সকালে এক কাপ কফি শুধু ঘুমের ঘোর থেকে বার করে চাঙ্গাই রাখে না, স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেও দূরে রাখবে আপনাকে।
মঙ্গলবার এন্ডোক্রাইন সোসাইটির জার্নাল অব ক্লিনিকাল এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজমে প্রকাশিত এক গবেষণার বরাতে এই কথা বলছে সিএনএনের প্রতিবেদন।
তবে শর্ত হচ্ছে পরিমাণ মতো বা পরিমিত কফি খেতে হবে। কী সেই পরিমাণ?
চীনের সোচোউ ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলোজি এবং বায়োস্ট্যাটিসটিকসের সহকারী অধ্যাপক চাওফু কে বলছেন, দিনে তিন কাপ কফি বা চা চলতেই পারে।
এই গবেষণার প্রধান চাওফু কে জানাচ্ছেন, পরিমিত কফি খাওয়ার অভ্যাসের কারণে কার্ডিও মেটাবলিক মালটি-মরবিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে আসে।
কার্ডিও মেটাবলিক মালটি-মরবিডিটি বা সিএম মানে হচ্ছে একই ব্যক্তির শরীরে একের বেশি কার্ডিওমেটাবলিক ডিজঅর্ডার বাসা বেঁধেছে। অর্থ্যাৎ হৃদরোগ, স্ট্রোক, হওয়ার ঝুঁকি, পালমোনারি আর্টিরিয়াল হাইপারটেনশন, টাইপ টু ডায়াবেটিকসের মতো কোনো মেটাবলিক রোগ রয়েছে শরীরে।
‘কফি এবং ক্যাফেইন সিএম প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা রাখে’ বলে জানাচ্ছেন চাওফু কে।
ইউকে বায়োব্যাংক গবেষণার কাজে বড় সহায়ক একটি বায়োমেডিকেল ডেটাবেজ। এখান থেকে এক লাখ ৮০ হাজার মানুষের তথ্য নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের কফি ও গ্রিনটি খাওয়ার অভ্যাস এবং কারও কার্ডিওমেটাবলিক রোগ আছে কি না সেসব তথ্য আমলে নেওয়া হয় হাসপাতালের রেকর্ড ও মৃত্যু সনদ বিশ্লেষণ করে।
দেখা গেছে, কফিতে মোটামুটি অভ্যস্তদেরও কার্ডিও মেটাবলিক মালটি-মরবিডিটি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
গবেষণা বলছে, যদি প্রতিদিন তিন কাপ কফি খাওয়া যায় তবে এই ঝুঁকি কমে আসবে ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ।
যারা কফি একেবারেই খান না অথবা এক কাপেরও কম খান তাদের চেয়ে যারা অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পান করেন তাদের এমন রোগের ঝুঁকি কমে আসে ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ।
“এই গবেষণায় বিশাল আকারের উপাত্ত নিয়ে কাজ করা হয়েছে। ফলে ক্যাফেইন কীভাবে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।”
গবেষণার একজন না হয়েও এই গবেষণার ইতিবাচক দিক নিয়ে এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন সান ফ্রান্সিসকো শহরের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মেডিসিন বিভাগের গবেষক ও অধ্যাপক গ্রিগরি মারকাস।
ইমেইল বার্তায় সিএনএনকে তিনি বলেন, “গবেষণার এই দিক থেকে বোঝা যাচ্ছে ক্যাফেইন থাকা চা বা কফি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।”
এরপরও মারকাসের কথা হচ্ছে, কী কারণে ক্যাফেইন হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা এখনও স্পষ্ট নয়।
“হৃদযন্ত্রের উপর ক্যাফেইনের এই ইতিবাচক দিক নিয়ে আমাদের আরও জানা জরুরি।”
কারণ গবেষণায় শুধু ক্যাফেইনের উপর আলো ফেলা হচ্ছে। অথচ অন্য কোনো উপাাদানও এই হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী হতে পারে।
মারকাস বলেন, “এমন হতেই পারে, গবেষণার অংশ হওয়া কফিতে অভ্যস্তদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং শরীরচর্চার অভ্যাস ছিল।”
চাওফু কে এই গবেষণার সীমাবদ্ধতা জানিয়ে বলেন, এতে কার্বোনেটেড পানীয় বা কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসে থাকা ক্যাফেইন বিশ্লেষণ করে দেখা হয়নি।
তাহলে কি রোজ নিয়ম করে কফি খেতে হবে এখন থেকে?
গবেষণায় কফির যতই গুণগান গাওয়া হোক না কেন, যাদের চা-কফির অভ্যাস আছে তাদের এখনই কাপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া জরুরি নয়।
মারকাস বললেন, “এটাও বলে রাখা দরকার, অতিরিক্ত কিন্তু ভালো ফল বয়ে আনবে না।
“… এমন প্রমাণও আছে যে অতিরিক্ত ক্যাফেইন, বিশেষ করে এনার্জি ড্রিংকসে মেশানো হলে তা হৃদযন্ত্রের ছন্দে ক্ষতি ডেকে এনেছে।”