Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সিলেটের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদ প্রত্যাশা

[publishpress_authors_box]

যে প্রজন্মকে ‘হেইট পলিটিক্স’ বলতে শুনা যেত, সেই প্রজন্মই এখন রাজনৈতিক আলাপ জারি রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। শুধু রাজনৈতিক ভাবনাই নয় রাজনীতিকে শুদ্ধ করে রাষ্ট্র সংস্কারের দূরদর্শী চিন্তাও সঞ্চারিত করছে পথচারীদের মধ্যে। নতুন ভাবনা, নতুন প্রত্যয়ের জানান দিতে তারা বেছে নিয়েছে গ্রাফিতিকে। 

সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় একটি পরিত্যক্ত দেওয়াল। যেখানে ময়লা আর্বজনার স্তূপ থাকত। সেই দেয়ালকে পরিস্কার করে রংতুলির আলোয় নান্দনিক রূপ দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনব’ এমন আত্মপ্রত্যয়ী স্লোগানও শৈল্পিক রূপ পেয়েছে অনুভূতির দেয়ালে।

শুধু নগরের রিকাবীবাজার নয়, শ্রীহট্ট সংস্কৃতি কলেজ, ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ, মুরারিচাঁদ কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীরগুলো অংকিত হয়েছে প্রতিবাদী গ্রাফিতি আর মুক্ত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বার্তা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা আন্দোলন ঘোষণার পর সিলেটের চৌহাট্টা এলাকা ছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন চৌহাট্টা পয়েন্টকে শিক্ষার্থীরা ‘বিজয় চত্বর’ ঘোষণা দিয়ে নান্দনিক ভাবনা ফুটিয়ে তুলেছে গ্রাফিতিতে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলন চলাকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে সিলেটে গ্রাফিতি লেখা শুরু হয় ২৮ জুলাই। ওইদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) মূল ফটকের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দেয়াল লিখন এবং গ্রাফিতিতে স্থান পায় নিজ বাসার ছাদে থাকা অবস্থায় গুলিতে নিহত ছোট্ট রিয়ার কথাও। অনেকগুলো বেলুন হাতে রিয়ার গ্রাফিতির পাশে লেখা- ‘দেশ স্বাধীন হলে আমরা আবার ছাদে উঠবো।’—এসব গ্রাফিতি যেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ আর ক্ষতের প্রতিচ্ছবি। গ্রাফিতি ছাড়াও তারা দেয়াল লিখন লিখেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনের দেয়ালে আবু সাইদের মায়ের সেই আর্তনাদ— ‘হামার বেটাক মারলু ক্যা?’ লেখার পাশেই শিক্ষার্থীদের দাবি ‘বিচার চাই, বিচার চাই’ লেখা। 

নগরের পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতির কোনায় ছোট করে লেখা রয়েছে কয়েকটি নাম। বুঝতে কষ্ট হয় না এরাই এসব শিল্প কর্মের আঁকিয়ে। ছোট্ট করে লেখা সারা, রাইদা, তাসনিয়া, নবনিতা, মিথি, তাহলিল, ফাতিহা, সুমেরা, জয়, আরিশা। এরাই প্রতিবাদী শৈল্পিক প্রজন্মের কয়েকজন প্রতিনিধি। এসব প্রতিনিধিরা যে প্রত্যাশার আর প্রাপ্তির অনুভবটুকু ফুটিয়ে তুলেছেন রং তুলির পরশে তা যেন বাস্তব রূপ পায় বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশে। এমন চাওয়াই গ্রাফিতি আঁকা জেন জে প্রজন্মের। শৈল্পিক প্রতিবাদে তারা দিয়েছেন শৈল্পিক দেশ নির্মাণের বারতা।

গ্রাফিতি আঁকা শিক্ষার্থী আহনাফ বলেন, “আমরা অন্যায় নিয়ে কথা বলতে গেলেই এক শ্রেণির মানুষ বলতো বিকল্প দেখান। তাদের জবাব দেওয়ার জন্যই সেই স্লোগানটা দেশালে লেখা হয়েছে। কোনো পূর্ব চিন্তা বা কারো কথায় নয় আমরা আমাদের মতো করে আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন ভাবনা লিখে রেখেছি। আমাদের প্রতিটি দেয়াল লিখন এবং গ্রাফিতি আমাদের প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি।”

৫ আগস্টে সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আনন্দ উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়ে গ্রাফিতির মাধ্যমে নগরজুড়ে। অনেকে স্ব উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করেন দেয়াল লিখনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। নগরের মীরের ময়দান থেকে রিকাবীবাজার মুক্তিযোদ্ধা ডা. চঞ্চল রোডের দুপাশের নানা স্থাপনার দেয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে প্রতিবাদ আর উচ্ছ্বাসের গ্রাফিতিগুলো। পথচারীরা চলার পথে গ্রাফিতিগুলো দেখছেন, কেউ কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন, কেউ কেউ ছবি তুলে রাখছেন। এভাবে দেড় মাস পরেও গ্রাফিতিগুলো যেন অনুভূতি সঞ্চারিত করছে জনমনে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত