প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ব্যবহারের জন্য প্রথম এমপক্স টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আফ্রিকা ও তার বাইরে এম পক্স রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বাভারিয়ান নর্ডিক এ/এস টিকাটির প্রাক-যোগ্যতা নিরূপণ করেছে। তার মানে গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এবং ইউনিসেফের মতো দাতারা এটি কিনতে পারে।
তবে সরবরাহ সীমিত কারণ শুধু একটি কোম্পানি এটি উৎপাদন করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, “এমপক্সের বিরুদ্ধে টিকাটির এই প্রথম প্রাক-যোগ্যতা নিরূপণ আফ্রিকার বর্তমান প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে এবং ভবিষ্যতে এই রোগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি টিকাটি যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেখানে সংগ্রহ, অনুদান এবং সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।
ডব্লিউএইচওর অনুমোদনের অধীনে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষদের দুই ডোজ করে টিকাটি দেওয়া যেতে পারে।
অনুমোদন বলে যে, টিকাটি বর্তমানে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয় তবে মহামারী পরিস্থিতিতে, যেখানে টিকা দেওয়ার সুবিধাগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকির চেয়ে বেশি, এটি শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আফ্রিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কর্মকর্তারা গত মাসে বলেছিলেন, কঙ্গোতে প্রায় ৭০ শতাংশ এমপক্স রোগীর বয়স ১৫ বছরের কম। সেখানে এম পক্সে মারা যাওয়াদেরও মধ্য ৮৫ শতাংশ রোগীর বয়সও ১৫ বছরের নিচে। কঙ্গো এমপক্সে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।
বৃহস্পতিবার আফ্রিকান সিডিসি বলেছে, গত সপ্তাহে নতুন করে এমপক্সে ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৬০ জন।
এমপক্স গুটিবসন্তের মতো ভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত। প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়।
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা।
আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
অত্যন্ত চুলকানো বা ব্যথাদায়ক এই ফুসকুড়িগুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্ক্যাব বা গোল গোল পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে শেষে পড়ে যায়। এর ফলে দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক।
এর আক্রমণের কারণে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখ, চোখ, হাত, বুক এবং যৌনাঙ্গসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে।
এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
ভাইরাসে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।
বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।
পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক রোগ এমপক্সের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে।
রোগটি এখন মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা রোগটির একটি নতুন রূপের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং এর উচ্চ মৃত্যুর হার নিয়ে উদ্বিগ্ন।
চলতি বছরের শুরু থেকে ডিআর কঙ্গোতে ১৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জন মারা গেছে।
সেখান থেকে রোগটি বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া ও রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। আফ্রিকার বাইরে ইউরোপ ও এশিয়ার সুইডেন ও থাইল্যান্ডেও রোগটি ধরা পড়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের জুলাইয়ে এমপক্সের হালকা ধরন ক্ল্যাড-২ ইউরোপ ও এশিয়াসহ প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সেবারই প্রথম ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সে সময় ৮৭ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ১৪০ জনের।
সে সময় রোগটি প্রধানত সমকামী পুরুষদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত ছিল। সেবার ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, এপি