ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার গভীররাতের এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতালের সব বিভাগে সেবা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকসহ সব কর্মী।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন জেলা শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল আজিজ। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে তিনি মারা যান।
আজিজের মৃত্যুর জন্য ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলেন স্বজনরা। তারা বলেন, ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরপরই মৃত্যু হয় তার। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ স্বজনরা কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কাজিকে ব্যাপক মারধর করেন। ভাঙচুর চালান নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), সিসিইউ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে।
চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন শুরু করেন চিকিৎসক, নার্সসহ সব কর্মী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ওয়ার্ড মাস্টার নুরুল হুদা বলেন, “যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে কেউই কাজে ফিরবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
“কথায় কথায় চিকিৎসক, নার্স আর কর্মচারীদের ওপর হামলা হচ্ছে। এতে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; তারপর সেবা দেওয়া হবে।”
কাজ করেও তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন হাসপাতালের ওয়ার্ডকর্মীদের নেতা শোভন দাশ।
তিনি বলেন, “তিন মাস কোনও বেতন পাইনি। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করেছি। এখন আমাদের উপর হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে কীভাবে কাজ করব?”
হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদুল মোস্তফা জানান, জটিল ও সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পরও কয়েকজন যুবক ডা. সজীব কাজিকে ব্যাপক মারধর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডা. সজীব কাজিকে মারধরের পাশাপাশি আইসিইউ, সিসিইউ ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভাঙচুর চালিয়ে নানা ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চার যুবকক ডা. সজীব কাজি মারধর করছে। এরই এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া চার জনের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। আসিফ ও মেহেদী নামের এই দুজনের কেউই রোগীর স্বজন নন।
সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (প্রশাসন) ডা. জি আর এম জিহাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং চিকিৎসক ও নার্সরা আলোচনায় বসেছেন।”