মন্দির ও পূজা মণ্ডপে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পাহারা দিয়ে নয়, বরং রাষ্ট্রের তরফ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করেছে ‘বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই মঞ্চের সদস্যরা বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবি, পূজায় রাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। তা করতে না পারলে প্রয়োজনে মন্দির বন্ধ করে দেবেন কিংবা পূজা উদযাপন করবেন না।
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন, মঠ-মন্দির, ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জায়গা-জমি দখলসহ সকল অত্যাচারের প্রতিবাদে অংশ নিয়ে একথা বলেন বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্যরা। বিক্ষোভে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিও জানান তারা।
‘বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের’ ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের ২০ জেলায় একযোগে পালিত হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা।
বিক্ষোভে বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক রনি রাজবংশী বলেন, “মন্দির এবং পূজা মণ্ডপের সামনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকুক এটা চাই না। আমরা চাই রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিক। যদি না দিতে পারে তাহলে আমাদের বলুক।
“আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে প্রয়োজনে মন্দির বন্ধ করে দেব কিংবা পূজা উদযাপন করব না। এরপরও আমরা চাই না অন্য ধর্মের কেউ এসে আমাদের মন্দির পাহারা দিক। এটা তাদের ধর্মবিরোধী, আমাদেরও ধর্মবিরোধী।”
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ৫-২০ আগস্ট পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের ১,০৬৮টি স্থাপনায় হামলা হয়েছে- এতথ্য জানিয়ে রনি রাজবংশী বলেন, “এই সংখ্যা বাংলাদেশের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। স্বাধীন দেশে এত হামলা মেনে নেওয়া যায় না। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে এই দেশ শুধু একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাগুরু ধর্মের মানুষের জন্য বানানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে।
এই চক্রান্ত দেশের ২ কোটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বাস্তবায়ন হতে দেবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এসব নির্যাতন বন্ধ না হলে হিন্দুদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানাতে বাধ্য হবো আমরা।”
এই দেশের কোনও রাজনৈতিক দল হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ায়নি উল্লেখ করে মঞ্চের আরেক সমন্বয়ক প্রদীপ কান্তি দাস বলেন, “তারা সবাই আমাদেরকে শুধু দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে।”
এর আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দ্রুত বিচারবিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিপূরণসহ সার্বিক নিরাপত্তার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। প্রদীপ কান্তি দাস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এই ৮ দফাকে যৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেন। সরকার হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘু জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশ্বস্ত করলেও বাস্তবে তা প্রতীয়মান নয়। বরং একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করছে।
“আমরা সুস্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, আপনারা যদি ২ কোটি হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দিতে না পারেন তবে বলে দিন। আমরা জাতিসংঘের কাছে নিরাপত্তা চাইবো।”
বিক্ষোভ সমাবেশে ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন, ৫-২০ আগষ্ট সকল হামলার সুষ্ঠু বিচারের বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রামসহ সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিচার ও আসন্ন দুর্গাপূজায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানানো হয়। তা না হলে আগামীতে বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ সব সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।