ঢাকার একটি স্থানে প্রকাশ্যে যৌনকর্মীদের পেটানো ও সেই দৃশ্যযুক্ত ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় এক যৌনকর্মীর সন্তান আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে খবর এসেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সন্তানের আত্মহত্যার চেষ্টার কথা জানানো হয়। সেই সন্তান এ মুহূর্তে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বলেও জানান যৌনকর্মীদের প্রতিনিধি শ্রাবন্তী।
নেটওয়ার্কের সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলির পক্ষে তিনিই লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এক তরুণ শ্যামলীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের উপর নির্বিচারে লাঠিপেটা করে। শুধু তাই নয়, সেই তরুণ যৌনকর্মীদের সঙ্গে থাকা টাকা এবং মোবাইল ফোনও নিয়ে যায়। আর এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার কারণে একজন যৌনকর্মীর সন্তান ট্রমাটাইজড হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ওই মা ও তার সন্তানের মধ্যে তৈরি হয়েছে টানাপোড়েন।”
কেবল শ্যামলী নয়, সম্প্রতি ঢাকার যাত্রাবাড়ী, হাইকোর্ট এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, মিরপুর মাজার রোড, ফার্মগেইট, আসাদগেইট, উত্তরা, কুড়িল ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই যৌনকর্মীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
শ্রাবন্তী বলেন, “দেশের প্রচলিত আইনে কোথাও যৌনপেশাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। ১৯৯৯ সালে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, যৌনকর্মীরা স্বেচ্ছায় যৌনমিলনে সম্মতি দিলে এবং সমাজ স্বীকৃত পেশা না হলেও আইনে কোথাও যৌনপেশাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।”
এ অবস্থায় নির্যাতন বন্ধে সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন যৌনকর্মীরা। সেইসঙ্গে তাদের উপর হওয়া নির্যাতন বন্ধে সরকারি হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে শ্রাবন্তী বলেন, “সমাজ তার প্রয়োজনে এই পেশার সৃষ্টি করেছে। স্থান ও কালের ব্যবধানে ব্যবসার নিয়ম-নীতি পাল্টেছে, ব্যবসার পরিচালনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এলেও এর সঙ্গে যারা জড়িয়ে রয়েছেন তারা এখনও অবহেলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। তাদের নিরাপদ আশ্রয় না থাকার সঙ্গে সঙ্গে তারা আইনগতভাবেও নির্যাতনের শিকার। আর সেটা প্রতি পদে পদে।”
যৌনকর্মীদের প্রতি সমাজ ও পরিবার মুখ ফিরিয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারও নির্যাতিতকে অবহেলা করে, নির্যাতনকারীর পক্ষ নেয়। সরকার পুনর্বাসনের নামে উচ্ছেদ করে।”
এই নির্যাতন বন্ধে যৌনকর্মীরা যে ১০ দফা দাবি দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে, নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া, যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা, পতিতাপল্লী উচ্ছেদ বন্ধ করা, তাদের উপর আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ, মূলধারার পরিবেশে যৌনকর্মীদের সন্তানদের বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া, কবরস্থানে পার্থক্য না করা, নিশ্চিত জীবনের নিশ্চয়তা, মানুষ হিসেবে তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে শোষণ বন্ধ এবং সব ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন।