Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

যৌন হেনস্তার ‘বয়েজ ক্লাব’ যেন  মালয়ালম সিনেপাড়া: হেমা কমিটি

malayalam-metoo-150924-01
[publishpress_authors_box]

গত অগাস্ট মাসে দক্ষিণ সিনেপাড়ায় যৌন নিপীড়ন, ‘কাস্টিং কাউচ’ কিংবা ‘যৌনতার বিনিময়ে কাজ’  এবং লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে একাট্টা করা তথ্যের ভিত্তিতে ২৩৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন  সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয় জাস্টিস হেমা কমিটি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে ১৭টি ঘটনা নথিবদ্ধ রয়েছে হেমা কমিটির কাছে। আর প্রতিবেদন তৈরিতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর।

আঙ্গুল উঠেছে চলচ্চিত্রশিল্পীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়ালম মুভি অ্যাকটরস এবং এর প্রধান মালয়ালম সিনেমার বড় তারকা মোহনলালের দিকেও।  

গত ১৯ অগাস্ট হেমা কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে আসে। এরপর ২৭ অগাস্ট বিলুপ্ত হয়ে যায় এই সংগঠন। মোহনলাল এবং সিদ্দিক ও ইডাভেলা বাবু সহ ১৭ জন সদস্য এক যোগে পদত্যাগ করেন।  

সিদ্দিকের নামে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আছে। ইডাভেলা বাবুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মিনু মুনির।

তিনি এনডিটিভিকে জানান, সংগঠনে সদস্যপদ পেতে সাহায্য করার কথা বলে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে এই নারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ইডাভেলা বাবু।

সিনেমার শ্যুটিং সময়েও বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল মিনু মুনিরের।

তিনি বলেন, “আমি টয়লেটে গিয়েছিলাম। বেরিয়ে আসার পর আমার সম্মতি ছাড়াই জয়সুরিয়া আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে এবং চুমু খান। আমি বিব্রত হয়ে পড়ি এবং সেখান থেকে পালিয়ে যাই।”

নায়িকা সোনিয়া মালহার ২০১৩ সালে অভিনয়ের সেটে যৌন হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। আরও অভিযোগের সঙ্গে তার সঙ্গে হওয়া ঘটনারও তদন্তে নামছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম।  

অন্যদিকে কেরালা স্টেট চলচ্চিত্র একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান এবং নির্মাতা রণজিতের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। ২০০৯ সালে এক মালয়লম সিনেমায় কাজের সময় নারী হিসেবে বাজে আচরণের শিকার হন তিনি।

শ্রীলেখার অভিযোগের পর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন রনজিত। ভারতের পেনাল কোডের ৩৫৪ সেকশন অনুসারে রনজিতের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য মামলা করেছে পুলিশ।

অনেককে হতবাক করে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন মালয়লম ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেতা নিভিন পউলি।

সিনেমায় সুযোগ দেওয়ার কথা বলে গত বছর দুবাইয়ের একটি হোটেলে এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছেন তিনি; এমন অভিযোগে ৪০ বছর বয়সী ওই মহিলা এফআইআর করেছেন।

নিভিন পউলি অবশ্য ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, এই ঘটনা ‘একেবারেই অসত্য’।  

কী বলছে হেমা কমিটির প্রতিবেদন?

২০১৭ সালে মালয়ালম প্রযোজক ও অভিনেতা মেগাস্টার দিলীপের বিরুদ্ধে গাড়ির মধ্যে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন এক অভিনেত্রী। এরপর দিলীপ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলেও আবার জামিনে বের হয়ে আসেন। তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগও ওঠে। সেসময় হেনস্তার শিকার অভিনেত্রীর পক্ষ নেয় সিনেপাড়ার সহকর্মীরা। যা কেরালা সরকারকে চাপে ফেলে। ওই পরিস্থিতিতে কেরালার সিনেমা জগতে  যৌন হেনস্তার শিকার নারীদের ন্যায়বিচার দিতেই গঠন হয় হেমা কমিটি।

এই কমিটি করার পর কেরালা রাজ্যে মলিউডের অভিনেতা-পরিচালকদের বিরুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে যৌন হেনস্তা করার ঝুরি ঝুরি অভিযোগ।

“এই সিনেমা জগত পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত এবং পুরদস্তুর বয়েজ ক্লাব হয়ে উঠেছে”; এমন কথা রয়েছে হেমা কমিটির প্রতিবেদনে।

“এই সিনেপাড়ায় পুরুষ রাখঢাক না করেই ভয়ডরহীন ভাবে যৌন সম্পর্ক করতে চায়, যেন এটা তাদের জন্মগত অধিকার।”

‘পিতৃতান্ত্রিক’ মানসিকতা ছেয়ে আছে এই কর্মক্ষেত্রে। নারীদের জন্য টয়লেট, পোশাক পাল্টানোর ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে বলেও জানাচ্ছে হেমা কমিটি। এর সঙ্গে রয়েছে পারিশ্রমিক বৈষম্যও।    

ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের নাম গোপন রেখে এক ঘটনার বর্ণনায় হেমা কমিটির প্রতিবেদন বলছে,  “সামনের সারির একজন অভিনেতা এবং এসব পুরুষ মাফিয়ারা একজন নারীর ক্যারিয়ার বানাতে পারে আর নষ্ট করে দিতে পারে।”  

আগে যৌন হেনস্তা করেছেন এমন পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বারবার একই দৃশ্যের মহড়া করতে হয়েছে অভিনেত্রীকে এমন মানসিক চাপে ফেলার মতো অভিজ্ঞতার কথাও জানা গেছে।  

মালয়লম ইন্ডাস্ট্রিতে যৌন হেনস্তার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে মহিলা কংগ্রেস। ছবি: পিটিআই

হেমা কমিটি পুরুষের প্রতিবন্ধকতার দিকটিও আমলে রেখেছে। তাতে দেখা গেছে, অনেক পুরুষ অভিনেতা ক্ষমতাসীন কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে সিনেপাড়ায় নিষিদ্ধ হয়েছেন। এতে করে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে দক্ষিণী সিনেমা জগতে; ফলে পুরুষ শিল্পীরা অনেক বিরূপ ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চান না।  

হেমা কমিটির পুরো প্রতিবেদন জমা দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে কেরালা হাই কোর্ট।

এই প্রতিবেদনের পর বাকি আঞ্চলিক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও তদন্ত পরিচালনা করার দাবিও উঠেছে এরমধ্যে।  

মোহনলাল এবং আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা মামুট্টিও অবশ্য এসব বিষয়ে মুখ খুলেছেন। দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে মোহনলাল বলছেন, “দয়া করে মালয়লম সিনেমা শিল্পকে ধ্বংস করে দেবেন না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত