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।
“তাই আমরা আশঙ্কা করছি, অন্যান্য মেডিকেল কলেজ এবং অন্যান্য জেলা, উপজেলা হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে এ ধরনের আক্রমণ আবারও হতে পারে। যারা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি, তাদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন এবং চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগের বিধিমালা করার দাবিও জানান তিনি।